‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চাই’। মহান ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পরও আজও বাংলা ভাষার স্বীকৃতি মেলেনি স্বাধীন বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে।
একুশের প্রথম প্রহরে এটাই ছিল এক বিরাট আক্ষেপ। এই আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ( মুক্তিজোট) এর সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না।
আজ ২১শের ভোরে শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি এমন আক্ষেপ করেন।
পরে সংগঠনের পরিচালনা বোর্ড প্রধান শাহজালাল আমিরুল স্বাক্ষরিত এক প্রেসনোটে বলা হয়
” মানুষের মুখের ভাষা- আপন ভাষা রক্ষার সংগ্রামের পরিণতিতেই এদেশের স্বাধীনতা এসেছিল কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরেও আদালতের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা হয়নি। অথচ, বিভিন্ন সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি করছি।
অথচ সরকার সর্বস্তরে (আন্তর্জাতিকতার শর্ত ব্যতিরেকে) বাংলা ভাষা চালু করার ক্ষেত্রে কেন পদক্ষেপ নিচ্ছে না বা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাধ্য করছে না- এই মর্মে হাইকোর্ট বিভাগ এর বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি এ বি এম আলতাফ হোসাইন এর বেঞ্চ থেকে ১৭ই ফেব্রুয়ারি ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে একটি রুল জারি করে।
কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য খোদ আদালতের দাপ্তরিক ক্ষেত্রই অদ্যাবধি এই নির্দেশের বাইরে আছে! বিচার বিভাগ কি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান? বিচার বিভাগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটা প্রতিষ্ঠান মাত্র। স্বাধীন হলেও প্রাতিষ্ঠানিক এই পরিচয়ের বাইরে তার কোনো আলাদা পরিচয় নেই।
বিচার বিভাগের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা করার ক্ষেত্রে শিক্ষাসহ যে আনুষঙ্গিক শর্ত রয়েছে সেই ব্যাপক কর্মসীমানা বিচার বিভাগের থাকে না। রাষ্ট্র-কাঠামোর কোনো বিভাগই এককভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় আর সেটা হয়ও না, হলে সে সরকার হয়ে ওঠে- কারণ সরকারই কেবল সব বিভাগের সমন্বিত ক্রিয়ায় সর্বোচ্চ কর্তৃত্বে আসীন থাকে। রাষ্ট্রীয় কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা বলতে কাঠামোবদ্ধ অপরাপর অংশের সাপেক্ষেই কেবল তা নির্দিষ্ট হয়। সেদিক থেকে বিচার বিভাগের দাপ্তরিক ভাষা বাংলা করার ক্ষেত্রে শিক্ষাসহ যে, যে আনুষঙ্গিক শর্তকে অজুহাত হিসাবে দেখানো হয়েছে সেটা বাংলা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে মোটেই যুক্তিসংগত বা গ্রহণযোগ্য নয় বরং এটা সরকারের অবহেলা বা দায়িত্বহীনতা হিসাবেই নির্দিষ্ট হয়।
এক্ষেত্রে কথিত ‘টেকনিক্যাল সমস্যা’ বা পরিভাষাসহ বহুবিধ অজুহাতে কাল বিলম্ব মোটেই গ্রহণযোগ্য নয় কারণ এমন অজুহাতেই স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেছে এবং যতোদিন ব্যবহার-বিধি বাধ্যতামূলক না হচ্ছে এই অজুহাতে আরও ১০০ বছর পেরিয়ে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ও তার গণতান্ত্রিক বিনির্মাণে সর্বৈব সত্য হয়ে উঠুক-শহীদ বেদিতে দ্রোহী শোকের স্মারকে রাখা ফুলগুলো সৃজনের মহামন্ত্রে বৈশ্বিক বার্তা হয়ে ফিরুক, আধুনিক বাংলাদেশের রাজনীতিতে সব শহিদান অস্তিত্ব জানান দিক তাঁরা ছিল, আছে এবং থাকবে।
পুষ্পমাল্য অর্পণের সময় সংগঠন প্রধান আবু লায়েস মুন্না, যুগ্ম সংগঠন প্রধান আমেনা খাতুন ওমি শিকদার ও পরিচালনা বোর্ড প্রধান শাহজালাল আমিরুল ছাড়াও কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সদস্য মোঃ জামিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শরীফ মোঃ বেদুইন হায়দার লিও, উত্তম কুনার, আক্তার হোসেন মোল্লা, কৃষক মুক্তিজোট এর আহ্বায়ক মোঃ গোলাম মোস্তফা, ঢাকা মহানগর সমন্বয়কারী মোঃ আমানউল্লাহ আমান সহ কেন্দ্রীয় কমিটি ও মহানগরের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মী বৃন্দ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।