ইউসুফ আরমান, জেদ্দা থেকে:

সৌদি আরবে অনেক বাংলাদেশী ওমরা এবং হজ পালন করতে আসেন। পরে মোয়াল্লেমের হাতে পাসপোর্ট রেখে বাঙালী পালিয়ে যায়। এইভাবে অনেক বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে বসবাস করে থাকেন । এখন তারা বৈধ হতে দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট নিতে মরিয়া। তবে এ সুযোগে দালাল ও সুবিধাবাদীরা দূতাবাসের নাম করে অসহায় বাংলাদেশীদের সঙ্গে প্রতারণা করে যাচ্ছে।
প্রতিদিন বহু প্রবাসী বাংলাদেশী দূতাবাসে ট্র্যাভেল পারমিট ও নতুন পাসপোর্টের আবেদনসহ কনস্যুলেটরের নিকট সেবা নিতে আসেন। তাদের মধ্যে অনেকের পাসপোর্ট না থাকায় নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই ছাড়া বাংলাদেশী হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা নানা জটিলতার কারণে যাঁরা কাগজপত্র বৈধ করার কাজ শেষ করতে পারেননি বা যাঁদের কাজ মাঝপথে আটকে গিয়েছে তাদের কোন সুরাহা করার পথ রাখে নি। বর্তমান নতুন পাসপোর্ট আবেদন জমা না নেওয়ায় জেদ্দায় পাসপোর্ট ভোগান্তিতে শত শত বাংলাদেশী।
যেহেতু বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রম বাজার সৌদি আরবে। জেদ্দায় অবস্থানরত বাংলাদেশী প্রবাসীরা পাসপোর্ট ভোগান্তিতে পড়ে আছে। এমনটি জানিয়েছেন জেদ্দায় অবস্থানরত শত শত বাঙালী প্রবাসী। তারা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসীদের দুঃখ-কষ্ট বুঝলেও কনস্যুলেটর দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। প্রবাসী শ্রমিকদের কোনো কথাই শুনতে চান না তারা।
অনেকের নতুন পাসপোর্ট আবেদন ফরম জমা নিচ্ছে না আবার আবেদনের অনেক দিন পরেও পাসপোর্ট না পেয়ে অনেক প্রবাসী দূতাবাসে এসে অসৌজন্যমূলক আচরন করছেন। সেবার পরিবর্তে সেখানে চলছে নানা অনিয়ম। প্রবাসীরা প্রতিবাদ করলেও কোনো কাজ হয় না। জেদ্দায় অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাস সহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে এসব অভিযোগ জানিয়ে আসলেও অদ্যাবধি পাসপোর্ট জটিলতার কোনো সুরাহা হয়নি বরং ভোগান্তি আরও বাড়ছে। এতে দিন যত যাচ্ছে প্রবাসীদের মধ্যে নতুন পাসপোর্ট আবেদন ফরম জমা না নেওয়ায় আতঙ্ক বাড়ছে। সেবা প্রার্থীদের কাউকে দেখার সুযোগ নেই।
আনুমানিক ১০০০ থেকে ১২০০ বাংলাদেশীর পাসপোর্ট ম্যানুয়ালি রি-নিউ দেয়ার একদিন পরেই কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই পরের দিন ২৬ জানুয়ারি ২০১৮-২০২০ সালের একটি প্রজ্ঞাপনের সূত্র ধরে ম্যানুয়ালি রি-নিউ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এইভাবে নতুন পাসপোর্ট আবেদন ফরম জমা না নেওয়ার কোন প্রজ্ঞাপন কোথাও ঝুলিয়ে দেয় নি বা দেখা যায় নি।
২০২০ সালে এসে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ বাংলাদেশী পাসপোর্ট রি-ইস্যুর জন্য আবেদন জমা করেন। ২০১৪-২০১৫ সালে এসে সবাইকে বাধ্যতামূলক এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) করার ফলে প্রায় সবাই একযোগে মেয়াদ উত্তীর্ণের কবলে পড়েছেন। এতে অতিরিক্ত চাপ বাড়ছে বলে জেদ্দা দূতাবাস কতৃপক্ষ জানায়। কিন্তু নতুন পাসপোর্ট আবেদন ফরম জমা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অবৈধ প্রবেশকারীদের জন্য কোন সুবিধা নেই বলে জানান।
পাসপোর্ট নেয়ার জন্য কনস্যুলেটের সামনে লম্বা লাইন থাকে। অনেক প্রবাসী এ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কয়েক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কাউন্টারে যেতে যেতে বিকেল চারটা বেজে যায়। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কনস্যুলেটের পাসপোর্ট অফিস বন্ধ করে দেন কর্মকর্তারা। এ ধরনের আচরন গ্রহীতার জন্য খুবই বিব্রতকর ও বেদনার। সেবা প্রার্থীদের কাউকে দেখার সুযোগ না থাকায় এতে অবশ্য দালাল ও ফটকাবাজদের খপ্পড়ে পড়তে হয়।
বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজার সৌদি আরবের জেদ্দায় বসবাসকারী শত শত বাংলাদেশী শ্রমিক পাসপোর্টের নতুন আবেদন ফরম জমা নেওয়ার ফলে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। ভোগান্তি যেন কোনোভাবেই তাদের পিছু ছাড়ছে না। ইত্যিমধ্যে অনেকে আউট পাশ পেতে ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে। তারপরও জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিস-সংশ্লিষ্টদের সেদিকে খেয়াল দেয়ার সময় নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। শ্রমিকদের অভিযোগ, সেবার নামে কনস্যুলেট জেনারেল অফিসে এখন চলছে নীরবে অনিয়ম। তবে যারা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছে তারাই এখন তাদের টার্গেটে পড়ছেন।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নতুন পাসপোর্ট আবদেন ফরম জমা নেবে না কেন? তার কোন সুনিদির্ষ্ট উত্তর নাই। এতে তার বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাসপোর্ট জটিলতা কোনোভাবে কাটবে না। দিন যত যাবে ভোগান্তি ততই বাড়তে থাকবে। তারা দ্রুত এর সমাধান চান।