অনলাইন ডেস্ক: কোচিং সেন্টারের আড়ালে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৭ চিকিৎসকসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সম্প্রতি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী।
গ্রেপ্তার সাত চিকিৎসক হলেন ময়েজ উদ্দিন আহমেদ (৫০), সোহেলী জামান (৪০), মোহাম্মদ আবু রায়হান, জেড এম সালেহীন শোভন (৪৮), মো. জোবায়দুর রহমান জনি (৩৮), জিল্লুর হাসান রনি (৩৭) ও ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২)। অন্যরা হলেন জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫), আখতারুজ্জামান তুষার (৪৩), জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি (৪৫) ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)।
এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ৪টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ব্যাংক কার্ড, ভর্তির অ্যাডমিট কার্ড, নগদ ২ লাখ ১১ হাজার টাকা, থাইল্যান্ডের মুদ্রা ১৫ হাজার ১০০ বাথ উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কয়েক শ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্ন সরবরাহ করেছেন। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেছেন তাঁরা। যা তাঁরা দেশে বিলাসবহুল জীবনে ব্যয় করেছেন এবং বিদেশে পাচার করেছেন। তবে ২০১৭ সালের পর মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসে তাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
সিআইডি জানায়, মিরপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২০ সালের জুলাইয়ে করা একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়—চক্রটির অন্তত ৮০ জন সদস্য রয়েছেন। প্রায় ১৬ বছর ধরে তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন সরবরাহ করছে। এঁদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্ন ফাঁস করতেন।
অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে আটজন তাঁদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। যাতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যাঁরা প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। ইতিমধ্যে অনেকে পাস করে ডাক্তারও হয়ে গেছেন। এঁদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
মোহাম্মদ আলী আরও জানান, চক্রের মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি জব্দ করা হয়েছে। যেখানে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের অন্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব সদস্যকে ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, ২০০১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করেছে। এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানি লন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তার চিকিৎসক ময়েজ উদ্দিন প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। এমবিবিএস পাস করে ফেইম নামের একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান তিনি। ময়েজ শিবিরের সাবেক নেতা। বর্তমানে জামায়াতের চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মানি লন্ডারিং মামলা রয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।