মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

পবিত্র ঈদুল আজহার মুসল্লীদের বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান কর্তৃপক্ষ। এজন্য প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে আগামী সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহার জামাত হবে ২ টি। প্রথম জামাত হবে সকাল সাড়ে ৭টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করবেন কক্সবাজার ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদের খতিব ও কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী। দ্বিতীয় জামাত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করবেন কক্সবাজার ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আবদুল কাইয়ুম। এ বছরই সর্বপ্রথম কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহার পর পর ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে ঈদুল ফিতরে ২টি জামাত হলেও ঈদুল আজহায় জামাত হয়েছে একটি।

গত ৯ জুন কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে ঈদুল আজহা উদযাপন বিষয়ক এক প্রস্তুতি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

কক্সবাজার পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে জেলার প্রধান ঈদুল আজহার জামাতের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সম্মানিত মুসল্লীরা সাবলীল ও সুন্দরভাবে পরিচ্ছন্ন ও উৎসবমুখর পরিবেশে যাতে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করতে পারেন সেজন্য ২টি জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি জামাতে ৮ হাজারের বেশী মুসল্লী নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে প্যান্ডেলে ত্রিপল লাগানো সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি হলে ময়দান থেকে বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ৫ টি গেইট দিয়ে মুসল্লীরা প্রবেশ করতে পারবেন। ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার জামাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষনিক নজরদারিতে থাকবেন। কোন মুসল্লী অসুস্থ হলে যাতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায়, সেজন্য মেডিকেল টিম প্রস্তুত থাকবে। স্টেডিয়াম, হাসপাতাল সড়ক ও জেলা পরিষদ মোড়ে আর্চওয়ে অর্থাৎ নিরাপত্তা গেইট বসানো হবে। কক্সবাজার জেলা পুলিশের উদ্যোগে ২ স্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, র‍্যাব-১৫ এর চৌকস একটি টিমও সমন্বিত নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। সাধারণ পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও দায়িত্ব পালন করবে।

কক্সবাজার পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ময়দানে মুসল্লীদের জন্য অজুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যাপ্ত সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধিক তাপমাত্রার কথা চিন্তা করে প্যান্ডেলে ১৫০ টির বেশি সিলিং ফ্যান লাগানো হয়েছে। তাছাড়া ২০টি স্ট্যান্ড ফ্যান ও ১০টি এয়ারকুলারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে পর্যাপ্ত লাইট। রং দিয়ে সাজানো হয়েছে ময়দানের মিম্বর। মাইক ও সাউন্ড বক্স লাগানো হয়েছে পুরো প্যান্ডেল জুড়ে। বর্নিল সাজে সাজানো হয়েছে পুরো ময়দান। ৫টি গেইট থেকে মুসল্লীরা ময়দানে প্রবেশের সময় প্রত্যেককে এক বোতল আতর, ৫০০ মি:লি: মিনারেল পানি এবং টিস্যু উপহার দেওয়া হবে। ময়দানে মনিটরিং সেল সার্বক্ষনিক কাজ করবে। প্রয়োজনে জরুরি সেবা দিতে ফায়ার সার্ভিসকে এলার্ট রাখা হয়েছে।

ঈদগাহ ময়দানে প্যান্ডেল নির্মাণ ও অন্যান্য কাজের দায়িত্ব প্রাপ্ত এস.এম ডেকোরেটর্স এর সত্বাধিকারী কমল দাশ সাধন জানান, ১৮-২০ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন বিশাল প্যান্ডেলের আয়তন প্রায় ৬০ হাজার বর্গফুট। প্যান্ডেল নির্মাণ সহ আনুষঙ্গিক কাজ ইতিমধ্যে শতকরা প্রায় ৯৮ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ময়দানে শুধু আংশিক কার্পেট বিছানোর কাজ বাকী রয়েছে। রোববার (১৬ জুন) বিকেলের মধ্যেই অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হবে বলে কমল দাশ সাধন জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে শনিবার সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, অর্ধ শতাধিক বিভিন্ন ক্যাটাগরির শ্রমিক, টেকনিশিয়ান প্যান্ডেলের শেষদিকের কাজ গুলো সম্পন্ন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ময়দানের পাকা অংশ ব্যতীত কাঁচা অংশ মিনি রোড রোলার দিয়ে সমতল করা হয়েছে।

কক্সবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে সার্বক্ষনিক নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম তারিকুল আলম, জেলা পুলিশের একাধিক টিম, র‍্যাব-১৫ এর একটি টিম, কাউন্সিলর হেলাল উদ্দিন কবির, দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের প্রস্তুতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনকালে তাঁরা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার জামাত এর সার্বিক প্রস্ততি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

এদিকে, ঈদুল আজহা উদযাপন বিষয়ক প্রস্তুতি সভায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো: ইয়ামিন হোসেনকে আহবায়ক করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট ঈদুল আজহার জামাত সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, কক্সবাজার পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখার সহকারী কমিশনার, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক, জেলা তথ্য অফিসার, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিনিধি, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা: মোঃ মাহবুবুর রহমান, জেলা ইমাম সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক। ব্যবস্থাপনা কমিটি কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিতব্য ঈদুল আজহার জামাতের সার্বিক প্রস্তুতি মনিটরিং করছেন বলে জানিয়েছেন।

কক্সবাজার ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার প্রথম জামাতের জন্য নির্ধারিত ইমাম মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী বলেছেন, ঈদুল আজহার উদ্দ্যেশ্য, ঈদুল আজহায় ত্যাগের ইতিহাস, তাৎপর্য ও গুরুত্ব এবং ইতিহাসের আলোকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের করণীয় বিষয়ে তিনি খুতবা প্রদানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামায়াতের বিগত ৩৩ বছরের খতিব আল্লামা মাহমুদুল হক পবিত্র হজ্ব পালন করতে বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন।

ঈদুল আজহা’র প্রথম জামাতের ইমাম মাওলানা সোলাইমান কাসেমী’র জীবনী :

মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ১৯৯১ সালে প্রধান ইমাম হিসাবে যোগদান করে অদ্যাবধি এই দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদের নিয়মিত খতিব। কক্সবাজার শহরের সবচেয়ে বড় কওমি মাদ্রাসা পাহাড়তলী রহমানিয়া মাদ্রাসার পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন সফলভাবে। তিনি কক্সবাজার জেলা ইমাম পরিষদের সভাপতি।

মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী পটিয়া আল জামেয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ তাহফিজুল কোরআন সংস্থার প্রধান বিচারক ও কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির একজন নির্বাহী সদস্য। তিনি হুফফাজুল কুৱআন ফাউন্ডেশনের কক্সবাজার জেলা সভাপতি। মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তর দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পটিয়া আল জামেয়া ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম থেকে পবিত্র কোরআন হেফজ ও জামাতে পঞ্জুম পর্যন্ত শিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে দক্ষিণ এশিয়ার বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভারতের জামেয়া দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে প্রথম শ্রেণীতে (মমতাজ) কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রী অর্জন করেন।

অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভা সম্পন্ন মুফতি মাওলানা সোলাইমান কাসেমী একজন গুনী, হক্কানি, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন হিসাবে সবার কাছে সুপরিচিত। কক্সবাজার অঞ্চলে দ্বীনি শিক্ষার প্রসার ও প্রচারে, আলেমদের অধিকার আদায়ে, হক্কানী আলেম ওলামাদের সুসংগঠিত করতে এবং মাসালা মাসায়েলের মাধ্যমে মুসলমান নাগরিকদের দ্বীনের সঠিক পথে পরিচালিত করতে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা সবার কাছে প্রশংসনীয়।