ঢাকা: ১০ জুন, সোমবার ২০২৪
সরকার পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতাদের তোষামোদি করার কারণে প্রতিঈদে ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাই আসছে ঈদুল আযহায় যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
ঈদযাত্রায় দেশের সকল পথে নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াত নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরকে যে-সব দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তা শতভাগ বাস্তবায়নের পাশাপাশি পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দ্বায়িত্বশীল করা, সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করা, ফিটনেস বিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সমাজের বিশিষ্টজনেরা।
আজ ১০ জুন সোমবার সকালে নগরীর ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে “ প্রতিবছর ঈদে গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য ও সড়ক বৃদ্ধিতে নাগরিক সমাজের উদ্বেগ ” শীর্ষক এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকেরা এই দাবি তুলেন। যাত্রী অধিকার সুরক্ষায় নিয়োজিত সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভার ধারণাপত্রে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরি বলেন, সরকার প্রতিবছর ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের মুনাফার অংশীদারদের সাথে নিয়ে ঈদের প্রস্তুতি সভা করেন। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দ্বায়িত্ব দিলেও তারা সকলে মিলেমিশে ভাড়া নৈরাজ্য চালান। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে গঠিত মনিটরিং কমিটিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি শুধু মাত্র পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা দ্বায়িত্বে থাকেন। বাস্তবতা হলো ৯০ শতাংশের বেশি যাত্রীকে প্রতিঈদে বাড়ি যেতে দ্বিগুন-তিনগুন বেশি ভাড়া দিতে হয়। এমনকি বিআরটিএ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ না করে বরং যাত্রীরা স্বল্প দূরত্বে গেলেও রুট পারমিটের শেষ গন্তব্য পর্যন্ত।ভাড়া দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। যারা সড়কে চাঁদাবাজিতে জড়িত তাদের উপর ঈদযাত্রায় সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে চাঁদাবাজরাই চাঁদাবাজি বন্ধের সিদ্ধান্ত আটকে দেয়। লক্কড়-ঝক্কড় বাস চালাতে যারা পৃষ্ঠপোষকতা করেন, তাদের উপর ঈদযাত্রায় লক্কড়-ঝক্কড় বাস চলাচল বন্ধের দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রতিঈদে ফিটনেস বিহীন বাসের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী বহন কঠোরভাবে নিষিদ্ধের ঘোষণা বিভিন্ন পক্ষ থেকে দেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে পরিবহণ সংকট, বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে ন আয়ের লোকজনের এসব পরিবহনে যাতায়াত ঠেকানো যায় না। বরং এসব পরিবহণ যাদের বন্ধ করার কথা তারা জায়গায় জায়গায় এসব যানবাহন আটকে উৎকোচ নেয়। দেশের সড়ক-মহাসড়কে নসিমন-করিমন, ভটভটি, অটোরিক্সা চলাচলে উপকারভোগী, তাদের উপর এসব যানবাহন চলাচল বন্ধের দ্বায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায় সড়কে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা থেকে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকারভোগী তাদের উপর সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের দ্বায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এতে করে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এ কারণে প্রতিটি ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা ও পরিবহনে বিশৃঙ্খলায় প্রাণহানি ও মানুষের যাতায়াতে হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্য দফায় দফায় বেড়েই চলছে। সরকারের ধারাবাহিকতায় লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করে সড়কে অবকাটামো উন্নত করলেও পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারের ইমেজ চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বিশিষ্ট আইনজীবী আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন, যুগ্ম মহাসচিব এম.মনিরুল হক, প্রচার সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. মহসিন, ড্রাইভার ওয়ালফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বাদল আহমেদ প্রমুখ।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।