এম.এ আজিজ রাসেল:
নির্বাচনী সহিংসতায় স্থগিত হওয়া কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ, উখিয়ার হলদিয়া পালং, সদরের খুরুশকুল ও টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের ৪ কেন্দ্রে উৎসব মুখর পরিবেশে নজিরবিহীন ভোট সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৮টা থেকে এসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে। নির্বাচন ঘিরে জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ ও পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামানের নেতৃত্বে মাঠে ছিল র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা। ছিল ভ্রাম্যমাণ টিম। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়ায় শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল ঘোষিত হয়। এমন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসবমুখর নির্বাচন আগে কখনো দেখেনি মানুষ। এ জন্য জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ, জেলা নির্বাচন অফিস, র্যাব, বিজিবি ও গোয়েন্দা বাহিনীর প্রশংসায় পঞ্চমূখ সকলের।
ভোট গণনা শেষে বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে ৪টি ইউনিয়নের মধ্যে নৌকা প্রতীকের ২জন, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ১ জন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিতরা হলেন, সদর উপজেলার খুরুশকুলে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহজাহান ছিদ্দিকী। তিনি স্থগিত তেতৈয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহণ শেষে ৯৮৬ ভোট পেয়েছে। সেই হিসেবে আগের ৮ হাজার ২১৩ ভোটসহ তিনি সর্বমোট ৮ হাজার ১৯৯ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি মোটর সাইকেল প্রতীকের নুরুল আমিনের আগের ভোট ছিল ৬ হাজার ৫৭৯। এই কেন্দ্রে ৭৮২ ভোটসহ সর্বমোট ভোট পেয়েছেন ৭ হাজার ৩৬১। সেই কেন্দ্রে ৯২০ ভোট পেয়ে মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন ফুটবল প্রতীকের আবু বক্কর ছিদ্দিক ও মহিলা মেম্বার নির্বাচিত হয়েছেন তালগাছ প্রতীকের পারভিন আক্তার।
অপরদিকে উখিয়ার স্থগিত একটি ভোট কেন্দ্রের পূনঃনির্বাচনে সাংবাদিক ইমরুল কায়েস চৌধুরী ঘোড়া প্রতীকে বেসরকারীভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। দিনভর টান টান উত্তেজনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা গুজবের মাঝে মঙ্গলবার উখিয়ার ৩ নং হলদিয়াপালং ইউনিয়নের স্থগিত ৫ নং ওয়ার্ড নলবনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূনঃনির্বাচনে ওই কেন্দ্রে ৩৩০৫ ভোটের মধ্যে ২৬৪৬ ভোট গৃহীত হয়। ঘোষিত ফলাফলে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে সাংবাদিক ইমরুল কায়েস চৌধুরী পেয়েছেন ১৬৯০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম পেয়েছেন ৯৩১ ভোট।
গত ১১ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের উক্ত ভোট কেন্দ্রে বিকেলে ব্যালট বাক্স ছিনতাই হলে ঐ কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করা হয়। ফলে উক্ত কেন্দ্রের কারণে চেয়ারম্যান প্রার্থী, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের ফলাফল স্থগিত হয়ে পড়ে। নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে সরওয়ার বাদশা আপেল প্রতীক নিয়ে ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে জহুরা বেগম মাইক প্রতীক নিয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন বলে উখিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ইরফান আহমেদ জানান।
রাত ৮ টার পরে উক্ত কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার বদরুল আলম কেন্দ্রেই ফলাফল ঘোষণা দেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম, উখিয়া ইউএনও নাজিম উদ্দীন আহমেদসহ পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবি এবং অনান্য পদস্থ কর্মকর্তারা। এছাড়া সমুদ্র বেষ্টিত দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার সদর বড়ঘোপ ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতায় স্থগিত হওয়া একটি কেন্দ্রের পুনঃনির্বাচনে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) ওই ইউনিয়নের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের পিলটকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্টিত হয়। ওই কেন্দ্রে সর্বমোট ২৪৭৯ নারী—পুরুষ ভোটারের মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১১৬১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তার মধ্যে দলীয় প্রার্থী আবুল কালাম (নৌকা) প্রতীক সর্বোচ্চ ১০৬৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে এবং তার নিকটতম প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আ.ন.ম শহীদ উদ্দিন ছোটন (ঘোড়া) প্রতীক ৭০ ভোট পেয়েছে। অপরদিকে সংরক্ষিত আসনে মহিলা সদস্য রওশন আরা (তালগাছ) প্রতীক নিয়ে সর্বোচ্চ ৬৭৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে ও তার নিকটতম প্রার্থী জোসনা আকতার (মাইক) প্রতীক নিয়ে ২৮১ ভোট পেয়েছে।
সাধারণ সদস্যদের মধ্যে সালা উদ্দিন (মোরগ) প্রতীক নিয়ে সর্বোচ্চ ৩৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে ও তার নিকটতম প্রার্থী নজরুল ইসলাম (ফুটবল) প্রতীক নিয়ে ৩৩০ ভোট পেয়েছে। ফলাফল নিশ্চিত করেন স্থগিত কেন্দ্রে অনুষ্টিত নির্বাচনে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার মোঃ শহীদুল্লাহ।
উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বড়ঘোপ ইউনিয়নের পিলটকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় দলীয় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালনের সময় আব্দুল হালিম নামে একজন ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি নিহত হন।
এদিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউপি নিবার্চন চলাকালে ২টি কেন্দ্রের ব্যালট পেপার সংক্রান্ত সমস্যার কারণে ৩নং ওয়ার্ডে ভোট গ্রহণ স্থগিত হয়ে যায়। স্থগিত হওয়া এই কেন্দ্রে কঠোর এবং নিশ্চিদ্র নিরাপত্তায় ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গ্রহণ শেষে ঘোষিত ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী, সাধারণ মেম্বার পদে রশিদ আহমদ এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে জমিলা আক্তার বেসরকারীভাবে নিবার্চিত হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় হোয়াইক্যং ৩নং ওয়ার্ড ঊনছিপ্রাং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং লম্বাবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কঠোর নিরাপত্তায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়। একটানা বিকাল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষে গণনা শুরু হয়। গণনা শেষে ঘোষিত ফলাফলে ঊনছিপ্রাং সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৯০১ ভোটের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে চশমা প্রতীক নিয়ে অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী ১হাজার ৫শ ১৭ ভোট পেয়েছেন। তার নিকটতম নৌকা প্রতীকের আজিজুল হক পান ২শ ৮৮ভোট পেয়েছেন।
সাধারণ মেম্বার পদে টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে রশিদ আহমদ পেয়েছেন ৬শ ৭৩ভোট, তালা প্রতীক নিয়ে শাহ আলম পেয়েছেন মাত্র ৯ ভোট, সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে বই প্রতীক নিয়ে জমিলা আক্তার ৪৭১ ভোট পেয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি কলস প্রতীক নিয়ে মিনারা বেগম ৭শ ৯ ভোট পেয়েছেন। লম্বাবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চশমা প্রতীক নিয়ে অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারী ১হাজার ২২ ভোট, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি নৌকা প্রতীক নিয়ে আজিজুল হক ৩শ ৪৪ ভোট পেয়েছেন।
দুই কেন্দ্রে চমশা প্রতীক নিয়ে আনোয়ারী পেয়েছেন ২৫৩৯ ভোট, নৌকা প্রতীক নিয়ে আজিজুল হক পেয়েছেন ৬শ ৩২ ভোট। উক্ত দুই কেন্দ্রে নুর আহমদ আনোয়ারী ১হাজার ৮শ ৯৭ভোটে এগিয়ে রয়েছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বরের নিবার্চনে ৮টি ওয়ার্ডে নুর আহমদ আনোয়ারী পেয়েছিলেন ৯হাজার ৮শ ২১ ভোট। আজিজুল হক পেয়েছিলেন ৭ হাজার ৪শ ৩৮ ভোট। তখন নুর আহমদ আনোয়ারী ২হাজার ৩শ ৮৩ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। পুরো ইউনিয়নে আনোয়ারী ভোট পেয়েছেন ১২হাজার ৩শ ৬০ ভোট তার নিকট তম প্রতিদ্বন্দি আজিজুল হক পেয়েছেন ৮হাজার ৭০ ভোট। এখন নুর আহমদ আনোয়ারী বেসরকারীভাবে ৪হাজার ২শ ৯০ভোটে চেয়ারম্যান নিবার্চিত হয়েছেন।
লম্বাবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাধারণ মেম্বার পদে টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে রশিদ আহমদ পেয়েছেন ১শ ৭ভোট, তালা প্রতীক নিয়ে শাহ আলম পেয়েছেন ৪শ ৯২ভোট। দুইটি কেন্দ্রে টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে রশিদ আহমদ পেয়েছেন ৭শ ৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি তালা প্রতীকের শাহ আলম পেয়েছেন ৫শ ১ ভোট। বেসরকারীভাবে রশিদ আহমদ ২শ ৭৯ ভোটে মেম্বার নিবার্চিত হয়েছেন।
এদিকে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার পদে বই প্রতীক নিয়ে জমিলা আক্তার ৯শ ৮২ ভোট পেয়েছেন, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কলস প্রতীক নিয়ে মিনারা বেগম ১শ ৮৯ভোট পেয়েছেন। ৩, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে বই প্রতীক নিয়ে জমিলা পেয়েছেন ৩হাজার ৩শ ১৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দি কলস প্রতীক নিয়ে মিনারা বেগম পেয়েছেন ২হাজার ১শ ২১ ভোট। বেসরকারীভাবে জমিলা আক্তার ১হাজার ১শ ৯৫ ভোটের ব্যবধানে সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার নিবার্চিত হয়েছেন।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।