মামুন রেজা
রাজশাহী ১৫ জানুয়ারি ২০২২

নামেই গুড়। সম্পন্ন চিনি দিয়ে তৈরি খেজুরের গুড়। তাতে নেই খেজুরের গুড়ের ঘ্রাণ। তবে কিছু কিছু গুড়ে থাকলেও তা ফ্লেভার মিশানো। এই গুড়ে প্রকৃত গুড়ের কোনো অস্তিত্ব নেয়। দেখলে গুড়ের মতো মনে হলেও এটা আদো গুড় নয়। রাজশাহী জেলার বাঘায় দীর্ঘদিন চলে আসছে এমন গুড় তৈরি ও বিক্রি কর্যক্রম। রাতের আধারে ক্ষতিকারক পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়। এসবগুড় সকাল হলেই ট্রাক বা অন্য যানবাহনে চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্নস্থানে।

এমন একটি চক্রের সাতজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই সাতজনই ভেজালগুড় তৈরিতে এক্সেপার্ট (খুব পারদর্শী)। এসময় তাদের থেকে ৫০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড় উদ্ধার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় গ্রেফতারকৃতদের থেকে ভেজাল গুড় তৈরির উপকরণ উদ্ধার করা হয়। এনিয়ে আজ সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, বিপিএম (বার) এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, এই গুড় মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। গ্রেফতাররের পরে পুলিশ সদস্যরা গ্রেফতারকৃতদের বলে; তোমরা এই গুড় তৈরি করেছ। এই গুড় তোমরা খেয়ে দেখাও। কিন্তু গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কেউ এই গুড় খেয়ে দেখায় নি। এমন প্রশ্নের উত্ততে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান- বাজারে ভেজাল গুড় থাকতে পারে। এগুলো বিএসটিআই, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্য সংস্থাগুলো ভেজাল বিরোধী অভিযান চালাবে। তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। আমাদের জানালে আমরা তাদের সহযোগিতা করবো।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বাঘার আড়ানী চকরপাড়া গ্রামে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করে ৫০ মণ ভেজাল খেজুরের গুড়সহ কারখানার মালিক ওই এলাকার মৃত আবুল হোসেন ছেলে রকিব আলী (৪২), তার সহযোগী সুমন আলী (৪২), অনিক আলী পাইলট (৩০), মাসুদ রানা (৩০), বিপ্লব হোসেন সাজু (২৫), মামুন আলী (২৭), বাবুকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়। তাদের সবার বাড়ি আড়ানী চকরপাড়ায়।

এসময় তাদের থেকে গুড় ভর্তি ৫৮টি ক্যারেট। প্রতিটি ক্যারেটের গুড়সহ ওজন ৩৫ কেজি করে সর্বমোট ২ হাজার ৩০ কেজি। মূল্য অনুমান ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬০০ টাকা।, ১০ বস্তা চিনি। ১৮ কেজি ফিটকিরি, ২৫ কেজি চুন, ৬০০ গ্রাম ডালডা, ১ কেজি হাইড্রোজ, দুইটা তাওয়া। এছাড়া উদ্ধারকৃত মালামালের মূল্য ৩ লাখ ৫ হাজার ৬৬৫ টাকা।

পুলিশ আরো জানায়- জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান ৩ মাস যাবৎ ওই কারখানায় চিনি, চুন, হাইড্রোজ, ফিটকারি, ডালডা ও বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান মিশিয়ে ভেজাল খেজুরের গুড় তৈরি করে আসছে। তারা এগুলো রাজধানী ঢাকা’সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করে থাকে। গুড় তৈরির ক্ষেত্রে তারা যে সকল রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে সেগুলো মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ও জটিল রোগের সৃষ্টি করে।

পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, বিপিএম (বার), রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) সনাতন চক্রবর্তী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ইফতে খায়ের আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) অলক বিশ্বাস, সহকারী পুলিশ সুপার (জেলা বিশেষ শাখা) রুবেল আহমেদ ও সহকারী পুলিশ সুপার (এসএএফ) নিয়াজ মেহেদী উপস্থিত ছিলেন।