আব্দুস সালাম,টেকনাফ (কক্সবাজার):
কক্সবাজারের টেকনাফে পাহাড়ি দূর্বৃত্তের কবল থেকে স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে রক্ষা করলো সাহসী পিতা। এছাড়া অপর এক অপহরনের ঘটনায় ৩ লাখ টাকা মুক্তিপনে ৩ যুবককে মুক্তি দিয়েছে দূর্বৃত্তরা।
এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের দমদমিয়া ন্যাচার পার্ক এলাকায়। এসময় পিতা-ছেলে দূর্বৃত্তের কবল থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেও তাদের এলোপাতাড়ি মারধরে দু’জনই আহত হয়েছে।এরা হচ্ছেন মৃত আবদুল খালেকের ছেলে মোহাম্মদ হোছন ও তার ছেলে দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্র আবদুল আজিজ। গত ২৩ মার্চ রাত ৯টারদিকে তার নিজ বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
মোহাম্মদ হোছন ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো মাগরিবের পর থেকে পড়ার টেবিলে স্কুলের পড়া শিখছিলো আব্দুল আজিজ। পড়া শেষ করে রাত ৯ টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাড়ির উঠানে বের হলে হঠাৎ মুখে কালো কাপড় পরা স্বশস্ত্র ৪-৫ জন দূর্বৃত্ত তাকে ধরে পেলে। এসময় তার চিৎকারে বাবা হোছন ঘর থেকে দ্রত বের হলে তাকেও ধরার চেষ্টা করে। কিন্তু সাহসী হোছন সু-কৌশলে দুই জন দূর্বৃত্তের লম্বা বন্ধুক ধরে টানদিলে ছেলে আজিজকে ছেড়ে দেয় এবং আজিজ দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ে। এসময় অপর দূর্বৃত্তের বন্ধুকের আঘাতে আজিজের হাত ভেঙ্গে যায়। এদিকে দূর্বৃত্তের সাথে ধস্তাধস্তি ও তাদের বাড়ির সকলের চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে দূর্বৃত্তের দল হোছনকে এলোপাতাড়ি মারধর করে এবং এক পর্যায়ে তাকে ফেলে পাহাড়ের দিকে চলে যায় দূর্বৃত্তরা।
এলাকাবাসীরা আরো জানায়, ১৫-২০ জনের দূর্বৃত্তের দল পাহাড়ে অবস্থান করছে দীর্ঘ দিন ধরে। সেখানে বেশিরভাগই রোহিঙ্গা। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ চরম আতংকে দিনাতিপাত করছে।
এদিকে গত ২২ মার্চ দমদমিয়া এলাকার ৩ জন যুবক ও ১৯ মার্চ জাদিমুড়াস্থ জুম্মাপাড়ার একজন কৃষক কে অপহরণ করেছে দূর্বৃত্তরা। তাদের মধ্যে কৃষক ছৈয়দ উল্লাহ ৫ দিন পর ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসে এবং দমদমিয়া এলাকার ৩ যুবক রিদুয়ান সবুজ, মোস্তফা ও রহমত উল্লাহকে ৩ লাখ ১০ হাজার টাকায় মুক্তিপনে রবিবার বিকেলে মুক্তি দেয়। মুক্তিপন নেওয়ার জন্য তাদেরকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের শরীরে মারধরের জখম রয়েছে। এর আগে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ চেয়েছিল দূর্বৃত্তরা। এমনটি জানিয়েছেন তাদের পরিবার। এতে চরম উৎকন্ঠায় ও উদ্বিগ্নে রয়েছে পরিবারসহ এলাকাবাসী।
অপরদিকে এখবর সোস্যাল মিডিয়ায় বেশ চাউর হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। তাদের উদ্ধারে প্রশাসনের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।
পবিত্র রমজান মাসে অপহরণ আতংকে চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ায় রবিবার স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলী স্থানীয়দের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এসময় তিনি সম্মিলিত ভাবে দূর্বৃত্তের মোকাবেলা করার সাহস যোগান এবং রাতে পাহারা দেওয়ার জন্য ৪টি দলে বিভক্ত করে পাহারা দল গঠন করেন।
এব্যাপারে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী মেম্বার বলেন, রোহিঙ্গা দূর্বৃত্ত পাশের পাহাড়ে অবস্থান করে শান্ত এলাকাকে অশান্ত করে তুলছে। যে কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দিচ্ছে। তারা স্বশস্ত্র হওয়ায় ভয়ে রয়েছে এলাকাবাসী। তাদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান চালানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানান।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাছির উদ্দীন মজুমদার বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ উপজেলার বাহারছড়ার ইউনিয়নের জাহাজপুরা এলাকা থেকে ৭ জনকে অপহরণ করা হয়েছিল। তারা হলেন,কলেজ শিক্ষার্থী গিয়াস উদ্দিন (১৭), রশিদ আলম (২৬), জানে আলম, (৪৫),জাফর আলম (৪০),জাফরুল ইসলাম (৩০),ফজল করিম (৩০) ও আরিফ উল্লাহ (৩০) । তারা সকলেই বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব মাঠ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। পৃথক মুক্তিপনের মাধ্যমে তারাও ফিরে আসে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।