মোঃ কাউছার উদ্দীন শরীফ, ঈদগাঁও :
কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় চিকিৎসক না হয়েও সাইনবোর্ড ও ব্যবস্থাপত্রে ‘ডাক্তার’ লিখে রোগী দেখছেন ভুয়া চিকিৎসক মোঃ হাকিম জয়নাল আবেদীন ও রোমেনা আক্তার।
শুধু তাই নয়, রোগ অনুযায়ী ‘চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসা’ ব্যবস্থা চালু করেছেন তিনি। রমরমা এই বাণিজ্যের মাধ্যমে কয়েক বছরের মাথায় গড়ে তুলেছেন চেম্বার ও ফার্মেসি। প্রায় কোটি টাকায় কিনেছেন দামি ফ্ল্যাট। টাকার বিনিময়ে একাধিক ডিগ্রিও নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, চার বছর আগেও যে ব্যক্তির একমাত্র পরিবারের চিকিৎসার খরচ জোগাতে অন্যের কাছে হাত পাততে হয়েছিল, কয়েক বছরের মধ্যে তিনি কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
রোববার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়,ঈদগাঁও বাস স্টেশনে গরু বাজার এলাকায় অবস্থিত কম্বাইন্ড মেডিকেল ডক্টরস চেম্বার নামক প্রতিষ্ঠানে চেম্বার করছেন চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া হাকিম জয়নাল আবেদীন।
এ চেম্বারে থাকা চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় অপেক্ষমাণ রোগীদের। দূরদূরান্ত থেকে আসা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন মাধ্যমে খবর পেয়ে তারা এসেছেন। এখানে চিকিৎসার জন্য রোগ অনুযায়ী চুক্তি করা হয় রোগীদের সঙ্গে।
চকরিয়া কাকরা এলাকা থেকে জয়নালের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ৩০ বছর বয়সি নুর জাহান জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার বুক জ্বালাপোড়া-তাই চিকিৎসা নিতে গেছেন। চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া জয়নাল বলেছেন, এটা পুরোনো রোগ। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধসহ ৩০ হাজার টাকা লাগবে। এ কথা শুনে তিনি চলে আসেন।
কামাল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার মেয়ের অ্যালার্জির সমস্যা নিয়ে ওই ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছেন, চিকিৎসার জন্য ১০ হাজার টাকা লাগবে। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। সেখানে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। বাকি টাকা ওষুধ খরচ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকার লোকজনের মাধ্যমে রোগী সংগ্রহ করেন জয়নাল। এজন্য নির্দিষ্ট হারে তাদের কমিশনও দেওয়া হয়।
জয়নাল ও তার স্ত্রী রোমেনা যেভাবে চিকিৎসক বনে গেলেন : ২০১৬ সালে এক চিকিৎসকের কমপাউন্ডার (সাহায্যকারী) হিসাবে কাজ শুরু করেন। অপরদিকে ফার্মেসি দিয়ে শুরু করেন ওষুধের ব্যবসা। এ পথে কিছুদিন যেতে না যেতেই চিকিৎসক সেজে ডাক্তারি শুরু করেন তিনি। নিজের নামের সঙ্গে যোগ করেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। চিকিৎসার ফি বাবদ প্রতি রোগীর কাছ থেকে আদায় করেন ৫০০ টাকা।
চিকিৎসক না হয়েও চিকিৎসক পরিচয়ে রোগী দেখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয়নাল বলেন, সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পালিয়ে যায়।পরে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে দেয়।
ঈদগাঁওয়ের কম্বাইন্ড মেডিকেল ডক্টরস চেম্বার বন্ধ ও ভুয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।