সিবিএন ডেস্ক:
নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে প্রথম কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামীকাল মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) ও বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুই দিনের গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে দলটি। একইসঙ্গে জামায়াতের পক্ষ থেকেও একই কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। তবে, যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ২২২ ও দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে বিজয়ী হয়েছেন ৬২ জন। এছাড়া জাতীয় পার্টি ১১টি এবং অন্যান্য প্রতীকে আরও ৩ জন বিজয়ী হয়েছেন।
বিএনপিসহ নির্বাচন থেকে বিরত থাকা বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। ‘সাধারণ মানুষ ভোট দেয়নি’, উল্লেখ করে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশবাসীকে অভিনন্দিত করা হয়েছে। আজ সোমবার (৮ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতা আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘জনগণ ডামি নির্বাচন বর্জন করে প্রমাণ করেছে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ভুয়া। নির্বাচন কমিশন দুই-একটা কেন্দ্র বন্ধ করে প্রমাণ করতে চেয়েছে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন দিতে হবে, যে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে। নতুন নির্বাচনের দাবিতে কাল (মঙ্গলবার) থেকেই আমাদের গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু হবে।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর কর্মসূচি চলমান থাকলেও পশ্চিমা একটি দেশের রাষ্ট্রদূতের অনুরোধে তখন কর্মসূচি থেকে সরে আসে বিএনপি। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও সন্ধ্যায় নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি ওই জোটের প্রধান শরিক ছিল। ওই সময়ও কর্মসূচি দেওয়ার কথা ফ্রন্টের নেতারা আলোচনা করলেও বিএনপির তরফে তা বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে ফ্রন্টের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে আসে।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের আগে হরতাল, অবরোধ কর্মসূচি দিলেও নতুন বছরে সহসাই কঠোর কর্মসূচিতে যাচ্ছে না বিএনপি।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের পর থেকে ৫ দফা হরতাল হয়েছে, ১৩ দফা গণসংযোগ হয়েছে, ১৩ দফা অবরোধ হয়েছে। এই নির্বাচন বাতিল ও নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আগামীকাল গণসংযোগ রয়েছে।’
কোনও কোনও নেতার ভাষ্য—আবারও ‘শুরু’ থেকে শুরু’ করবে বিএনপি ও বিরোধীরা। বিশেষ করে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন ওঠায়, ভোটার উপস্থিতির হার ও নির্বাচনের কমিশনের নানামুখী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সরকার চাপে থাকবে বলে মনে করেন কোনও কোনও নেতা।
বিএনপির যুগপৎ সঙ্গী ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, ‘সরকার এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়তে শুরু করেছে। জাতিসংঘ সরকারের গলাটিপে ধরবে। আমেরিকা স্যাংশন দিয়ে অর্থনীতির বারোটা বাজাবে। দেশ ও দেশের জনগণকে বাঁচানোর জন্য এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগের বিকল্প নাই। অবিলম্বে সরকারকে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচন দিতে হবে।’
বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতারা জানিয়েছেন, ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের পর নতুন নির্বাচনের দাবিতে কর্মসূচি না থাকলেও এবার থাকবে। সরকারকে দাবি মানাতে আবারও রাজনৈতিক কর্মসূচি দেবে বিএনপি ও বিরোধী দলগুলো। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—গণসংযোগ, লিফলেটিং, সভা, পদযাত্রা, গণযাত্রা, সমাবেশ ইত্যাদি।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা কারাগারে থাকায় তাদের মুক্তির বিষয়টি সামনে রেখেও কর্মসূচি দেওয়া হবে। তবে সব কর্মসূচিই শান্তিপূর্ণভাবে করার আলোচনা আছে নেতাদের মধ্যে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মনে করেন, ‘চলতি জানুয়ারি মাসে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আচরণই বলে দিচ্ছে সামনের দিনের রাজনীতিতে বিএনপির অবস্থান কী হবে। বিএনপিকে আন্দোলনে থাকতে হবে এটা যেমন সত্য, তেমনি সরকারের আচরণ কতখানি চাপসৃষ্টি করবে, কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়টিকে আমলে নিতে হচ্ছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে আরও কিছু দিন সময় লাগতে পারে দলের। তবে নিশ্চিতভাবে নতুন আন্দোলনে বিএনপিতেও নতুনত্বের সঞ্চার দেখা যেতে পারে।’
জানতে চাইলে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘জনগণ এই সরকারের একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নতুন গণপ্রতিরোধের সূচনা করেছে। এই গণপ্রতিরোধের ওপর দাঁড়িয়েই জনগণের আন্দোলনকে বিজয়ী করতে হবে। শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের যে দাবি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন, সে দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। নতুন পর্যায়ের আন্দোলন শুরু করবো আমরা।’
উল্লেখ্য, রবিবার (৭ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারকে দাবি মানাতে তিন দফায় জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে সভা-সমাবেশ, পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে ঢাকাকেন্দ্রিক মহাসমাবেশ করে বিএনপি। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর নয়া পল্টনের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৭ ডিসেম্বর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও সমাবেশের স্থান পরিবর্তন, বিদায়ী বছরের ২৮ জুলাই সমাবেশের পর ২৯ জুলাই পণ্ড ঢাকার প্রবেশমুখ কর্মসূচি এবং সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর পণ্ড হয় ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির মহাসমাবেশ। প্রত্যেকটি কর্মসূচির আগেই সারা দেশে কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। -বাংলা ট্রিবিউন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।