সংবাদ বিজ্ঞপ্তি:
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দাবি এবার মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কক্সবাজার জেলাবাসীর স্বার্থ রক্ষার সংগঠন ‘আমরা কক্সবাজার কক্সবাজারবাসী’। দাবি বাস্তবায়নে লাগাতার কর্মসূচী দেয়ারও কথা জানিয়েছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারই অংশ হিসেবে আগামী মঙ্গলবার উখিয়ায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার(০৪ জানুয়ারি) দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সংম্মেলনের এসব ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ। এতে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলী, সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দীন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মহসীন শেখ।

এতে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের জেলা শাখার সহ সভাপতি যথাক্রমে- কমরেড সমীর পাল, কামাল উদ্দিন রহমান পিয়ারু, ফাতেমা আনকিস ডেইজি, নুরুল আজিম কনক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফ উদ্দিন ও মুজিবুল হক, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মা টিনটিন রাখাইন, শহর শাখার সভাপতি সফিনা আজিম ও সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন, সংগঠক হাবিবুর রহমান প্রমূখ।

লিখিত বক্তব্যে আমরা কক্সবাজারবাসী সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন বলেন, দেশী-বিদেশী রাষ্ট্রের অনুরোধ এবং মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেন। এরপর শুরুতেই ওসব রোহিঙ্গারা প্রায় ৭ হাজার একর বনভূমি ও বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর আবাস্থল ধ্বংস করে। যা এ অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র মারাতœক হুমকীর সম্মূখিন হয়ে পড়েছে।

রোহিঙ্গাদের অপরাধ চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়ার পর থেকে বিশ্বের পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারকে অপরাধের স্বর্গরাজ্য হিসেবে গড়ে তুলে। তারা ক্যাম্পে অস্ত্র তৈরীর কারখানাও গড়ে তুলেছে। এসব অবৈধ অস্ত্র বিভিন্ন স্থানে সরবারহ সহ নানাবিধ অপরাধ কর্মকান্ডের জন্ম দিচ্ছে। তারা স্থানীয় ও নিজেদের লোকদের হত্যা, ধর্ষণ, স্থানীয়দের অপহরণ পূর্বক মুক্তিপণ আদায়, ডাকাতী, ছিনতাই, মানবপাচার, ইয়াবা সহ ভয়ংকর মাদক পাচার এবং স্থানীয়দের ঘর-বাড়িতে লুটপাট ও দখল ছাড়াও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অপরাধ কর্মকান্ড সৃষ্টি করছে। সর্বোপরী রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো যেনো মাদক ও অস্ত্রের নিরাপদ স্থানে পরিণত হয়েছে। ওখান থেকেই কক্সবাজার জেলা সহ সারাদেশে মাদক ও অস্ত্র পাচার করছে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। অভিযোগ রয়েছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছাড়াও দখল-বেদখল ও হত্যাকান্ডে ভাড়াটিয়া হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ইতোমধ্যে বহুবার অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে নানা ধরণের মাদক ও দেশীবিদেশী অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

দেশের নিরাপত্তা ইস্যু তুলে ধরে বলা হয়, রোহিঙ্গারা ডাটাবেজ এর আওতায় না থাকা এবং এ অঞ্চলের স্থানীয় মানুষের সঙ্গে ভাষাগত মিল থাকার সুযোগে তারা প্রায়-প্রতিদিনই রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে অবাধে বিচরণ করছে কক্সবাজারসহ সারাদেশের আনাচে-কানাচে। তারা এখানকার শ্রমবাজার দখলসহ বিভিন্ন স্থানে জমি ক্রয় করে গড়ে তুলছে স্থাপনা। একইভাবে কৌশলে নাগরিকত্ব লাভ করে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও জাতীয়তা সনদপত্র সংগ্রহ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিয়ে সেখানেও অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করছে। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এছাড়াও স্থানীয়দের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বংশ বিস্তার করছে। শুধু তাই নয়, তারা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে আশ্রয় লাভের পর থেকে কক্সবাজার থেকে ফেনী জেলা পর্যন্ত তাদের নিজেদের ভূখন্ড দাবি করে প্রথম থেকেই দেশি-বিদেশী এনজিওদের মদদে বাংলাদেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অত্যান্ত উদ্বিগ্নে সাথে লক্ষ্য করছি রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন ‘আরশা ও আল-ইয়াকিন” তাদের নিজস্ব মুদ্রা চালু করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কক্সবাজারবাসীকে ফিলিস্তিনের মতোই পরিণতি ভোগ করতে হবে। দেশি-বিদেশি এনজিওগুলো নিজেদের স্বার্থে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ঠেকানোসহ সকল অপরাধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মদদ দিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সর্বোপরী দেশি-বিদেশি এনজিওর ষড়যন্ত্রের কারণে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বহুমুখি অপরাধ কর্মকান্ডের কাছে স্থানীয়রা জিম্মি ও আতংকিত হয়ে পড়েছে। ইতোপূর্বে বিশ্ব ব্যাংক রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে প্রস্তাব দেয়। যা বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করে।

আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্বের পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার রোহিঙ্গামুক্ত ও স্থানীয়দের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে অবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না হলে রোহিঙ্গাদের দ্বারা সংগঠিত দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র ও ভয়ংকর অপরাধের দায়ভার সরকারকেই বহণ করতে হবে।