জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
যথাযথ প্রক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথ্য সংগ্রহ না করায় ঢাবির ২০১৯-২০ সেশনের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পরিবহন ও আবাসিক ফি ফেরত পেতে দীর্ঘদিন ধরে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন । তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উল্টো শিক্ষার্থীদের উপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন।

জানা যায়, প্রতি বছর অনার্স এবং মাস্টার্সে ভর্তির সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরিবহন ফি ও আবাসিক শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে নিজ নিজ হলের জন্য নির্ধারিত আবাসিক ফি জমা দিতে হয়। তবে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত করোনা মহামারীর কারণে সারাদেশের ন্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু ছিল।একই সময়ে হলের প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু থাকলেও হলে শিক্ষার্থীরা থাকতে পারে নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কোন পরিবহন চলাচল করে নি। তবু ২০১৯-২০ সেশনে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ থেকে অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সে ভর্তির সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনলাইনে কিংবা অফলাইনে পরিবহন ও আবাসিক ফি আদায় করা হলে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের দাবির মুখে পরিবহন ও আবাসিক ফি মওকুফ করা হয়। ইতিপূর্বে যাদের কাছ থেকে পরিবহন ও আবাসিক ফি জমা নেওয়া হয়েছে, তাদের ফি পরবর্তীতে সমন্বয় করে করা হবে বলে জানিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই সময় যাদের কাছ থেকে পরিবহন ও আবাসিক ফি আদায় করেছিল, তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী পরিবহন ও আবাসিক ফি ফেরত পায় নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংযুক্ত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশন ছাত্রী ফারজানা ফেরদৌস জানান, “আমাদের সাথে অনেকেই টাকা পেয়েছে। কিন্তু আমার রোল আসে নি লিস্টে। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ পে ইন স্লিপ এর ফটোকপি দিয়ে এসেছি সাথে সাথেই। কিন্তু এখনো কোনো খবর নেই। ডিপার্ট্মেন্টের অফিসে খোঁজ নিয়েছি কয়েকবার।কিন্তু তারাও কোনো নোটিশ পায়নি “।
দর্শন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ছাত্রী ফারজানা আলম ফারিয়া জানান,”২০২১ এ ভর্তি হয়েছিলাম। পরিবহন ফি সহ অনলাইনে পে করেছি। পরবর্তীতে শুধু যারা অফলাইনে ভর্তি হয়েছিলো তাদের টাকা ফেরত দিয়েছে ডিপার্টমেন্ট থেকে। কিন্তু আমরা যারা অনলাইনে ভর্তি হয়েছিলাম , তাদের কে টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি । যেন এই বিষয়টা তারা ভুলেই গিয়েছে!

এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত হিসাব পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, পরিবহন ও আবাসিক ফি মিলে ২ হাজার ৫৩৫ শিক্ষার্থী কে মোট ২৯ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার চেক ফাইল সিন্ডিকেট সভায় পাস হওয়ার পর আমার কাছে এসেছে। খুব শিগগিরই শিক্ষার্থীদের কাছে বিভাগের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেয়া হবে।
তিনি আরো জানান, ” আগে ২০ হাজার ৯৩০ জন শিক্ষার্থী টাকা ফেরত পেয়েছে। অফলাইনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের টাকা জমা দেওয়ার তথ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে না থাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পে ইন স্লিপ নিয়ে ব্যাংক থেকে যাচাইয়ে সময় ক্ষেপণ হয়েছে বলে তাদের টাকা ফেরত দিতে দেরি হচ্ছে।
এই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “হয়তো গ্রামে থাকার কারণে কিছু শিক্ষার্থী বাদ পড়েছে। তারা সময়মতো পে ইন স্লিপ জমা দিতে পারি নাই। এজন্যই টাকা ফেরত দিতে দেরি হচ্ছে।