ডেস্ক নিউজ: অনেক নাটকীয়তার পর বিএনপির মহাসমাবেশ হচ্ছে আজ শুক্রবার (২৮ জুলাই) এবং সেটা হচ্ছে রাজধানীর নয়া পল্টনে। এদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে ‘শান্তি সমাবেশ’ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। এতে আওয়ামী লীগ ও এর অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদেরও যোগ দিতে বলা হয়েছে। এই সমাবেশে এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় গণজমায়েতের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে নেতারা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা আসবে এখান থেকে। নিজেদের নেতাকর্মীদের নির্দেশনার পাশাপাশি বিএনপির প্রতিও কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা আসতে পারে সমাবেশ থেকে।
তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশে নেতাকর্মীদের ব্যাপক গণজমায়েত করতে আওয়ামী লীগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের সমাবেশকারী সংগঠনের ব্যানারে থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপি সমাবেশের নামে অবস্থান কর্মসূচির মতো কোনও পরিকল্পনা করলে প্রতিরোধ করতে বলা হয়েছে। তাতে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও পিছপা হবে না আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, বিএনপি-জামায়াত রাস্তায় নামলে অঘটন ঘটার আশঙ্কা থাকে। আমাদের কর্মসূচি শান্তির পক্ষে এবং নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে।
এদিকে, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অনুমতি পাওয়ার পর মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, মসজিদের দক্ষিণ গেটের বাইরের অংশে কাঠ দিয়ে মঞ্চ বানানো হচ্ছে। এ কাজে নিয়োজিত আছেন ২০-৩০ জন। সেখানে থাকা তিন সংগঠনের নেতাকর্মীদের মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলতে দেখা যায়। রাত ৯টার দিকে শান্তি সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ পরিদর্শনে যান আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।
মঞ্চ তৈরি ও সাউন্ড সিস্টেমের ডেকোরেশনের দায়িত্ব পাওয়া টোটাল সলিউশনের কর্ণধার মোজাম্মেল হক বলেন, ৬৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৮ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে। বিকাল থেকে আমরা কাজ করছি। রাতের মধ্যেই পুরো মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হবে। তারপর সমাবেশস্থল থেকে শুরু করে পল্টন-গুলিস্তানজুড়ে মাইক লাগানো হবে।
শুক্রবার দুপুর ২টায় তিন সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে শান্তি সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আয়োজকরা বলছেন, তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করবেন। কোথাও যাতে কোনও ধরনের সমস্যা না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে কেন্দ্র থেকে মনিটর করা হবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাবে। এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বক্তব্য রাখবেন। এখান থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা দিকনির্দেশনামূলক রাজনৈতিক বার্তা দেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই সমাবেশ বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে শান্তি সমাবেশ। আমাদের নেতাকর্মীরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক আছে, সতর্ক থাকবে। কেন্দ্রীয় নেতারা এখান থেকে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেবেন।
যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সমাবেশের প্রস্তুতির বিষয়ে জানান। তারা বলেন, ঢাকার শান্তি সমাবেশে সতর্ক অবস্থানে থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেবে। অনুমতি পাওয়ার পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে। সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে সমাবেশে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকাল ১০টার পর থেকেই আমাদের লোকজন গাড়িতে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে।
সংবাদ সম্মেলনে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, সমাবেশে যোগ দেবে স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষ। সব শ্রেণি পেশার মানুষ আসবে। সারা দেশের নেতাকর্মীরা যোগ দেবে। তরুণ সমাজের ঢল নামবে। লোকের হিসাব মেলাতে পারবেন না। বাংলার মাটিতে বিএনপি-জামায়াতকে আর স্থান দেবো না।
আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এটা ছাত্র যুব সমাজ মেনে নিতে পারে না। তাই অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা রাজপথে থাকবো। বিএনপি-জামায়াতকে বলবো শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করুন। ষড়যন্ত্র করে লাভবান হতে পারবেন না, জ্বালাও পোড়াও করে আর ক্ষমতায় যাওয়া সম্ভব হবে না।
ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ছাত্র সমাজের প্রয়োজনেই আমরা তিনটি সংগঠন একত্রিত হয়েছি। দলমত নির্বিশেষে লাখো তরুণ-শিক্ষার্থীর সমাবেশ ঘটবে। সব মিলে যে বৃহত্তর ছাত্র ঐক্য তৈরি হয়েছে, এই ছাত্র ঐক্যের ওপর ভিত্তি করেই বিএনপি-জামায়াতের স্থায়ী পরাজয় নিশ্চিত করবো।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।