নুরুল আলম সাঈদ, নাইক্ষ্যংছড়ি:
পাবর্ত্য বান্দরবান জেলার দূর্গম রোয়াংছড়ি উপজেলায় পাহাড়ী দুটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় নিস্তব্ধ অবস্থা বিরাজ করছে। এ ঘটনার পর আতঙ্কে ওই এলাকার তিনটি পাড়ার প্রায় দুই শতাধিক পরিবার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও রুমা উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেওয়া পরিবার গুলোকে সেনাবাহিনী ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে খিচুড়ি ও শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) সকালে রোয়াংছড়ি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে দুর্গম খামতাং পাড়া এলাকায় পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের সদস্যদের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে আটজন নিহত হয়, এর মধ্যে ৭ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, ভান দু বম, সাং খুম, সান ফির থাং বম, বয় রেম বম, জাহিম বম, লাল লিয়ান ঙাক বম ও লাল ঠা জার বম। ঘটনার পর লাশ উদ্ধার করে বান্দরবান সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এবং শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
কেএনএফ বলছে, ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক বম সম্প্রদায়ের সাধারণ লোকজনদের ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। নিহতদের সবার গায়ে কমবেট ইউনিফর্ম (পোশাক) পরা ছিল। তবে তারা কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপের তা পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা যায়নি। পুলিশ বলছে, নিহত ৮ জন উভয় পক্ষের। এ ঘটনার পর আতঙ্কে ওই এলাকার তিনটি পাড়ার দুই শতাধিক পরিবার রোয়াংছড়ি সরকারি উচ্চবিদ্যালয় ও রুমা উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছে। তাদের সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে খিচুড়ি ও শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।
অপর দিকে খামতাং পাড়া ও জুরবা রাম পাড়া থেকে পালিয়ে আসা স্থানীয়রা জানান, ওই এলাকার বেশ কয়েকটি পাড়া এখন জন মানব শূন্য। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ঘটনার পর লোকজন আতঙ্কে ও ভয়ে প্রাণ বাচাতে বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে গেছে। বেশ কিছু মানুষ রোয়াংছড়ি সদরেে ও রুমা উপজেলায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। কবে এলাকায় ফিরে যেতে পারবে তারা কেউ কিছু জানে না।
তারা আরো জানান, গত কয়েক দিন থেকে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দল সেখানে অবস্থান নেওয়ার পর গোলযোগ শুরু হয়। বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সকালে সেখানে গোলাগুলির পর আটজন মারা যায়। গেল ১২ মার্চ কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল অতর্কিত গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার নাজিম উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন এবং দুজন সেনাসদস্য আহত হন। ১৫ মার্চ রুমা উপজেলার কেওক্রাডং এলাকায় সীমান্ত সড়কের কাজ দেখতে যান অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট আনোয়ার হোসেন। এ সময় ট্রাক চালক মো. মামুন ও শ্রমিক আবদুর রহমানকে অপহরণ করে কেএনএফ। দুজনকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ১৬ দিন পর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট আনোয়ার হোসেনকে মুক্তিপণের বিনিময়ে মুক্তি দেওয়া হয়। এসব এলাকায় এখন ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দল আধিপত্য বিস্তার করেছে। এলাকায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তৎপরতা দমনে, গেল পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে জেলা প্রশাসন কতৃর্ক পার্বত্য বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় দেশি-বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে।
অপরদিকে পুলিশ সুপার মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন ও অপরাধী গ্রেপ্তারে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। সংঘর্ষের ঘটনার পর ওই এলাকায় নিরাপত্তায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, উদ্ধারকৃত লাশগুলোর পরিচয় পাওয়া গেছে। বান্দরবান সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে। এই বিষয় এখনো কোনো মামলা হয়নি বলে জানান এসপি।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করলে তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ জেলা হিসেবে বিবেচিত হতো বান্দরবান। কিন্তু ২০২১ সাল থেকে জেএসএস, জেএসএস (সংস্কার), ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ সংস্কার, মগ পার্টি ও কেএনএফের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে অশান্ত জেলা এখন পার্বত্য বান্দরবান।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।