নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাইক্ষ্যংছড়ির পাশ্ববর্তী উপজেলা রামুর কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালী মহল। ইউনিয়নের ছোট জাংছড়ি, বড় জাংছড়ি ও গর্জ্জয় খালে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হলেও রহস্যজনক কারণে নিরব রয়েছে প্রশাসন।
কচ্ছপিয়া নাগরিক কমিটির নেতা কামাল উদ্দিনসহ পরিবেশবাদীরা জানান, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রাচীনকাল থেকেই বালুর ব্যবহার প্রচলিত। পানির পর বালুই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নির্মাণসামগ্রী হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া ইউনিয়নের অনেক স্থানে বালু থাকলেও তা নির্মাণসামগ্রী হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। শুধু ছোট জাংছড়ি,বড় জাংছড়ি ও গর্জ্জয় খালের তলদেশের বালু উচ্চমানের নির্মাণসামগ্রী হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবছর কক্সবাজারের রামু উপজেলা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় প্রায় হাজার হাজার টন বালুর চাহিদা থাকে। এ চাহিদা মেটাতে
কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দক্ষিণ মৌলভীর কাটা,ডাক্তার কাটা,বড় জাংছড়ি, গর্জনিয়া ইউনিয়নের থোয়াইংঙ্গার কাটা,রাজ ঘাটসহ ৮ স্থান থেকে প্রতিদিন নির্বিকারে অবৈধ বালু উত্তোলনের চিত্র দেখা গেছে।
এসব স্থানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চালাচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র। তারা বালুমহল নীতিমালার তোয়াক্কা না করে উল্লেখিত স্থান থেকে দিন রাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে।
কচ্ছপিয়ার বালুদুস্য জহির উদ্দিন, কবির আহমদসহ দুই ইউপিতে ১০ সদস্যের ৪টি সিন্ডিকেট। এছাড়াও এ দুই ইউনিয়নের আরো কয়েকটি স্থান থেকে বালু উত্তোলন করছেন ঐ সিন্ডিকেট এর সদস্যরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ বড় জাংছড়ি ও ছোট জাংছড়ি এবং গর্জ্জয় নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্বিকারে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করলেও রহস্য জনক করণে নিরব ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রশাসনকে অনেক বার অবগত করলেও কোন খবর নেই প্রশাসনের। বরাবরের মত প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে। এতে নদীর পানি প্রবাহ কমে যাচ্ছে। অপরদিকে সরকার লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি জমি ও বসতভিটাও পড়েছে হুমকির মুখে। পাশপাশি মেশিনের বিকট শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে আশপাশের মানুষেরা। অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা ক্ষমতাসীন ব্যক্তি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ২ ইউনিয়নের বেশ কিছু স্থান থেকে বালু উত্তোলন করছে। এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছেনা। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ওইসব স্থানে মিনি ট্রাক, ট্রাক্টরের সারিবদ্ধভাবে আনা-নেয়ার লম্বা লাইন দেখে যে কারো মনে হবে যেন অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে।
আর যত্রতত্র ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে গ্রামীণ রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে একদিকে যেমন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে অন্যদিকে ধুলার স্তুপ পড়ে গেছে। এসব ধুলার কারণে বাসা-বাড়িতে থাকার অযোগ্য পরিবেশ হয়ে পড়েছে। অনেকেই এসব ধুলা বালির মধ্যে চলাচল করায় নানা ধরনের শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, সড়ক দিয়ে বে-পরোয়া ভাবে ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় দুর্ঘটনাও ঘটছে। পাশাপাশি এসব এলাকার চলাচলের রাস্তাঘাটও নষ্ট হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায় বালুদস্যুরা ক্ষমতাসীন লোকের সাথে আতাঁত করে নির্বিচারে বালু ব্যবসা করে আসছে। দেশে বালু উত্তোলনজনিত নৈরাজ্য পরিবেশগত সংঘাতের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই অবৈধ বালু উত্তোলন একটি পরিবেশগত সংঘাত। সূত্রটি আরো জানান, উত্তোলন করা বালু কক্সবাজারের রামু উপজেলা ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাড়ি-ঘর,রাস্তা ঘাট নির্মানের জন্য চড়া দামে বিক্রি করছে।
স্থানীয় বালু ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ জানান গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়ার বালুর মহল নিয়ে উচ্চ আদালতে তিনি মামলা করেছেন উক্ত মামলা এখনো চলমান রয়েছে। এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যম্ত বালু উত্তোলন করা যাবেনা এটা আদালতের নির্দেশ। কিছু প্রভাবশালী বালুদুস্য উচ্চ আদালতের আইনকে তোয়াক্কা না করে এমপি সাহেব, ডিসি সাহেব, ইউএনও সাহেব এর নাম ভাঙ্গিয়ে দিন রাত বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে।
বালুদুস্য জহির উদ্দিন ও কবির আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন,সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে বালু উত্তোলন করছি। লেখালেখি করে কোন লাভ নেই। এ টাকার ভাগ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকেও দেওয়া হয়।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে গর্জনিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার মোঃ ছৈয়দ নুর জানান,ইউএনও স্যারের নির্দেশে ওইসব স্থানে বালু উত্তোলন বন্ধে আমি অনেকবার ঘটনাস্থলে গিয়েও কোন কাজ হয়নি। তবে বিষয়টি স্থানীয় ফাঁড়ি পুলিশকে জানানো হয়েছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও প্রণয় চাকমাকে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার জানানো হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, গর্জনিয়া-কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের বালু উত্তোলন এটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এ ব্যাপারে আমার জানা আছে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বালুর বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ থেকে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো.মামুনুর রশিদ এর মুঠোফোনে কথা বলতে চাইলে তিনি জরুরী মিটিং থাকয় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।