আব্দুস সালাম, টেকনাফ (কক্সবাজার):
কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনদ্বীপ ভ্রমণ শেষে জাহাজে করে ফেরার পথে বসার আসন নিয়ে বাদানুবাদের জেরধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের দুই দফা মারধরের ঘটনায় এজাহার নামীয় আটজন ও অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করে একটি মামলার রুজু করা হয়েছে। ওই মামলার তিন নং আসামি শাকিল (২৭) নামে একজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

মঙ্গলবার বিকেলে এমভি বে-ক্রুজ-১-এর পর্যটকবাহী জাহাজে দুই দফায় জাহাজে সিটে বসা নিয়ে বিতণ্ডা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের মারধরের শিক্ষকসহ ১০জন আহত হয়।

গতকাল রাতেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আ.ফ.ম ফজলে রাব্বি চৌধুরী বাদী হয়ে এজাহার নামীয় ৮জনের মধ্যে লুৎফুর রহমান খোকনকে প্রধান আসামি ও অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ নাসির উদ্দিন মজুমদার গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামীগণ বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজের মালিক, সুপার ভাইজার, মাষ্টার ও স্টাফ হয়। আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। অর্থনীতি বিভাগের পক্ষ থেকে ৭৬জন ছাত্র/ছাত্রী নিয়ে সেন্টমার্টিনদ্বীপের উদ্দেশ্যে একটি শিক্ষা সফরের আয়োজন করা হয়। গত রবিবার সেন্টমার্টিনদ্বীপে ভ্রমণে যান। মঙ্গলবার ফেরার সময় সেন্টমার্টিন ভ্রমণ শেষে একই জাহাজে আমাদের নামে ক্রয়কৃত সিটে বিনা টিকেটে ভ্রমণকৃত যাত্রীদের বসিয়ে রেখেছে। বে-ক্রুজ ইন্টারন্যাশনাল জাহাজের সুপার ভাইজার ১নং বিবাদী লুৎফর রহমান খোকন (৩২) কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি সমাধান না করে উল্টো আমাদের উপর চড়াও হয়ে উচ্চস্বরে চেচামেচিসহ উদ্ধত আচরণ করে এবং এক পর্যায়ে তার হাতে থাকা লাঠি দিয়ে ৮নং সাক্ষী আনোয়ার হোসেনকে এলোপাথাড়ি মারধর করে। একপর্যায়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে জাহাজ হতে সাগরে ফেলে দেয়ার উদ্দেশ্যে বুকে সজোরে লাথি মারে। শিক্ষাসফরে থাকা অন্যান্য ছাত্ররা আগাইয়া আসিলে উত্তেজিত পরিস্থিতিতে ১নং বিবাদী ঘটনাস্থল হতে উপরে এসে মাষ্টারের রুমে চলে যায়। পরবর্তীতে জাহাজ টেকনাফের দমদমিয়া জাহাজ ঘাটে এসে পৌঁছালে তথায় ২য় ঘটনার সময়ে আমিসহ শিক্ষার্থীরা জাহাজ থেকে নামার জন্য ডেকে অবস্থানকালীন সময়ে সকল আসামীগণ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫জনসহ হাতে লাঠি-সোঠা, লোহার রড ইত্যাদি নিয়ে বেআইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে অতর্কিতভাবে আমাদের উপর হামলা করে। ১নং বিবাদীর লোহার রডের ধারালো কিনারার আঘাতে ৯নং সাক্ষীর ডান পায়ে রক্তাক্ত কাটা জখম করা হয় এবং অন্যান্য আসামীদের হাতে থাকা লাঠি-সোটা, লোহার রডের এলোপাথাড়ি আঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী নীলা-ফুলা জখমপ্রাপ্ত হয়। এরই সুযোগে ৩নং আসামী কৌশলে আমার বুক পকেটে থাকা নগদ ২,৫০০ টাকা নিয়া ফেলে। আমাদের শোর-চিৎকার শুনে আশের পাশের লোকজন ও আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের উদ্ধার করতে আসলে আসামীগণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দেখে ৪নং আসামী আমাদেরকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে দেখে নিবে মর্মে হুমকি প্রদান করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমাদের জখমী অবস্থায় দেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এসে আমাদের প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করেন। আহতদের চিকিৎসা প্রদান ও আমাদের সাথে থাকা অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে থানায় এসে এজাহার দায়ের করতে কিছুটা বিলম্ব হয়।

পরে থানা পুলিশ দমদমিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার ৩নং আসামি শাকিলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মারধরে আহত শিক্ষক ও অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আ.ফ.ম ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। বাঁচাতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন। রাতেই আমি বাদী হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ নাসির উদ্দিন মজুমদার বলেন, গ্রেপ্তার আসামিকে বুধবার বিকেলে কক্সবাজার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।