সিবিএন ডেস্ক:
ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত শনিবার (২৯ জুন) বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, খালেদা জিয়ার ইস্যুতে বিএনপিকে উচ্চ আদালতে যেতে। তার বক্তব্যের দুদিন পর বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে তারা বিচার বিভাগের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করার চেষ্টা করবেন।

সোমবার (১ জুলাই) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত জিয়া্উর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আবারও আইনি উদ্যোগ নেবে বিএনপি। কিছুদিনের মধ্যেই তারা বিচার বিভাগের মাধ্যমে বেগম জিয়াকে মুক্ত করার চেষ্টা করবেন।

এর আগে, গত শনিবার (২৯ জুন) ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, বিএনপি এ বিষয়ে (খালেদা জিয়ার মুক্তি) আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে, উচ্চ আদালতে না গিয়ে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।

সোমবার জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা সুপ্রিম কোর্ট ও ঢাকা কোর্টের আইনজীবীরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে এসেছি, আমরা তার আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য আমরা আজকে শপথ নিয়েছি। ইনশাল্লাহ, অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমরা চেষ্টা করবো, বিচার বিভাগের মাধ্যমেই আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করার জন্য এবং সেজন্য সব আইনজীবী প্রস্তুত আছে। ইনশাল্লাহ, জাতীয়তাবাদী আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এবং আমরা আল্লাহর রহমতে সাকসেসফুল হবো।’

পরে সোমবার রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘সরকার কী পরামর্শ দেবে। আমি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছি। এটা আইনজীবীদের বৃহৎ একটি সংগঠন। আমাকে এটার সভাপতি করা হয়েছে। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এখানে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সঙ্গে কোনও মিল নেই।’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (২১ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর রবিবার (২৩ জুন) অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তার হৃদপিণ্ডে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়।

খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি ব্লক থাকায় আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। পরে বিদেশি চিকিৎসক ও মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে পেসমেকার বসানো হয়। এরপর থেকে স্থিতিশীল রয়েছে তার শারীরিক অবস্থা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে আগেও সরকারের তরফে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কখনও আবেদন করার বিষয়েও মতামত দিয়েছেন একাধিক মন্ত্রী।

গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১)-এর ধারার ক্ষমতাবলে শর্তযুক্তভাবে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফলে খালেদা জিয়াকে আগে যে শর্তযুক্ত মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, সেটিকে বাতিল করতে হবে। বাতিল করে স-অবস্থানে (আগের অবস্থায়) যাওয়ার পর আবার অন্য বিবেচনা করা যাবে।’

সরকারের ওই অবস্থান জানার পর ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছিলেন, ‘বেগম জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর জন্য নতুন করে আদালতে যাওয়ার সুযোগ নেই। বেগম জিয়াকে যে আইনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তা হয়েছে সরকারের নির্বাহী আদেশে। সেক্ষেত্রে এখনও ম্যাডামের বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নির্বাহী আদেশেই হতে হবে।’ -বাংলা ট্রিবিউন