সিবিএন ডেস্ক:
ভূমির মালিক নন বিধায় বরিশালের হিজলা উপজেলার আসপিয়া ইসলামের পুলিশের চাকরি পেতে যেন সমস্যা না হয় এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘর জমিসহ তাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া কোনোভাবেই যাতে আসপিয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ না হয়, এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তিও তাকে জমি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
শুক্রবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘জমি না থাকায় আসপিয়ার চাকরি হচ্ছে না’। এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার স্থায়ী ঠিকানার জন্য আসপিয়াকে হিজলার আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের জমিসহ একটি ঘর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আসপিয়াকে ডেকে ঘর দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বিকালে তাকে ঘরের সম্ভাব্য জমি দেখানো হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব ওই জমির দলিল তৈরি করে দেওয়া হবে। আমরাও চাচ্ছি, জমির জন্য যেন আসপিয়ার চাকরির স্বপ্নটা কোনোভাবে ভেস্তে না যায়।’
এদিকে আসপিয়ার চাকরির জন্য জেলার যেকোনও গ্রামে পাঁচ শতাংশ জমি কিনে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ইকবাল হোসেন তাপস। মোবাইলে কল করে আসপিয়াকে এই প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। আসপিয়াকে মোবাইল করে নিজের পৈতৃক সম্পদ থেকে পাঁচ শতাংশ জমি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাকেরগঞ্জের রোকন উদ্দিন ইসলামিয়া সালেহিয়া ডিগ্রি মাদ্রাসার শিক্ষক নূর-ই আলম মিন্টু। ইতালি প্রবাসী এক বাংলাদেশিও আসপিয়াকে স্থায়ী ঠিকানার জন্য জমি কিনে দেওয়ার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে ন্যায্য অধিকার আদায়ে আইনি লড়াইয়ে আসপিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। প্রখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুণও আসপিয়ার চাকরি না হলে অনশন করার ঘোষণা দিয়েছেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (গোপনীয় বিভাগ) সুব্রত বিশ্বাস জানান, আসপিয়ার চাকরির বিষয়ে এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কোনও চিঠি জেলা প্রশাসক পাননি। তবে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দারের নির্দেশে হিজলার আশ্রয়ণ প্রকল্পে আসপিয়াকে জমিসহ ঘর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা উপজেলার ইউএনও-কে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সুব্রত বিশ্বাস আরও জানান, আসপিয়া যাতে কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে পারেন এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ফোন করে জেলা প্রশাসককে জমিসহ ঘর দিতে বলেছেন। আর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে রয়েছে বলেও তিনি অবহিত করেন জেলা প্রশাসককে।
আসপিয়ার পূর্ব পুরুষের আদি ভিটা ভোলার চরফ্যাশনে হলেও সেখানে উত্তরাধিকার সূত্রে এখন পর্যন্ত কোনও সম্পদ ভোগদখল করেন না বলে জানিয়েছেন তার মা ঝর্ণা বেগম। পূর্ব পুরুষের ভিটায় তাদের কোনও ঘরও নেই। নেই কোনও যাতায়াতও। তিন দশক ধরে হিজলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের খুন্না-গোবিন্দপুর এলাকায় বসবাস করছেন তারা।
বড়জালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘জন্মসূত্রে আসপিয়া হিজলার বাসিন্দা। তাদের পরিবারের সবাই হিজলার ভোটার। মানবিক কারণে আসপিয়াকে যোগ্যতা বলে চাকরি দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
বরিশাল জেলা পুলিশের নিয়োগ কমিটির চেয়ারম্যান পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের ভেরিফিকেশন এখনও চলছে। এখানে কোনও মানবিকতার বিষয় থাকলে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।’
পুলিশ কনস্টেবল পদে সফলভাবে ছয়টি স্তর পার হওয়ার পর সবশেষ ২৯ নভেম্বর ভাইভা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হন আসপিয়া। চূড়ান্ত নিয়োগের পূর্বে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আসপিয়া ও তার পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। এতে চাকরির স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় তার। এ জন্য বুধবার আসপিয়া ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও কোনও সমাধান না হওয়ায় বরিশাল পুলিশ লাইন্সের সামনে বসে থাকেন। তবে এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বাংলা ট্রিবিউনসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর আসপিয়া দাবি করেন, তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মোবাইলে কল করে বিস্তারিত তথ্য নেওয়া হয়েছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।