মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

স্ত্রী যৌতুক দাবি করায় স্বামী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। যৌতুক নিতে প্ররোচনা দেওয়ায় মামলায় শ্বাশুড়িকেও আসামী করা হয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ আমলী আদালতে গত ৩১ আগস্ট মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ মামলটি আমলে নিয়ে আসামীদের প্রতি সমন জারি করেছেন। কক্সবাজারে এই প্রথম স্ত্রী ও শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে যৌতুক দাবী করার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা দায়ের করা হলো।

একই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শফি  এ তথ্য জানিয়েছেন।

আদালতে দাখিলকৃত ফৌজদারী দরখাস্তের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরো জানান, ২০১৩ সালের ২ জুন টেকনাফের হোয়াইক্ষ্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল গ্রামের তেচ্ছিব্রীজ এলাকার মো: কালা মিয়া ও ছকিনা খাতুনের পুত্র মোঃ ফয়সাল (৩৩) এর সাথে একই উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার আবুল হোছন ও রহিমা খাতুনের কন্যা নাঈমা আক্তার (২৫) এর সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। যার কাবিন নম্বর ৭১/২০১৩ ইংরেজি।

মোঃ ফয়সাল একজন প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা। মো: ফয়সাল ও নাঈমা আক্তার দম্পতির মরিয়াম বিন সাফা (৭) এবং মোঃ সামি (৩) নামক ২জন সন্তান রয়েছে।

মো: ফয়সাল প্রবাসে থাকা অবস্থায় উপার্জনের সমস্ত অর্থ, সম্পদ তার স্ত্রী নাঈমা আক্তারের কাছে পাঠাতেন। মো: ফয়সাল বিদেশ থেকে আসার পর তার স্ত্রী নাঈমা আক্তার যৌতুক দাবি করে বার বার পিতার বাড়িতে চলে যেতে চাইতেন। মোঃ ফয়াসালের শ্বাশুড়ি রহিমা খাতুনও মেয়ে নাঈমা আক্তারকে যৌতুক নাদিলে নাঈমা আক্তারকে পিতার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিতো।

চলতি বছরের ১ এপ্রিল নাঈমা আক্তার তার স্বামী মো: ফয়সালের বাড়ি থেকে ৭ লক্ষ নগদ টাকা, ৪ লক্ষ টাকা মূল্যের ৫ ভরি স্বর্ণের অলংকার, জমির গুরুত্বপূর্ণ দলিলপত্র নিয়ে পিতার বাড়ি চলে যায়। এরপর পিতার বাড়ি থেকে নাঈমা আক্তারকে নিয়ে আসার জন্য অনেক চেষ্টা করলেও নাঈমা আক্তার তার মা রহিমা খাতুনের প্ররোচনায় শ্বশুরবাড়িতে আর আসেননি।

এবিষয়ে মোঃ ফয়সাল এ বছরের ৫ এপ্রিল কক্সবাজার জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে এসে লিখিতভাবে অবহিত করেন। জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয় বিষয়টি আপোষ মিমাংসার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য উভয় পক্ষকে উপস্থিত হতে নোটিশ দেন। কিন্তু লিগ্যাল এইড অফিসের নোটিশ পেয়েও নাঈমা আক্তার নির্ধারিত দিনে লিগ্যাল এইড অফিসে আসেননি।

এ অবস্থায় মো: ফয়সাল তার স্থানীয় অভিভাবকদের নিয়ে স্ত্রী নাঈমা আক্তারকে পিতার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়িতে ফিরিয়ে আনার জন্য গত ২৮ আগস্ট সকাল ১১ টার দিকে নাঈমা আক্তারের পিতার বাড়িতে যান। নাঈমা আক্তার ও তার মা রহিমা খাতুন ৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দেওয়া ছাড়া নাঈমা আক্তার তার স্বামী মো: ফয়সালের বাড়িতে যাবেনা বলে জানিয়ে দেন। এছাড়া মো: ফয়সালকে গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং অন্যান্যদের চরম অপমানিত করেন। পরে মো: ফয়সাল ও তার অভিবাবকেরা ব্যর্থ হয়ে নাঈমা আক্তারের পিতার বাড়ি থেকে ফিরে আসেন।

নিরুপায় হয়ে মো: ফয়সাল ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় স্ত্রী নাঈমা আক্তার ও শ্বাশুড়ি রহিমা খাতুনকে আসামী এবং ৫ জনকে সাক্ষী করে গত ৩১ আগস্ট টেকনাফ আমলী আদালতে একটি ফৌজদারী দরখাস্ত দায়ের করেন। ফৌজদারী দরখাস্তটি মামলা হিসাবে নিয়ে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসাদ উদ্দিন মোঃ আসিফ আসামীদের প্রতি সমন জারি করেছেন। যার সিআর মামলা নম্বর : ৩৯১/২০২৩ (টেকনাফ)। বিজ্ঞ বিচারকের আদেশ মতে আসামীদের বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন- বেঞ্চ সহকারী মোহাম্মদ শফি।

যৌতুক দাবী করার অভিযোগে স্ত্রী ও শ্বাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার বিষয়ে একজন প্রবীণ ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, স্বামীর কাছ থেকে যৌতুক দাবি করলে স্বামী বিদ্যমান আইনে স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতেই পারে। তবে এটা এ অঞ্চলে খুব একটা চর্চা ছিলোনা। এ অঞ্চলে স্ত্রী’রাই বাদী হয়ে স্বামীদের বিরুদ্ধে যৌতুক আইনে মামলা করে থাকে। তিনি বলেন, অনেকের ধারণা স্ত্রীর যৌতুক দাবি করার অভিযোগে স্বামী মামলা করতে পারেননা। এটা সঠিক নয়। যে আইনে স্ত্রী মামলা করতে পারে, সেই একই আইনে স্বামীও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। তাঁর মতে টেকনাফ আমলী আদালতে দায়ের হওয়া সিআর : ৩৯১/২০২৩ (টেকনাফ) মামলাটি স্ত্রীর যৌতুক দাবি করার অভিযোগে কক্সবাজারে প্রথম মামলা।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে- যদি বিয়ের কোনো এক পক্ষ, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, বিবাহের অন্য কোনো পক্ষের কাছে থেকে কোনো যৌতুক দাবি করেন, তাহলে এ আইনের অধীন তা একটি অপরাধ এবং সেজন্য তিনি অনাধিক ৫ বছর কিন্তু অন্যূন এক বছর কারাদন্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।