জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে:
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেছেন , মানুষ এখন পরিবর্তন চাই। কিন্তু সাংবিধানিক কাঠামোর সংস্কার ছাড়া কাঙ্খিত পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই সাংবিধানিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনার জন্য এখন জনগণ কে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। আমরা এখন পরিবর্তনের পথে হাঁটছি। মানুষ কে সেই পরিবর্তনের কাফেলায় ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলে আমাদের কাঙ্খিত পরিবর্তন সম্ভব। যেটা ১৯৯০ সালে সম্ভব হয়েছে।

আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার লেখক মুশতাক আহমদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মরণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন‌।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের মিডিয়া এবং প্রচার সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, আজকে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর । কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ ন্যায় বিচার পেল না। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য জাতি আজ পর্যন্ত জানতে পারল না। গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থা কে জনগণের বিরুদ্ধে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এখানে কারো স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নাই।
লেখক মুশতাক আহমদ কে বিনা বিচারে কারাগারে জীবন দিতে হয়েছে। উচ্চ আদালতে কেন বারবার মুশতাক আহমদের জামিন নাকচ হলো তা আমাদের বোঝে আসে না।
বিচার বিভাগ সরকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করার ক্ষেত্রে সরকারের আকাঙ্ক্ষার দিকে চেয়ে থাকে।
সরকারের এমপি- মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত শপথ ভঙ্গ করেছেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে সালমান এফ রহমানের টেলিফোনে কথোপকথন ফাঁস হওয়ার পর গণমাধ্যমে তেমন উচ্চ বাক্য নেই। এটা যদি আজ বিএনপি’র ক্ষেত্রে হতো , তাহলে আওয়ামী লীগ এতদিনে রাজপথ গরম করে ফেলত।
পুলিশ এখন বলে আমরা সরকার কে টিকিয়ে রেখেছি।আর আমলারা বলে আমরাই সরকার কে টিকিয়ে রেখেছি।
বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোতে সরকারের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছে আল্লাহর পর সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবান। বিদ্যমান সাংবিধানিক কাঠামোতে
পুরুষ কে নারী এবং নারী কে পুরুষ বানানো ছাড়া বাকি সবই সম্ভব।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, লেখক মুশতাক আহমদের জামিন হাইকোর্টে ৬ বার নাকচ হয়েছে। কিন্তু জামিন না হওয়া টা দুঃখজনক।
লেখক মুশতাক আহমদ এর মৃত্যুর পর কিশোরের জামিন হয় । মূলত মুশতাক আহমদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে কিশোরের জামিন নিশ্চিত হয়। তাই মুশতাকের মৃত্যু আমাদের বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা সম্পর্কে চোখ খুলে দিয়েছে।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ নির্ধারণ করে একটি দেশের সাংবিধানিক কাঠামো কী রকম হবে। তাই সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য আন্দোলন করতে হলে
সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি এক হতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা নইম জাহাঙ্গীর বলেছেন, একাত্তর সালের আগে পাকিস্তানের আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে কথা বললে দুষ্কৃতিকারী বলা হতো। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই রাষ্ট্রদ্রোহী বলা হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিক্রি করছে। অথচ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্পষ্ট অঙ্গীকার ছিল, “সাম্য , মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার “।

জাসদের (আ স ম আবদুর রব) কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন , স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করার পাশাপাশি রাষ্ট্র সংস্কারের কাজকে এগিয়ে নিতে হবে।যারা শুধু মাত্র ‌ক্ষমতার জন্য পরিবর্তন চাই, তারাও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেলে একই কাজ করবে। তাই
সরকার পতন আন্দোলন করার আগে রাষ্ট্রের সংস্কার আন্দোলন দরকার। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন আমাদের রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের অনন্য নজির হতে পারে। আমরা জাসদের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছি। বাংলাদেশে এককেন্দ্রিক সরকার দিয়ে কাজ হবে না।তাই দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ দরকার।

নাগরিক ঐক্যের নেতা ডা: জাহেদুর রহমান বলেছেন,নির্যাতন মানে শুধু শারীরিক নির্যাতন নয়, মানসিক নির্যাতনও এক ধরনের নির্যাতন। লেখক মুশতাক আহমদ কে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক দিদারুল ভুঁইয়া, ফরিদুল হক , ইমরান ইমন ,ছাত্র ফোরামের সদস্য সচিব ইসমাইল সম্রাট প্রমুখ।