মো. নুরুল করিম আরমান, লামা প্রতিনিধি:
স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে কিছু গরু-মহিষ আটক করলেও থেমে নেই বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়ন সীমান্ত দিয়ে গরু-মহিষ প্রবেশ। গত ৮-৯ মাস ধরে মিয়ানমার থেকে প্রতিনিয়ত ঢুকছে গরু ও মহিষ। আবার একটি অসাধু চক্র এসব গরু মহিষ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপাজেলায় দিন রাত পাচার করে চলেছে। চক্রটি এ পর্যন্ত কুরুকপাতা সীমান্ত দিয়ে প্রায় তিন হাজারেরও বেশি গরু মহিষ এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করেছে জানান স্থানীয়রা। অভিযোগ উঠেছে, এসব গরু মহিষকে নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ও বিষাক্ত ইনজেকশন পুশ করে আনা হয়। যা জন স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরুপ।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে আলীকদম থেকে একটি চক্র পাহাড়ি পথ বেয়ে গরু মহিষ পাচার করছে; এমন সংবাদের ভিত্তিতে লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মিরিঞ্জা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ৯টি গরু আটক করে পুলিশ। অপরদিকে একই ইউনিয়নের ইযাংছা শামুক ছড়ায় পুলিশের সহায়তায় অভিযান চালিয়ে আরও ৩১টি গরু মহিষ আটক করে নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবি। আটক গরু মহিষ গুলোর স্থানীয় বাজার মুল্য ৩৫ লাখ টাকা বলে ধারণা করছেন স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীরা। এদিকে গত কয়েক মাসে বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক গরু আটক করে নিলামে বিক্রি করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক গরু ব্যবসায়ী জানায়, আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের পশ্চিম এবং দক্ষিনে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ অবস্থিত। এ ইউনিয়নের সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকায় অরক্ষিত ও দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চল। এই ইউনিয়নের সীমানা সীমান্তেই মায়ানমারের অবস্থানের কারনে এসব এলাকার পাহাড়ী সীমান্ত পথ দিয়েই চোরাচালানীরা নির্বিঘেœ অবৈধভাবে নিয়ে আসছে থাইল্যান্ডের ব্রাহামাসহ মায়ানমারের বিভিন্ন জাতের শত শত গরু-মহিষ। চোরাই পথে আসা এসকল গরু -মহিষ পাহাড়ী সীমান্ত পার করে প্রথমে কুরুকপাতা ইউনিয়নের মারান পাড়া, কচুর ঝিরি, বাবু পাড়া ও খেতা ঝিরিসহ বিভিন্ন উপজাতিয় পাড়ায় রাখা হয়। কখনো কখনো মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীর বনাঞ্চলেও ছেড়ে দেয়া হয় এসকল গরু-মহিষ। পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে আলীকদম-কুরুকপাতা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ট্রাক যোগে আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়ক এবং ইয়াংছা থেকে নব নির্মিত মানিকপুর-কাকারা সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অবৈধভাবে গরু-মহিষ আসা বন্ধে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কার্যকরী হস্থক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে লামা উপজেলার খামারী আবদু সত্তার ও এসহসান উল্লাহ বলেন, মিয়ানমার থেকে গরু আনার কারনে দেশীয় গরুর চাহিদা ও দাম কমে গেছে। দেশে গরুর খাদ্যের দাম বেশি। তাই এক থেকে দেড় বছর গরু লালন পালনের পর বিক্রি করলে লাভের মুখ দেখতে পারছেনা খামারীরা। অধিকাংশ সময়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে খামারীদের। বিদেশ থেকে থেকে এভাবে গরু মহিষ আনা হলে দেশীয় খামারীদের গরু মহিষ পালন ছেড়ে দেনার দায়ে ঘরবাড়ী ছেড়ে পালাতে হবে।
এদিকে সার্ক মানাবাধিকার ফাউন্ডেশনের বান্দরবান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এম. রুহুল আমিন বলেন, মিয়ানমার থেকে অবাধে গরু মহিষ দেশে আনার কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে দেশীয় খামারীরা। তাই দেশে গরু আনা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি ও পুলিশকে আরো কঠোর হতে হবে। তবেই বন্ধ হবে গরু প্রবেশ আর লোকসান থেকে বাঁচবে খামারীরা।
গরু মহিষ আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুলিশের হাতে ৯ গরু আটকের ঘটনায় অজ্ঞাত নামা আসামী করে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। অপর দিকে পুলিশের সহায়তায় আটক ৩১ গরু বিজিবি’র হেফাজতে রয়েছে। অবৈধভাবে মিয়ানমার থেকে গরু প্রবেশের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।