সিবিএন ডেস্ক:
কারাগারে থাকা হেফাজতে ইসলামের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে সাংগঠনিক ও পারিবারিকভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ‘প্রতিশ্রুতিপূর্বক’ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তি পেয়েছেন। নতুন করে ঢাকা মহানগর হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, সাবেক কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজির মুক্তির জন্য পারিবারিকভাবে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্বশীলসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
হেফাজত ও সরকারের একাধিক প্রভাবশালী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বিগত এক-দেড় মাসে জুনায়েদ আল হাবীব ও জাকারিয়া নোমানের পরিবারে পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে। এসব আবেদনে তারা ধর্মীয়ভাবে সক্রিয় থাকলেও রাজনৈতিকভাবে কোনও কর্মকান্ডে যুক্ত হবেন না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘তাদের পরিবারের লোকজন মাঝে-মাঝে আসে, এটা ঠিক। অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই। কিন্তু আমি বলে দিই যে, তারা যেন আইনজীবীর মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে। সেভাবেই যেতে হবে।’
রমজানের আগে হেফাজতের ঢাকা মহানগর বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি জুনায়েদ আল হাবীবের মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের কাছে আবেদন করেছেন তার দুই স্ত্রী উম্মে কলসুম ও নাছিমা বেগম। তাদের স্বাক্ষরিত ‘‘পরিবারের পক্ষ থেকে মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব সাহেবের পক্ষে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পত্র দেওয়া প্রসঙ্গে’’ শীর্ষক আবেদনে জুনায়েদ আল হাবীবের বর্তমান শারীরিক অবস্থার বিবরণ এবং তার বৃদ্ধ বাবা-মা’র পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। জুনায়েদ আল হাবীবকে গত বছরের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা চলমান।
আবেদনের এক জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমাদের স্বামী জেলে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছি। সন্তান ও শয্যাশায়ী বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির দুর্বিসহ জীবন সহ্য করার মতো নয়….।’
এতে আরও বলা হয়, ‘‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের স্বামী ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কোনোধরনের বক্তব্য প্রদান করবেন না এবং ব্যক্তি ও কর্মজীবনে বিশেষ করে ওয়াজ মাহফিলে ধর্মীয় বিষয়ের মধ্যে বক্তব্য সীমাবদ্ধ রাখবেন। বাংলাদেশ সরকার এসব বিষয়ে যে নির্দেশনা দিবেন তিনি সেভাবেই চলবেন।’’
আবেদনে জুনায়েদ আল হাবীবের পরিবার প্রদেয় প্রতিশ্রুতি’র বাইরে যাবেন না বলেও উল্লেখ করেন দুই স্ত্রী উম্মে কলসুম ও নাছিমা বেগম।
জানতে চাইলে জুনায়েদ আল হাবীবের স্ত্রী উম্মে কুলসুমের সন্তান মাওলানা আহমদ আল হাবীব বলেন, ‘‘আব্বার মুক্তির জন্য আমরা সরকারের কাছে বলে যাচ্ছি, আবেদন করেছি। প্রতিনিয়ত প্রত্যেক মহলে আবেদন করছি। আইনজীবীও নিয়োগ করেছি। হেফাজতের বর্তমান মহাসচিব সাজিদুর রহমানের সাহেবের কাছেও বারবার গেছি। বলেছি— কী করা লাগবে, আমরা তাই-তাই করবো। আমাদের আব্বা খুব অসুস্থ, আজও (১৭ এপ্রিল) খবর পেয়েছি উনি খুব অসুস্থ।’’
আহমদ আল হাবীব বলেন, ‘আব্বাকে মুক্ত করে আমরা পরিবারের সঙ্গে রাখতে চাই। তার বৃদ্ধ বয়স, শেষ সময়ে সন্তানরা বাবাকে দেখতে চাই। আমরা এজন্য যা করা লাগে করবো।’ জুনায়েদ আল হাবীব বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।
জানুয়ারির শেষ দিকে হেফাজতের সাবেক প্রচার সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজির মুক্তির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন তার ছোটভাই মুফতি মাহমুদ হাসান ফয়েজি।
মাহমুদ হাসান ফয়েজি আবেদনে উল্লেখ করেন, ‘‘আমি এ মর্মে নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে, আমার পিতৃতুল্য বড় ভাই মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজি মাদ্রাসায় পাঠদান ও সামাজিক কাজে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখবেন। মসজিদ-মাদ্রাসার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন। কোনও রাজনৈতিক দল ও কোনোধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে আগে ছিল না, আগামীতেও থাকবে না ইনশাল্লাহ।’’
আবেদনটিতে সুপারিশ করেছেন হাটহাজারী দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মুফতি জসিম উদ্দীন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুফতি মাহমুদ হাসান ফয়েজি কাছে উদ্ধৃত হতে রাজি হননি। পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের ভাষ্য, আবেদন করার পর-পর ‘ইতিবাচক সাড়া’ পেলেও এখন তা আর নেই।
বর্তমানে জাকারিয়া নোমান ফয়েজি চট্টগ্রাম কারাগারে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ১৩টি মামলা চলমান। একটিতে জামিন পেয়েছেন বলে জানান তার ভাই মাহমুদ হাসান।
হেফাজতের বর্তমান কমিটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী জানান, ৪৮০ বা ৪৮২ জন আলেমের মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে হেফাজত। সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান মন্ত্রীর কাছে তালিকা তুলে দেন বলে জানান তিনি। বর্তমানে ঠিক কতজন জেলে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই বলে দাবি করেন রাব্বানী।
হেফাজতের নেতারা জানান, কারাগারে থাকা অধিকাংশ নেতাই যেকোনও মূল্যে মুক্তি পেতে প্রস্তুত। এক্ষেত্রে সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক কোনও প্রতিশ্রুতিপূর্বক জেল থেকে বেরুনোর বিপক্ষে বলে দাবি করেছে সংগঠনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র। বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে থাকা এই নেতা পরিবারের কাছে মুক্তির তৎপরতা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানায় একটি সূত্র।
সংগঠনের কোনও-কোনও সূত্রের দাবি, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা প্রতিশ্রুতিপূর্বক কারাগার থেকে বেরিয়েছেন। আরও কয়েকজন নেতাও যেকোনও শর্তে মুক্তি পেতে রাজি বলে বাংলা ট্রিবিউনকে কাছে দাবি করেছেন একজন নেতা।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের জন্মই হয়েছিল অরাজনৈতিক কর্মসূচির ভিত্তিতে। কিন্তু মাঝে-মাঝে তারা রাজনীতিতে জড়িত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন সময় তা হয়েছে। মুক্তি তো আমি দিতে পারি না, এটা তো বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়, কোর্টের বিষয়। সেভাবে অনেকে জামিন পাচ্ছে। ফলে এটা আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে।’
-বাংলা ট্রিবিউন
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।