জাগো নিউজ: দ্বন্দ্বের শুরু ঠিক কবে, তা সঠিকভাবে জানা নেই কারও। তবে বারবার ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনায় আসেন তারা। এসব অবস্থান কখনো রহস্য বাড়ায়, কখনো হাসির খোরাক জোগায় রাজনৈতিক অঙ্গনে। সর্বশেষ দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব সামনে আসে গত ১৮ নভেম্বর, নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দেওয়া নিয়ে। সেদিন ইসিতে চিঠি দিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য প্রার্থীরা। অন্যদিকে জিএম কাদেরের পক্ষে দলের মহাসচিব চিঠি দিয়ে জানান, জাতীয় পার্টির ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দ করবেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, এমপি।
দেবর-ভাবির এ দ্বৈরথ চলছে এখনো। নির্বাচন কমিশনে দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা দিতে হবে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে। তারই আলোকে ২০ নভেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিতরণ শুরু করে জাতীয় পার্টি। চার দিনব্যাপী মনোনয়ন ফরম বিতরণ শেষ হয় ২৩ নভেম্বর। এ চারদিনে দলটির মনোনয়ন ফরম নেন ১ হাজার ৭৩৭ জন। তবে তাদের মধ্যে ছিলেন না রওশন এরশাদ ও ছেলে সাদ এরশাদ। ছিলেন না দলের বহিষ্কৃত প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বা রওশনপন্থি অন্য নেতারা।
শুক্রবার বিকেলে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। রওশন এরশাদের মনোনয়ন নেওয়া না নেওয়া নিয়ে তিনি বলেন, বেগম রওশন এরশাদের জন্য কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই, তিনি যখন বলবেন তখনই মনোনয়ন ফরম দেওয়া হবে। বেগম রওশন এরশাদ চাইলে মনোনয়ন ফরম তার বাসায় পৌঁছে দেবো। তিনি আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র।
রওশন এরশাদের জন্য কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই, তিনি যখন বলবেন তখনই মনোনয়ন ফরম দেওয়া হবে। বেগম রওশন এরশাদ চাইলে মনোনয়ন ফরম তার বাসায় পৌঁছে দেবো। তিনি আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র।
শুক্রবার বিকেলে একই কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত রওশনপন্থি কেউ মনোনয়ন নেয়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সময় শেষ হলেও রওশন এরশাদ ও সাদ এরশাদ যে কোনো সময় দলের মনোনয়ন ফরম নিতে পারবেন।
শনিবার খবর আসে, দলের মনোনয়ন ফরম চেয়েছেন রওশন এরশাদ। মহাসচিবকে ফোন করে তিনি তিনটি মনোনয়ন ফরম চেয়েছেন। একটি তার নিজের জন্য, আরেকটি ছেলে সাদ এরশাদের জন্য। অন্যটি ময়মনসিংহ বিভাগের জাপা নেতা ডা. কে আর ইসলামের জন্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শনিবার চুন্নু বলেন, আমাদের সম্মানিত প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ গতকালও আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছিলেন। তিনি তার পুত্র সাদ এরশাদ এবং ডা. কে আর ইসলামের জন্য তিনটি মনোনয়ন ফরম চেয়েছেন। আজ তার (বেগম রওশন এরশাদ) লোক এলে আমরা মনোনয়ন ফরম দেবো। বেগম রওশন এরশাদ বললে, আমরা তার মনোনয়ন ফরম পাঠিয়ে দেবো। প্রয়োজন হলে আমি নিজে গিয়ে পৌঁছে দেবো। আমার মনে হচ্ছে, আজ হয়তো মনোনয়নের জন্য লোক পাঠাবেন।
এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সাক্ষাৎ করবেন রওশন এরশাদ নিজেও। তারা একসঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন নাকি আলাদা আলাদা ভাবে, সেটিও এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জননেত্রী শেখ হাসিনা না চাইলে কিছুই সম্ভব নয়। সমঝোতা তো হবেই। চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আমরা সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের মিলে গেলে ৩৫-৪০টি আসনে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। তা না হলে আসন কমতে পারে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি গণমাধ্যমকে বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা না চাইলে কিছুই সম্ভব নয়। সমঝোতা তো হবেই। চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের নেতৃত্বে আমরা সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো। রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের মিলে গেলে ৩৫-৪০টি আসনে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। তা না হলে আসন কমতে পারে।
জাপার এই জ্যেষ্ঠ নেতার কথা ধরে কেউ কেউ হিসাব মেলাচ্ছেন, রওশন এরশাদ ও জিএম কাদের এখন পর্যন্ত মিলে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তারা না মিলে গেলে আসন ভাগাভাগির হিসাব কী হবে, কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করবেন সেটিও এখন পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
রওশন এরশাদের অন্যতম সহযোগী রাঙ্গা, তাকে সম্প্রতি বহিষ্কার করেছেন জিএম কাদের
সূত্র জানায়, মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ বহিষ্কৃত নেতারা জিএম কাদেরের কাছে ক্ষমা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। চেয়ারম্যান ক্ষমা করলে, মনোনয়ন ফরম নিতে পারবেন তারা। মূলত রওশনপন্থি যে নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তারা মনোনয়ন ফরম নিতে পারছেন না বলেই তিনি নিজেও মনোনয়ন ফরম গ্রহণ করছেন না।
এ বিষয়ে রওশনপন্থি নেতা, জাপার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব (বর্তমানে বহিষ্কৃত) ইকবাল হোসেন রাজু জাগো নিউজকে বলেন, রওশন ম্যাডাম কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। উনি প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়েছেন। সময় এখনো পাননি। রওশন ও সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তারা আমাদের বাদ দিয়ে ভোট করবেন না। করলে তো আরও আগেই মনোনয়ন নিতেন। আমাদের দিক থেকে ম্যাডাম, সাদ এরশাদ ও রাঙ্গাসহ ২০-২২ জন আছে। জিএম কাদের যদি অনড় থাকেন, তাহলে সিদ্ধান্ত তো একটা নিতেই হবে। আমাদের কাউন্সিল হলে এ সমস্যাটা হতো না। কাউন্সিল উপর মহলের নির্দেশে হলো না। এখন কী হবে, ম্যাডাম কী করবেন, এটা প্রধানমন্ত্রী ও ম্যাডামের ব্যাপার। আবার নৌকা থেকেও পাওয়া কঠিন। তবে প্রধানমন্ত্রী চাইলে সেটা ব্যাপার নয়।
জাপার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব (বর্তমানে বহিষ্কৃত) ইকবাল হোসেন রাজু জাগো নিউজকে বলেন, রওশন ম্যাডাম কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। উনি প্রধানমন্ত্রীর সময় চেয়েছেন। সময় এখনো পাননি। রওশন ও সাদ এরশাদকে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। তারা আমাদের বাদ দিয়ে ভোট করবেন না। করলে তো আরও আগেই মনোনয়ন নিতেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি, নির্বাচনে যাবো। তখন জিএম কাদের যাবেন না বলেছেন। এখন তো তারাও যাচ্ছেন। সমন্বয় তো হয়েছে। এখন শুধু অ্যাডজাস্টমেন্টের ব্যাপার। সেটা কীভাবে হবে তা প্রধানমন্ত্রীর ওপর নির্ভর করছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে নির্বাচনী শেষ জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঢাকা-৬ আসনের কাজী ফিরোজ রশিদের জন্য লাঙ্গলে ভোট চান।
কাজী ফিরোজ রশীদকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে তিনি বলেন, যদিও তিনি ছাত্রলীগ করেছিলেন, এখন করেন জাতীয় পার্টি। চলে গেছেন এরশাদ সাহেবের সঙ্গে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবেই লাঙ্গল মার্কা নিয়ে তিনি এখন নির্বাচন করছেন। ছিলেন নৌকা মার্কায়, গেছেন লাঙ্গল মার্কায়। কোনো অসুবিধা নেই, ভবিষ্যতে আমরা লাঙ্গল নৌকায় তুলে নেবো। তবে এখন লাঙ্গল মার্কায় ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদের জন্য আমরা ভোট চাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, রোববারের মধ্যে তিনশ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। নতুন মুখও এসেছে, কিছু বাদও পড়েছে। বিজয়ী হতে পারেন এমন প্রার্থীদের বাদ দেয়নি আওয়ামী লীগ। মনোনয়নে ভুলত্রুটিও থাকতে পারে। একসঙ্গে তিনশ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে।
ফলে রোববারই বোঝা যাবে, কারা উঠছেন নৌকায়। কারা বাদ পড়ছেন আর কারা অন্য প্রতীকে প্রার্থী হচ্ছেন।