এম.এ আজিজ রাসেল:
দক্ষিণ চট্টলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যা পীঠ কক্সবাজার সরকারি কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির ৬০ বছর পূর্তিতে ‘হীরকজয়ন্তী’ উৎসবে মেতেছিল বর্তমান ও সাবেক প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী। সকাল থেকে রাত অবদি শিক্ষার্থীদের প্রাণের উচ্ছ্বাসে মুখরিত ছিল চির চেনা ক্যাম্পাস। সাড়ে ১০ টায় বের করা হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কোরআন তেলাওয়াত, ত্রিপিটিক ও গীতা পাঠের পর শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।
বেলা ১১টার দিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুক্ত আলোচনা ও স্মৃতিচারণা। পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শিরীণ আখতার। তিনি বলেন, সততা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় বড় হতে হবে। সোনার মানুষ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আজকের প্রজন্ম ভবিষ্যৎ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম কারিগর। সমাজের মঙ্গলের জন্য সবার ভূমিকা অপরিসীম।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মুক্ত আলোচনায় স্মৃতিচারণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একাত্তরে জয় বাংলা বাহিনীর প্রধান কামাল হোসেন চৌধুরী, কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুল করিম, বর্তমান অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন, প্রাক্তন ছাত্র ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম, সিনিয়র আইনজীবী নুরুল ইসলাম, আইনজীবী তাপস রক্ষিত, ছাত্রনেতা নুরুল আজিম কনক প্রমুখ।
এরপর কলেজ, স্থানীয় ও রাখাইন শিল্পীদের নান্দনিক পরিবেশনায় মুখর ছিল হীরকজয়ন্তী মঞ্চ। এছাড়া সন্ধ্যায় মঞ্চ মাতান দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড আর্কের শিল্পী হাসান।
সকাল থেকে কলেজ প্রাঙ্গণ সরব হয়ে উঠে শিক্ষার্থীদের পদচারণায়। বেলা গড়াতেই ভিড় বাড়ে দ্বিগুণ। দিনভর কলেজের বিভিন্ন ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা সেলফি, আড্ডা, গান ও স্মৃতিচারণে ব্যস্ত ছিল। এসময় স্মৃতিপটে ভেসে উঠে কলেজে অধ্যয়নকালীন দিনগুলোর কথা। অনেকেই দীর্ঘদিন পর প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধুদের কাছে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়ে।
শত শত শিক্ষার্থীর ভিড়ে শামীমা আক্তার ওরফে পারভীনকে চিনতে ভুল করেননি তাঁর একসময়ের সহপাঠী রেহেনা আকতার। শামীমা টেকনাফের হোয়াইক্যং স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক। আর রেহেনা চট্টগ্রাম শহরের বাসিন্দা। দীর্ঘ ২৩ বছর পর ক্যাম্পাসে দেখা দুজনের। রেহেনাকে জড়িয়ে ধরে শামীমা আক্তার বলেন, ‘ক্যান আছস তুই, এত দিন হড়ে আছিলি।’
কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ বলেন, আমার অনেক বন্ধুকে কাছে পেয়েছি। তাদের দেখে খুবই ভাল লাগছে। কলেজের প্রথম বাসটি আমাদের আন্দোলনের ফসল। কিন্তু বর্তমানে এটি ভঙ্গুর দেখে খারাপ লাগলো।
সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের এক পাশে দাঁড়িয়ে স্ত্রীর ছবি তুলছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির আহমদ চৌধুরী (৭২)। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর ছেলে ও পুত্রবধূ। ১৯৭০ সালে তিনি এই কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী উম্মে খালেদা খানম (৬৭) এই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ১৯৭৪ সালে। তাঁদের সন্তান মো. শাহরিয়ার বিন নাসির এইচএসসি পাস করেন ২০০২ সালে। আর পুত্রবধূ ফারহানা আক্তার পাস করেন ২০০৬ সালে। এক পরিবারের চারজন সদস্য দল বেঁধে ক্যাম্পাসে হাঁটতে দেখে অনেকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন।
সাবেক আরেক শিক্ষার্থী প্রথম আলোর কক্সবাজার অফিস প্রধান আবদুল কুদ্দুস রানা বলেন, কলেজ প্রতিষ্ঠার পর গত ৬০ বছরে এ ধরনের আয়োজন আর হয়নি। উৎসবে এসে নতুন—পুরোনো সবার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, কুশল বিনিময় হচ্ছে, কে কোথায় আছেন, কীভাবে আছেন—খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। দিনটা সবার মনে থাকবে।
দীর্ঘ ৬০ বছরে এই কলেজের শত শত শিক্ষার্থী সরকারি আমলা, চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী হয়েছেন। হীরকজয়ন্তী উৎসবে কাছে পেয়ে বন্ধুদের অনেকে একে—অপরকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘কী খবর বল, এত দিন ক্যামন ছিলি, কোথায় ছিলি।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।