জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়:
সরকার বিরোধী আইনজীবীদের নতুন জোট ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্টের আইনজীবী সমাবেশে বক্তারা বলেন,দেশে এখন আইনের শাসন নেই। তাই আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে আইনজীবীদের রাজপথে থাকতে হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীরা ঘরে ফিরবে না।
আজ ২৫ জুলাই(২০২৩) মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ইউনাইটেড লইয়ার্স ফ্রন্ট এর আহ্বায়ক সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা এডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজলের সঞ্চালনায় “গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থার দাবিতে আয়োজিত এক আইনজীবী সমাবেশে এ কথা বলেন বক্তারা।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর , জাসদের সভাপতি আ স ম আবদুর রব,ডাকসুর ২ বারের সাবেক ভিপি এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না,বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর ( অব:)সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, সাবেক এমপি ,সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ,ডাক্তার এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী,বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেনঃ
“আমরা সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হলে আদালতের কাছে শরণাপন্ন হই। কিন্তু এই সরকার বিচার বিভাগ ধ্বংস করে দিয়েছে।আজকে চূড়ান্ত যুগসন্ধিক্ষণে সরকার জনগণ কে বোকা বানিয়ে একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। জনতার শক্তির কাছে কোন অস্ত্র কাজ করে না। মানুষ শক্তি ও সাহস দিয়ে এই সরকার কে মোকাবেলা করছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কে উদ্দেশ্য করে, ওবায়দুল কাদের নতুন করে ষড়যন্ত্র করছে।জনগণের উপর কোনো অস্ত্র ব্যবহার করলে তার দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে। তাদের ২৪ তারিখের সমাবেশ( ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশ) ২৭ তারিখে পরিবর্তন করেছে।
বদিউল আলম মজুমদার কে হয়রানি করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন,”জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজা ১০ মাস ধরে জেলে আটক।তার মুক্তির দাবিতে বদিউল আলম মজুমদার বিবৃতি দেওয়ার কারণে এখন তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি আরো দুইবার থাকার কথা বলেছিলেন সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংশোধন কমিটি। কিন্তু সরকার তা আমলে নেয়নি। নেত্রকোনার উপনির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোন দলের কেউ প্রার্থী হয় নি। আওয়ামী লীগের প্রতি কোন আস্থা- বিশ্বাস নেই বলে কেউ অংশগ্রহণ করেন নি।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,দেশে এখন ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছে। অথচ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিদেশে। উচ্চ আদালতের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, লক্ষ্মীপুরে কৃষকদলের কর্মী সজীব কে হত্যার পর উল্টো সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীকে ১ নাম্বার আসামি করে মামলা করা হয়েছে। উচ্চ আদালত এ্যানীকে জামিন দেয় নি।২৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন। আদালত কি ২৭ তারিখের দিকে চেয়ে আছে?
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন,”আমরা স্যাংকশন নিয়ে কথা বলতে চাই না।নির্বাচন কমিশন বসে বসে ডুগডুগি বাজায় । তাই তাদের কে বিদায় দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।দেশ ও দেশমাতৃকার জন্য আরো একটা যুদ্ধ করতে হবে”।
ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং সাবেক মন্ত্রী আ স ম আবদুর রব বলেন, ” আমাদের সংগ্রাম কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। আমাদের সংগ্রাম সিস্টেম এর বিরুদ্ধে।
স্বাধীনতার পর ৫২ বছর চলে গেল। একটি নির্বাচন ব্যবস্থা গড়ে উঠে নি। এ সমাবেশ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
আওয়ামী লীগ এখন বিএনপির কাছ থেকে আন্দোলন শিখছে: মান্না
ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন,
“বাতাস বদলেছে এবং ২৭ তারিখের পর আরো বদলাবে। আওয়ামী লীগ বিএনপির কাছ থেকে আন্দোলন শিখতেছে। বিএনপি’র তারুণ্যের সমাবেশ দেখে আওয়ামী লীগ এখন “উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ” করতে যাচ্ছে। এতদিন শুনতাম আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপির আন্দোলন শিখা উচিত। এখন দেখছি আওয়ামী লীগ বিএনপি’র কাছ থেকে আন্দোলন শিখছে।
তিনি আরো বলেন, আমি ক্ষমতার জন্য লড়াই করছি না। অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করছি।
তিনি আইনজীবীদের কে রুশ বিপ্লবের পর লেলিন কর্তৃক ইঞ্জিনিয়ারদের এক সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, “দেশে এখন আইনের শাসন নেই। আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে রাজপথে থাকবে আইনজীবীরা।এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীরা ঘরে ফিরে যাবে না”।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল ( অব:) সৈয়দ ইব্রাহিম সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন “২০১৩ সালে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করে কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন? এরশাদ তো সবকিছু দেশবাসীকে বলে গেছেন।
আইনজীবীদের ঢল:
আইনজীবী সমাবেশে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার আইনজীবী অংশগ্রহণ করেন। বিএনপির বাইরে জামায়াত,গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য ও জাসদ সমর্থিত আইনজীবীরা অংশগ্রহণ করেছেন।ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা অভিযোগ করেন ,”এ বছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন,ঢাকা বারের নির্বাচন এবং গাজীপুর বারের নির্বাচন সহ দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট ডাকাতি করে আইনজীবীদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের আইনজীবীরা। ঢাকা বারের নির্বাচনে ধারাবাহিক ৩ বার , গাজীপুর বারের নির্বাচনে ১ বার,
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ২০২২ সালে সাধারণ সম্পাদক পদে এবং ২০২৩ সালে সবকটি পদে কেড়ে নেয় আওয়ামী লীগপন্থি আইনজীবীরা। এ কারণে আইনজীবীরা সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ।তারই প্রতিফলন আজকের এই সমাবেশ।
এসি বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ:
বিকেলে সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ ভেন্যুর রুমের এসি বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন আইনজীবীরা। চট্টগ্রাম থেকে আগত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট কেএম সাইফুল ইসলাম জানান,”সমাবেশ চলাকালে হঠাৎ করে এসি বন্ধ করে দেওয়ার ফলে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আইনজীবীদের একটি অংশ বের হয়ে বাইরে অবস্থান করতে বাধ্য হয়”।
আরো খবর
উখিয়ায় ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যু, কথিত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
একাত্তরের চেতনাকে ধারণ ও লালন করেই সামনে অগ্রসর হওয়া সম্ভব– ডক্টর জিয়া রহমান
কক্সবাজারের আরো খবর পেতে যুক্ত থাকুন CoxsbazarNEWS.com এর সাথে।