সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
রোহিঙ্গা রেসপন্সে বিশ্বব্যাংকের ঋণকে প্রত্যাখ্যান করেছে অধিকার-ভিত্তিক সুশীল সমাজ। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সর্বোচ্চ সেবার জন্য স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণের দাবি দিয়েছে তারা।

সোমবার (১১ মার্চ) বিকালে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে “কক্সবাজারে রোহিঙ্গা রেসপন্স: ২০২৪ সালের কৌশল ও অন্তর্ভুক্তিকরণ” শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

কক্সবাজার সিএসও এনজিও ফোরাম (সিসিএনএফ) ও কোস্ট ফাউন্ডেশন আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন রোহিঙ্গা, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদ প্রত্যাবসনে বদ্ধপরিকর, তবে, মিয়ানমারে এই মুহূর্তে ভিন্ন পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, তার আগে পর্যন্ত আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, টেকনাফের জেলে সম্প্রদায় ও ক্যাম্পে আটকে পড়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর দুর্ভোগের ব্যপারে সরকার অবগত রয়েছে।

এতে ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধি ইয়োকো আকাসাকা, ডব্লিউএফপি’র প্রতিনিধি ইমানুয়েলা মাসায়ো, আইএসসিজি’র ডেপুটি লিডার মি. ভেদাসহ তিনটি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও কমিশনারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সিসিএনএফের কো-চেয়ার এবং কোস্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী এবং সিসিএনএফের মেম্বার সেক্রেটারি ও কোস্ট ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় সেমিনারে পৃথক তিনটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

একটি হচ্ছে প্রায় তিন হাজার জেলেদের নিয়ে, যারা মাছ ধরার জন্য মূলত নাফ নদীর উপর নির্ভরশীল ছিলেন কিন্তু সেখানে ২০১৮ সাল থেকে মাছ ধরা নিষিদ্ধ, দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় ১৪ হাজার স্থানীয় সম্প্রদায়ের মানুষ যারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝে বন্দি জীবন যাপন করছেন এবং তৃতীয়টি হচ্ছে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) ২০২৪ বিষয়ে। প্রথম দুইটি গবেষণা সম্পন্ন করেছে কোস্ট ফাউন্ডেশন এবং প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্টের তানজির উদ্দিন রনি এবং জেআরপি নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোস্টের সহকারি পরিচালক শাহিনুর ইসলাম।

মূল প্রবন্ধে দেখানো হয়, উক্ত জেলেদের ৭৭ শতাংশ এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝে আটকে পড়া স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাং জীবন ধারণ করার জন্য বাইরে থেকে কোনো প্রকার সহায়তা পাচ্ছেন না। ক্যাম্পে আটকে পড়া স্থানীয় মানুষেরা জরুরি চিকিৎসা ও সন্তানদের লেখাপড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও ক্যাম্পে প্রবেশ ও বাহিরের ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছেন। তহবিল বিষয়ে বলা হয়, প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য প্রতি মাসে বরাদ্দ হিসেবে তহবিল এসেছে ২৪৬ ডলার, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে তারা ত্রাণ হিসেবে বিভিন্ন সামগ্রী গ্রহণ করছেন মাত্র ৬৯ ডলারের, যা তহবিলের চার ভাগের এক ভাগ। গবেষণায় দেখানো হয়েছে, এই খরচ ব্যবস্থাপনা ব্যয়, কর্মীদের বেতন ও শিক্ষা বাবদ ব্যয় ব্যতিরেকে। গতবছর চাহিদার ৬৫ শতাংশ তহবিল জোগার হলেও এবছর তা মাত্র ৫০ শতাংশ।

শাহিনুর ইসলাম তার উপস্থাপনায় স্বচ্ছতার দাবি নিয়ে বলেন, বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের জন্য অনুদান প্রদান করলেও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বাবদে ঋণ প্রদান করছে কেন?
ইউএনএইচসিআরের ইয়োকো আকাসাকা বলেন, তারা স্থান-ভিত্তিক এপ্রোচ নিয়ে কাজ করছেন। ডাব্লিউএফপি’র প্রতিনিধি ইমানুয়েলা এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের আলোচনা আরো বড় পরিসরের অংশগ্রহনে হওয়া উচিত। আইএসসিজি’র মি. ভেদা বলেন, এই সেমিনারে উপস্থাপিত বিষয়বস্তুর মধ্যে বেশকিছু দিক রয়েছে যা নিয়ে কাজের সুযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মওলানা নূর আহমেদ আনোয়ারি, রাশেদ মোহাম্মদ আলী এবং নারী সদস্য মর্জিনা আক্তার এবং খুরশিদা বেগমও কথা বলেন।
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মুজিবুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ না করে ভূউপরিস্থিত পানি শোধন করে সরবরাহ করা উচিত।

তিনি ক্যাম্পে অবিলম্বে সকল প্রকার প্লাস্টিক ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান। একজন এনজিও নেতা জনাব আনিসুল রোহিঙ্গা রেসপন্সে ব্যবহৃত পুল ফান্ডের পূর্ণ স্বচ্ছতা দাবি করেন।

এপিবিএনের এসিস্ট্যান্ট সুপারিন্টেন্ডেন্ট অনীশ ক্যাম্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার দাবি জানান।

সেমিনারের সভাপতিত্বকালে রোহিঙ্গা, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয় জনগোষ্ঠী দশ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিতে গিয়ে বিশাল ত্যাগের নজির দেখিয়েছে।