আব্দুস সালাম,টেকনাফ (কক্সবাজার):
কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (১৬ এপিবিএন) কর্তৃক হ্নীলা ইজিবাইক (টমটম) চালকদের প্রতিনিয়ত শারীরিক নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন শ্রমিকরা।

বুধবার (১২এপ্রিল) বিকাল ৩ টারদিকে দক্ষিণ হ্নীলা ইজিবাইক ও মিনিটমটম শ্রমিক সমবায় সমিতি লিঃ ( রেজিঃ নং ২৪৭০) এর নিজস্ব কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

এতে উক্ত সংগঠনের সভাপতি ও শ্রমিকনেতা আবুল হোছন আবু লিখিত বক্তব্যে বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত ১৬ এপিবিএন কর্তৃক বিভিন্নভাবে শ্রমিকদের মারধর ও হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন।

তিনি জানান, প্রতিদিন আমাদের শ্রমিকেরা তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে ইজিবাইক নিয়ে বের হলে উপজেলার জাদিমোরা এলাকা থেকে ১৬ আর্মড পুলিশের কিছু সদস্য তাদের অটোরিক্সা থামিয়ে সকাল থেকে গাড়ি আটক রেখে রাতে তাদের (এপিবিএন) এর ডিউটির জন্য নিয়ে যায়। পরের দিন রাতে ডিউটি শেষে সকালে একটি টুকেন হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিনা বেতনে বা কোনোধরণের ভাড়া না দিয়ে ছেড়ে দেন। এর ফলে আমরা ওই দিন সকাল থেকে রাত, পরের দিন ও রাত ( অর্থাৎ দু’দিন ও দু’রাত) গাড়ি চলাতে পারি না। তাতে গাড়ির মালিকদের আমাদের বাড়ি থেকে দু’দিনের টাকা এনে ভাড়া দিতে হয়। একদিন ভাড়া টানলে আমরা বেশির থেকে বেশি ৩শ থেকে ৫শ টাকা মতো পেয়ে থাকি। তা দিয়ে সংসার চালিয়ে কোনমতে জীবন পার করতেছি। সেখান থেকেও যদি আর্মড পুলিশের (এপিবিএন) এর কারণে কোন টাকা না পেয়ে বাড়ি থেকে এনে গাড়ির মালিককে দিতে হয়,তার থেকে কি জুলুম,অবিচার আর আছে ? বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি রাতে ডিউটির সময় বিদ্যুৎ ফুরিয়ে গেলে তা মজুদ করতে একদিন সময় লাগে। এভাবেই আমাদের শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করে আসছে।
শুধু তাই নয়, আমরা তাদের সাথে ডিউটি করতে অস্বীকৃতি জানালে, তারা আমাদেরকে মাদক মামলা দিয়ে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে মারধরসহ বিভিন্ন ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে। আমাদের কয়েকজন শ্রমিক ভাই তাদের মারধরের শিকার হয়ে অসুস্থতার কারণে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতারা আরো বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে অসংখ্য রোহিঙ্গা ইজিবাইক (অটোরিক্সা) চালাচ্ছে, অথচ তাদের গাড়ি ডিউটির জন্য রাখে না। আমরা স্থানীয় হয়েও আমাদেরকে অহেতুক হয়রানি করছে ।
শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে বলেন,২০১৭ সালে রোহিঙ্গা এবং ইয়াবা অনুপ্রবেশের অজুহাতে আমরা নাফ নদীতে মাছ ধরতে যেতে পারি না। পাহাড়েও যেতে পারছি না অপহরণ ও মুক্তিপণের ভয়ে। সে জন্য কোনমতে সংসার চালাতে শ্রমিকের পেশায় এসেছি। এখানেও যদি আমরা প্রতিনিয়ত হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে আমরা কী কাজ করে সংসার চালাবো?

আমরা যারা ভাড়া গাড়ি চালায়,তাঁরা যদি একদিন একরাত ভাড়া মারতে না পারলে তাহলে আমাদের মালিক কে বাড়ি থেকে এনে দৈনিক ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। অথচ আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উধর্বতন কর্মকর্তাদের বিনীত অনুরোধ জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন,, আমাদেরকে এসব হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতন এবং অন্যায় কাজ থেকে যেন মুক্তি দেন ১৬ এপিবিএন পুলিশ। যদি তা না হয় ভবিষ্যতে আমরা টমটম শ্রমিকরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।

সংবাদ সম্মেলনে উপজেলার দক্ষিণ হ্নীলা ইজিবাইক ও মিনিটমটম শ্রমিক সমবায় সমিতির সভাপতি আবুল হোসাইন, সহ-সভাপতি রবিউল আলম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, অর্থ সম্পাদক ওসমান সরওয়ার, সদস্য মোহাম্মদ ইদ্রিস, মোহাম্মদ রিদওয়ান ও মুহাম্মদ ইউনূসসহ উক্ত শ্রমিক সংগঠনের শতাধিক শ্রমিক নেতারা উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন।