একটি অবাধ ও দল-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ সংসদ নির্বাচন আদায়ে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। সরকারের নানামুখী নীলনকশার বিপরীতে একমাত্র রাজপথকেই সমাধান হিসেবে দেখছে বিএনপি। সময়মতো রাজপথে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে সংগঠন শক্তিশালী করতে কাজ করছে দলটি। দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করতে বিএনপির সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই বলে মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড।
সরকারবিরোধী আন্দোলন ছাড়া এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়াকে আত্মহত্যার শামিল ভাবছেন দলটির নেতারা। রাজনীতির মাঠে শক্তি দেখাতে না পারলে দেশি-বিদেশি কোনো পক্ষই বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। সম্প্রতি বেশ কিছু দলীয় কর্মপরিকল্পনায় এমন মত উঠে আসে। তা ছাড়া গত মাসে অনুষ্ঠিত সিরিজ বৈঠকেও দলীয় নেতাদের এই মনোভাবের কথা জানা গেছে। আর তাই আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজপথে বাঁচা-মরার লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় বিএনপির এখন একমাত্র করণীয়।
বিএনপির সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে সিরিজ মতবিনিময় সভায় এসব মতামত উঠে এসেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে বিএনপির তিন শতাধিক নেতার বক্তব্য থেকে এমন সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়। দলীয় নেতাদের বক্তব্যের আলোকে উঠে আসা মতামতগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে লন্ডনে পাঠানো হয়। এর মধ্যে ১১৮ নেতা রাজনীতির সার্বিক বিষয়াবলি এবং দলের ভবিষ্যৎ করণীয় নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিদিনের সংবাদকে এ বিষয়ে বলেন, ‘দেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফেরাতে বিএনপি অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক এটা সাধারণের চাওয়া। তা ছাড়া দলীয়ভাবে আমাদের লক্ষ্য একটাই। আমাদের কাজ অন্য কেউ করে দেবে না। তা ছাড়া শক্তিশালী সংগঠন গড়ে রাজপথে থাকতে না পারলে বিএনপির শরিকরা হতাশ হবে। তাই বিএনপিকে তার করণীয় নির্ধারণের বিষয়ে প্রায় সব নেতার মুখেই একই বক্তব্য উঠে আসছে। আমিও মনে করি, রাজপথই জাতির গণতন্ত্রহীন এ গভীর সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায়।
দলের নেতারা মনে করছেন, ‘সরকার বিএনপির দাবি কেন মানবে, যদি মানতে বাধ্য করানো না যায়। তাহলে সরকার তার সাজানো পথেই হেঁটে যাবে। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফেরত নিয়ে আসতে হলে বিএনপিকেই এগিয়ে আসতে হবে। আর বিএনপি যদি এমন দায়িত্ব পালন করতে না পারে তাহলে দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন তারা।’
কারণ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে দেশের অধিকাংশ দল বিএনপিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এখন বিএনপি যদি তাদের শক্তিমত্তা না দেখাতে পারে তাহলে অন্য দলগুলো রাজপথে ঝুঁকি নিতে যাবে না। এ অবস্থায় তৃতীয় কোনো শক্তি সুযোগ নিতে পারে। তাই যা করার রাজপথে বিএনপিকেই করতে হবে।
সূত্র জানায়, এবার যদি বিএনপি নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে ভুল করে তাহলে ৮৬ মার্কা আরেকটি নির্বাচন বিএনপিকে বসে বসে দেখতে হবে। তাই অন্য কারোর ওপর ভরসা করে বা বিদেশিরা এসে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে এমন চিন্তা অবশ্যই বাদ দিতে হবে।
এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কী করণীয় এবং সংগঠনের অবস্থা কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমরা দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলেছি এখনো বলছি। এ মুহূর্তে আমাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা, গণতন্ত্রের নেত্রী খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এটাও ঠিক, আমাদের দাবিগুলো সরকার স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেবে না। এ ক্ষেত্রে রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। আমরা সেই আন্দোলনেই আছি। হয়তো এখন গতি কম আছে, সেটা ধীরে ধীরে বাড়বে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।