টেকনাফ প্রতিনিধি:
টেকনাফ উপজেলার প্রথম এমবিবিএস, চমেকের সাবেক অধ্যক্ষ ও সিএসসিআর হাসপাতালের সাবেক এমডি, গুহাফার প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট হৃদরোগ মরহুম ডা. জামাল আহমদের স্মরণ সভা দিনব্যাপী কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে।
১০মে (শুক্রবার) ২০২৪ইং সকাল ১০টায় হ্নীলা গুহাফা মিলনায়তনে মরহুমের স্মরণ সভা উপলক্ষ্যে বিশেষ ডায়াবেটিস ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এতে বিভিন্ন এলাকা হতে আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। বাদে জুমা মরহুম ডাঃ জামাল আহমদের কবর জিয়ারতের পর বিকাল ৩টায় টেকনাফের হ্নীলা গুলফরাজ-হাশেম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে গুহাফার প্রতিষ্ঠাতা প্রখ্যাত চিকিৎসক মরহুম ডাঃ জামাল আহমদ এর বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিয়ে স্মরণ সভা ও ২০২৩সালে গুহাফা বৃত্তি প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান গুহাফা পরিচালনা কমিটির সহসভাপতি কায়সার উদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় এবং সহসভাপতি ও সাবেক মেম্বার ছালেহ আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত স্মরণ সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। এতে মরহুম ডাঃ জামাল আহমদের জীবনী, গ্রামের চিকিৎসা সেবা বঞ্চিত মানুষের জন্য গ্রহণকৃত উদ্যোগ এবং ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মরহুমের একমাত্র সন্তান ও গুহাফা পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সালাহ উদ্দিন জামাল।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার-৩ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৪ এর সাবেক সাংসদ আলহাজ¦ আব্দুর রহমান বদি, চট্টগ্রাম ইন্টার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ আমির হোসেন, চট্টগ্রামের সাবেক বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ খুরশিদ জামিল চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও কার্ডিলোজিষ্ট নাসিম ভূঁইয়া, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চিকিৎসক খালেকুজ্জামান বাচ্চু, চট্টগ্রাম সার্জিস্কোপ হাসপাতালের বিশিষ্ট ইউরোলজিস্ট ডাঃ আতা মোহাম্মদ মুজাসসিম, চট্টগ্রামস্থ টেকনাফ সমিতির সভাপতি ও পুবালী ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক ডিএমডি মোক্তার আহমদ, চর্ম ও যৌনরোগ বিশেষজ্ঞ লেঃ কর্ণেল ডাঃ মাহবুব কামাল, ওসি রফিক উল্লাহ, মরহুমের বেয়াই আক্তার হোসাইন, চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারের বিশিষ্ট অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহ পরওয়াজ আসিফ খান, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এইচএম ইউনুছ বাঙ্গালী, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব মোরশেদ।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মৌলানা আবছার উদ্দিন কাশেমী, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বদরুল ইসলাম মিল্কী, মিজানুর রহমান, হ্নীলা ষ্টেশন জামে মসজিদের খতিব ক্বারী ফরিদুল আলম, সাাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা রফিক উদ্দিন, হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম, গুহাফা পরিচালনা কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও মরহুমের কন্যা উম্মে হুমাইরা, সদস্য মাষ্টার কামাল আহমদ, কফিল আহমদ, মাষ্টার শাহ আলম, মৌলভী শাকের আহমদ, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, মৌলানা এসএম সাইফুল্লাহ, মমতাজুল ইসলাম মনু, আরিফ বাপ্পী, আয়াজ উদ্দিন, সাবেক মেম্বার আলী আহমদসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।
শোক সভায় বক্তারা মরহুম ডাঃ জামাল আহমদের জন্ম, শিক্ষা ও পেশাগত জীবনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও মানবিকতার স্মৃতিচারণ করেন। গ্রামের অবহেলিত সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা এবং শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির মহতি উদ্যোগ নিয়ে তিনি ১৯৯৮সালে টেকনাফের হ্নীলা ফুলের ডেইলে গুলফরাজ-হাশেম ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। সাধারণ মানুষ এই প্রতিষ্ঠানের সুফল ভোগ করতে শুরু করেছে। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। মহান আল্লাহর ডাকে পর পারে পাড়ি জমিয়েছেন। তাঁর এই মহতি উদ্যোগ ধরে রাখার জন্য অত্র উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনপ্রতিনিধি, দানবীরসহ সর্বস্তরের মানুষকে আন্তরিকতার সাথে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়।
অনুষ্ঠান শেষে ২০২৩সালে আন্তঃউপজেলা গুহাফা বৃত্তি পরীক্ষা ৫জন ট্যালেন্টপুলসহ বৃত্তি প্রাপ্ত ৫৬জন এবং কম্পিউটার কোর্সে উত্তীর্ণ ৮১জন ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পুরস্কার, সনদ ও বিশেষ সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য,ডাঃ জামাল আহমদ ১৯৫৬সালের ১৮ই নভেম্বর কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা আবুল হাশেম ছিলেন বিশিষ্ট আলেম, ব্যবসায়ী এবং হ্নীলা জামেয়া দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসার ১ম মুহতামিম। তিনি ছিলেন একজন আধুনিক মনষ্ক বিদ্যোৎসাহী সজ্জন ব্যক্তি। মাতা গুলফরাজ আরা বেগম শুধু গৃহিনীর মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে টেকনাফ উপজেলার প্রথম চিকিৎসক ডাঃ জামাল আহমদকে সমাজ হিতৈষী হওয়ার সুশিক্ষা দিয়ে গেছেন। ডাঃ জামাল আহমদ টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, উত্তর হাটহাজারীস্থ নাজিরহাট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (১৮তম ব্যাচ) হতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি চিকিৎসক হিসেবে ভারত, মিশর, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট, চীন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াতে চিকিৎসা বিজ্ঞান ও হৃদরোগ বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালায় অংশ-গ্রহণ করেছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনীজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার পর ২০২৪ সালের ১৫এপ্রিল রাত ৩টায় ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন।