জালাল আহমদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ভাতা পুনর্বহাল সহ ৭ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।আজ ২৯ নভেম্বর (২০২২) মঙ্গলবার বিকেল চারটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের সাথে তার অফিসে দেখা করে ৭ দফা দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি তুলে দেন সাদা দলের প্রতিনিধিরা।
স্মারকলিপিতে বলা হয় , সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের ‘গবেষণা ভাতা’ বাতিলের একটি অনাকাক্ষিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের এক মাত্র কাজ নয়, বরং বিদ্যমান জ্ঞানের বিকাশ এবং নতুন জ্ঞান সৃজনও তাঁদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আর এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোনো না কোনো ভাবে গবেষণা কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হয়। শিক্ষকদের গবেষণা কাজের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এ গবেষণা ভাতা চালু করেছিল। শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় এর পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়। যদিও গবেষণা কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় গবেষণা ভাতার পরিমাণ ছিল যৎসামান্যই। তারপরও হঠাৎ করেই এটি রহিত করা হলো। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসের বাইরে বসবাসকারী শিক্ষকদের জন্য যাতায়াত ভাতা রহিত করা হয়েছে। লেকচারার হিসেবে যোগদানের সময় একজন শিক্ষককে যে সর্বোচ্চ চারটি ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হতো, সেটিও হ্রাস করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে যে সেশন বেনিফিট সুবিধা ছিল , তাও বাতিল করা হয়েছে। বিদেশে সেমিনারে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত নির্ধারিত অনুদানও এখন বন্ধ রয়েছে বলে আমরা জেনেছি। শতবর্ষ অতিক্রমকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য উচ্চতায় প্রতিস্থাপন এবং এর বৈশ্বিক র্যাংকিং বৃদ্ধির জন্য যখন নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে, সে সময় শিক্ষকদের জন্য পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করে বিদ্যমান সুযোগ সুবিধাসমূহ একের পর এক হ্রাস বা রহিত করা অযৌক্তিক এবং অন্যায্য বলে আমরা মনে করি। এ ধরণের সিদ্ধান্ত কেবল শিক্ষকদের জন্য আর্থিক ক্ষতিই নয়, অসম্মানজনকও বটে। এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও স্বায়ত্তশাসনের অবস্থানও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই আমরা এসব সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এ সময় উপস্থিত সাদা দলের প্রতিনিধিরা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ৭ দফা দাবি জানান।
দাবি গুলো হলো:
১/ অন্য কোনো বিকল্প নয়, বরং অবিলম্বে ‘গবেষণা ভাতা’ পুনর্বহাল করা;
২/ ক্যাম্পাসের বাইরে বসবাসকারী শিক্ষকদের যাতায়াত ভাতা পুনর্বহাল করা;
৩/লেকচারার হিসেবে যোগদানের সময় একজন শিক্ষককে যে সর্বোচ্চ চারটি ইনক্রিমেন্ট প্রদানের বিধি চালু ছিল তা পুনর্বহাল করা;
৪/ লেকচারার ও সহকারী অধ্যাপকদের জন্য টেলিফোন ভাতা পুনর্বহাল করা;
৫/ শিক্ষকদের বিদেশে সেমিনারে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নির্ধারিত অনুদান প্রদান অব্যাহত রাখা;
৬/ শিক্ষকদের বিদ্যমান কোনো সুযোগ-সুবিধা হ্রাস নয়, বরং ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা; এবং
৭/ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বহুল প্রত্যাশিত ‘স্বতন্ত্র বেতন স্কেল’ প্রর্বতনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষক ও সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ লুৎফর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক ইয়ারুল কবীর, অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক মোঃ মহিউদ্দিন, জনাব এম এ কাউসার, অধ্যাপক মো নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক আবদুস সালাম, অধ্যাপক শাহ মোহাম্মদ এমরান, অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম শহীদ ।
সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ লুৎফর রহমান জানান ” আমাদের দাবিসমূহ দল-মত নির্বিশেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষকেরই দাবি। এসব দাবি বাস্তবায়নে উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আখতারুজ্জামান প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমরা আশা করি।