জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে:

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, বর্তমান অনির্বাচিত সরকার করোনার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে দেশের জনগণের প্রতি কোন জবাবদিহিতা নাই। যখনই কোন আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে, তখন করোনার দোহাই দিয়ে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়। কারণ সরকার ছাত্রদের আন্দোলনকে ব্যাপক ভয় পায়। ২০১৮ সালের ঐতিহাসিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় থেকে সরকার সবসময় ভয়ে থাকে কখন জানি সাধারণ ছাত্রদের কোন আন্দোলন আবার চাঙ্গা হয়ে উঠে।

আজ বৃহস্পতিবার ( ১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় আকরাম খাঁন হলে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ” বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ” এর চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি’তে সংগঠনের আহ্বায়ক এপিএম সুহেলের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ইসমাইল সম্রাটের সঞ্চালনায় আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাক্তার জাফরুল্লাহ চৌধুরী উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেনি।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, দেশ পরিচালনা করতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট লাগে। বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপর নির্ভর করে সরকার টিকে আছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকার
সাত জনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা (Sanctions) জারি করেছে ।তাতেই সরকারের কাঁপন ধরে গেছে। এবার জনগণ জেগে উঠলে সরকার পালাতে বাধ্য হবে।

গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেছেন ,এ দেশের কর্তৃত্ববাদী পরিবার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ কখনো চাই না শিক্ষার্থীদের কোন আন্দোলন সফল হোক। তাই বর্তমান সরকার বাংলাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কোন ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিচ্ছে না। কারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তরুণ নেতৃত্বের আসবে।তাতে তাদের পরিবারের সদস্যদের উত্তরাধিকারের রাজনীতির কবর রচনা হবে।
বাংলাদেশ জাতীয় লীগের সভাপতি ড. শাহরিয়ার ইফতেখার ফুয়াদ বলেছেন, তারুণ্যের শক্তির উপর দমন-পীড়ন চালিয়ে শাসক শ্রেণী কখনো রেহাই পায়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সরকারের দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছিল। তাই সরকার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের কে জেলে ভরে ছিল। তারপরও সরকার কোটা সংস্কার আন্দোলন দমন করতে পারেনি।
উদীয়মান সূর্যের আলোর দিকে যেমন সবাই তাকিয়ে থাকে, তেমনি করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকারীদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ এরাই অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের ভীত নড়ে দিয়েছিল।

জাতীয় জনতার জোট এবং বাংলাদেশ কর্মসংস্থান আন্দোলনের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, রাস্তায় হাঁটতে গেলেই বেকার যুবকদের নীরব কান্না শুনতে পায়। সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় বলেছেন চাকরীর চিন্তা না করে উদ্যোক্তা হিসেবে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গড়তে। কিন্তু উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ব্যাংকে ঋণ নিতে গেলে নানা শর্তের বেড়াজালে আটকে যায় আমরা। তিনি আরো বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী বায়ান্নের ভাষা শহীদ এবং একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরী।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন সবুজ আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং সাবেক সচিব হাসান মাসুদ, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর যুগ্ন আহ্বায়ক জালাল আহমদ,
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক দিদারুল হক ভূঁইয়া, গণফোরামের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ মধু,স্বদেশী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সদস্য সচিব আল আমিন রাজু ,
ছাত্র মিশনের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের সদস্য সচিব ইউসুফ জামিল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব সৈয়দ সামিউল ইসলাম , সদস্য নাদিম পৃথু ,সুমন‌ প্রমুখ।
উল্লেখ্য ,২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কোটা সংস্কার আন্দোলনের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংগঠন হিসেবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর জন্ম হয়েছিল।