জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

সারাদিন গান, আড্ডা সহ বর্ণাঢ্য আয়োজনে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান আজ ২৫ নভেম্বর ২০২২ শুক্রবার ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে টিএসসি চত্বর নবীন-প্রবীণের মিলনমেলায় পরিণত হয়। দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিল আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যাফেল ড্র প্রভৃতি।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত থেকে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। বিভাগের চেয়ারম্যান ও শতবর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী-এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির, পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, দর্শন বিভাগ শতবর্ষ উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আ খ ম ইউনুস প্রমুখ বক্তব্য দেন।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনসহ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসামান্য অবদান তুলে ধরে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের গর্ব ও অহংকারের প্রতীক। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল সমাজের সর্বত্র নৈতিকতা চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন সমাজ গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা:
উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম সদর থেকে এসেছিলেন দর্শন বিভাগের ৮৯ ব্যাচের ছাত্র ও সাবেক ছাত্রনেতা লুতফুর রহমান, ছুটির দিনে চাকরির ব্যস্ততার ফাঁকে এসেছিলেন কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক ডিসি এবং বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব সেলিনা পারভীন, কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলা থেকে এসেছিলেন আব্দুল মজিদ, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলা থেকে এসেছিলেন মিনহাজ ত্বকি , যশোর জেলা থেকে এসেছিলেন জবা ইয়াসমিন। এভাবেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দর্শন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় দর্শন বিভাগের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। সাবেক ছাত্রদের কে মাতিয়ে রাখতে বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীদেরও ছিল নানা আয়োজন। সারাদিন গান ,আড্ডা ,খুনসুটি করতে করতে কেটে যায় বেলা। অনেকেই শৈশবের দিনগুলিতে ফিরে যান।

দর্শন বিভাগের সাবেক ছাত্রী,
কুড়িগ্রাম জেলার সাবেক ডিসি এবং বর্তমান পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব সেলিনা পারভীন জানান, ” আমাদের জীবদ্দশায় এই দর্শন বিভাগের শতবর্ষের আয়োজন পেলাম ,যা ভাগ্যগুণে পেয়েছি। আবার শতবর্ষ ফিরে আসতে আমরা আজকের কেউই হয়তো থাকবোনা। এই দর্শন পরিবার সত্যিই আলোকজ্জল পরিবার। শতবর্ষের শত কর্ম-কীর্তিতে, শত ইতিহাস-ঐতিহ্য সৃষ্টিতে অবদান রেখেছে ঢাবিয়ান দার্শনিকরা। অনিঃশেষ শুভাশিস দর্শন পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি”।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক ছাত্র মিনহাজ ত্বকি জানান, ” দর্শন বিভাগের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে এমন আয়োজনের অংশীদার হওয়া আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শতবর্ষী বিভাগের সংখ্যা খুব বেশি নয়। আমাদের বিভাগ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ সকল বিষয়ে ভুমিকা রেখেছে দর্শন বিভাগ। প্রযুক্তির অগ্রসরতার যুগে বর্তমানে নৈতিকতার অবক্ষয়ের দারপ্রান্তে গোটা বিশ্ব।এসময়ে দর্শন চর্চা ও এর প্রয়োগের বিষয়টি আরো বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে”।