মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম (৭৪০৬১১৯৬৮৩) বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) পদক লাভ করেছেন। মঙ্গলবার ২৭ ফেব্রুয়ারী ঢাকাস্থ রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে জাতীয় পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক পাওয়া অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সাথে এসপি মোঃ মাহফুজুল ইসলাম’কে আনুষ্ঠানিকভাবে বিপিএম পদক পরিয়ে দেন।
“সেবা” ক্যাটাগরীতে এসপি মোঃ মাহফুজুল ইসলামকে অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতাপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এই বিপিএম পদক দেওয়া হয়। মেধাবী ও চৌকস পুলিশ কর্মকর্তা এসপি মোঃ মাহফুজুল ইসলাম এর আগেও একাধিকবার প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পদক লাভ করেছেন।
এসপি মোঃ মাহফুজুল ইসলাম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট একজন সহকারী পুলিশ সুপার পদে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট কক্সবাজার জেলা পুলিশের এসপি পদে যোগদান করে অধ্যাবদি কর্মরত আছেন।
এসপি মোঃ মাহফুজুল ইসলাম ২০২৩ সালে কক্সবাজারে যেসব উল্লেখযোগ্য কাজ সম্পাদন করেছন, নিন্মে সেগুলো বর্ননা করা হলো :
কক্সবাজার শহরে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল যানবাহন চালক ও গাড়ির স্মার্ট ডাটাবেস ‘কক্স-ক্যাব’ এর উদ্যোগ গ্রহনের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরে নিরাপদ ও পর্যটন-বান্ধব স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করেন। এর অংশ হিসাবে কক্সবাজার জেলা ট্রাফিক বিভাগ পর্যটন এলাকায় চলাচলরত সকল যানবাহন ও চালকদের একটি স্মার্ট ডাটাবেস তৈরী করেছে। উক্ত স্মার্ট ডাটাবেসের নামকরণ করা হয়েছে কক্স-ক্যাব। যার ওয়েবসাইট www.coxscab.com
ইতোমধ্যে এ ওয়েবসাইটে ডেডিকেটেড হোস্টিং নিয়ে ওয়েব-বেইজড ডাটাবেস তৈরি করা হয়েছে। ৩৫০০ এর অধিক চালকের নাম, ছবি, মোবাইল নাম্বার, ব্লাড গ্রুপ, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানাসহ তথ্য ইনপুট দেয়া হয়েছে। কক্স-ক্যাব ডাটাবেসে নিবন্ধিত ৩৫০০ চালককে কক্স-ক্যাব এর লোগো সম্বলিত ভেস্ট প্রদান করা হয়েছে। কক্স-ক্যাব ডাটাবেসে নিবন্ধিত চালকদের ভেস্টের সাথে বিশেষ কারিগরি প্রযুক্তিতে তৈরি করা ৫ইঞ্চিx৮ইঞ্চি সাইজের একটি প্লেট প্রদান করা হয়েছে। যার এক পাশে চালকের নাম ও ছবি, অন্য পাশে চালক ও গাড়ির তথ্য সম্বলিত কিউ.আর রয়েছে যা গাড়িতে দৃশ্যমান স্থানে ঝুলানো থাকে।
কক্সবাজারে পর্যটন সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য একটি প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসে “One-Stop Tourist Service” তৈরি করা হয়েছে।
চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত ১০টি ক্লুলেস হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেফতারে নেতৃত্ব দিয়েছেন বিপিএম পদক অর্জনকারী এসপি মোঃ মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম (বার)।
মানবপাচার বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে ১৫৬ জন ভিকটিম উদ্ধার পূর্বক ২৭টি মামলা রুজু এবং মামলা সমূহে ১৬৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করার ফলে সারা বাংলাদেশে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার অভিযানে কক্সবাজার জেলা গ্রুপ “খ” এ প্রথম স্থান অর্জন করেছে।
অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারগুলো হলোঃ-
পিস্তল-০৪টি, এলজি-৪৭টি, একনলা বন্দুক-১৫টি, দুনলা বন্দুক-০১টি, থ্রি-কোর্য়াটার বন্দুক-০২টি, ওয়ানশুটারগান-১৫, পাইপগান-০১টি গুলি-১৮৬৫ রাউন্ড, রাইফেলের গুলি- ১২টি, কার্তুজ-৭৩ রাউন্ড, ভাঙ্গা গুলি-০৩টি, গুলির খোসা-০৬টি, কার্তুজের খোসা-২৮টি, দা-০৮টি, চাকু-০২টি, হাতুড়ি-০১টি, কোদাল-০১টি, অস্ত্র তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি-১৯৩টি, তলোয়ার-০১টি, চাপাতি-০১টি, ছুরি-০৩টি, কিরিচ-০৭টি, রাম দা-১, ম্যাগজিন-০১টি এবং রড-২টি।
মাদক উদ্ধারে সঠিক নির্দেশনা দিয়ে প্রচুর মাদক উদ্ধার করার ফলে সারা বাংলাদেশে মাদক উদ্ধারে কক্সবাজার জেলা গ্রুপ “খ” এ ৩য় স্থান অর্জন করেছে। তারমধ্যে, ২০২৩ সালে এসপি মোঃ মাহফুজুল ইসলাম এর নেতৃত্ব ও দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলায় উদ্ধাকৃত মাদকদ্রব্যসমূহ হলো- গাঁজা/গাঁজার গাছ ৩৭ কেজি ৮১৫ গ্রাম, বিয়ার ১৩৯০.৫০০ লিটার, বিদেশী মদ ৮১৯.৭০০ লিটার, ফেন্সিডিল ২.৫০০ লিটার, দেশী মদ ৮৯৪৩ লিটার।
প্রসঙ্গত, বিশেষ অবদানের জন্য ৪০০ পুলিশ সদস্য এবছর বিপিএম ও পিপিএম পদক পেয়েছেন। বিপিএম সাহসিকতা ও সেবা এবং পিপিএম সাহসিকতা ও সেবা- এই চারটি ক্যাটাগরিতে প্রতিবছর এই পুরস্কার দেওয়া হয়। যারা এ পদকে ভূষিত হন তাদের নামের শেষে বিপিএম-পিপিএম উপাধি যুক্ত হয়। সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ জন পুলিশ সদস্যকে এবার ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল’ (বিপিএম) দেওয়া হয়। এছাড়া ৬০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামলূক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য ৯৫ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ২১০ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী তাদের সেই পদক পরিয়ে দেন। এর আগে জাতীয় পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় জীবন উৎসর্গকারী নয়জনের পরিবারের সদস্যদের হাতে মরণোত্তর বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) তুলে দেন শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট ও পতাকাবাহী দলের প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন সরকারপ্রধান। বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) স্টলও পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।