সোয়েব সাঈদ, রামু:

বাড়ি থেকে ডেকে এনে সুপারি চুরির অভিযোগে এতিম শিশুকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। নির্যাতনের পর পুলিশ শিশুটিকে রামু থানায় ২ মাস পূর্বে দায়েরকৃত মোটর সাইকেল চুরির একটি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার দেখিয়ে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন।

এ ঘটনাটি ঘটেছে কক্সবাজারের রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের সিকদারপাড়া এলাকায়। এ ঘটনায় জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে গ্রামবাসী। চুরির অপবাদে শিশুটিকে নির্যাতনকারীদের মধ্যে একজন ইউপি সদস্যও রয়েছেন। শারীরিক নির্যাতন ছাড়াও শিশুটির গলায় সুপারি ঝুলিয়ে ও মাথার চুল কেটে দিয়ে এলাকায় ঘুরানো হয়।

নির্যাতনের শিকার মো. বাবুল (১৬) রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সিকদারপাড়া এলাকার মৃত মঞ্জুর আলমের ছেলে। শিশুটির মা আমিনা বেগমও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন।

মো. বাবুলের খালা রাহেলা বেগম জানান- সুপারি চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তার ভাগিনা বাবুলকে হাতুড়ি, লাঠিসোঁটা দিয়ে পুরো শরীরে আঘাত করেছে। এমনকি অন্ডকোষসহ শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গগুলোতে আঘাত করা হয়েছে। আঘাতের ফলে বাবুলের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হয়েছে। দুই হাত থেঁতলে দেয়া হয়েছে।

আরো পড়ুনঃ নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী কাবেরী’র গণসংযোগ

মো. বাবুলের মামা মুফিজুর রহমান জানিয়েছেন- বাবুল টমটম চালাতেন। গত শুক্রবার সকাল আটটায় বাবুলকে এলাকার রাকিব ও তানজিদ নামের দুই কিশোর তার টমটম গাড়িটি ভাড়া করে সুপারি নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে রাকিব, তানজিদ ও টমটম চালক বাবুলকে সুপারি চোর আখ্যায়িত করে তাড়া করেন- স্থানীয় মৃত জালাল আহমদের ছেলে জয়নাল, কবির আহমদের ছেলে কামাল, ইউসুফ জালালের ছেলে জহিরুল ইসলাম ও ওসমান গনির ছেলে মো. হানিফ। এসময় রাকিব ও তানজিদ পালিয়ে গেলে টমটম চালক মো. বাবুলকে ধারে সুপারি চোর আখ্যা দিয়ে মারধর শুরু করা হয়। পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হকও ঘটনাস্থলে গিয়ে মো. বাবুলকে নির্যাতন চালান এবং মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পুলিশকে অবহিত করেন। ব্যাপক মারধরের ফলে মো. বাবুল ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে থাকেন। স্থানীয়রা এ দৃশ্য দেখলেও হামলাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ছবি তোলার সাহস পায়নি।

শিশু বাবুলকে নির্যাতনকারীরা পুলিশকে খবর দিলে রামু থানার উপ-পরিদর্শক সুনয়ন বড়ুয়া ও উপ-পরিদর্শক অসীম ঘটনাস্থলে যান। এ দুজন পুলিশ কর্মকর্তা মো. বাবুলকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে রামু থানায় নিয়ে যান এবং পরে শিশুটিকে ২ মাস পূর্বে দায়েরকৃত একটি মোটর সাইকেল চুরির মামলায় জড়িত উল্লেখ করে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেয়।
বাবুলের মামা আরও জানান- পুলিশ নেওয়ার পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বাবুলের চিকিৎসা চালানো হয়। কিন্তু স্বজনদের দেখার সুযোগ দেওয়া হয়নি।

গ্রামবাসীর মানববন্ধন

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এ ঘটনায় অভিযুক্ত জয়নাল জানান- শুক্রবার ভোরে আমার বাগান থেকে সুপারি চুরি করার সময় পেশাদার চোর মো. বাবুল সহ ৩ জনকে স্থানীয় ছেলেরা তাড়া করে। এসময় সুপারি ভর্তি টমটম গাড়িযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাবুলকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পরে বাবুলকে একটি দোকানে রেখে টমটম গাড়িতে আনতে গেলে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বাবুলকে মারধর করে। পরে স্থানীয় মেম্বারের কল করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে বাবুলকে আটক করে নিয়ে যায়। তবে তাকে কোন মামলায় জড়ানো হয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না। এমনকি তিনি কোনো মামলাও করেননি।

তিনি আরও জানান- বিগত নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নির্বাচনের জেরে একটি মহল তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। নির্বাচনী বিরোধের জেরে প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তিরা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

শিশুটিকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে রামু থানার উপ-পরিদর্শক সুনয়ন বড়ুয়া জানান- সুপারি চুরি নয়, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় শিশুটিকে আটক করা হয়েছে।
তবে বিপরীতমুখী তথ্য দিয়েছেন ঘটনাস্থলে যাওয়ার উপর উপ-পরিদর্শক অসীম। তিনি জানিয়েছেন- সুপারি চুরির অভিযোগেই জনতা বাবুলকে আটক করে পুলিশে দিয়েছিলো। কোন মামলা না থাকায় তাকে আগের মোটর সাইকেল চুরির একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে।

রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু তাহের দেওয়ান জানিয়েছেন- তিনি নিজেই এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। নির্দোষ হলে এতিম হলে ছেলেটিকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ারও উদ্যোগ নেবেন।

আরো খবর

কক্সবাজারে রাজনৈতিক দলের দক্ষতা উন্নয়নে ‘নাগরিক’ প্রকল্পের কর্মশালা

ড. ইউনূস ও ভিন্নমত পোষণকারীদের আইনি প্রক্রিয়ায় হয়রানি করা হচ্ছে: জাতিসংঘ

আরো খবর পেতে যুক্ত থাকুন CoxsbazarNEWS.com এর সাথে।

Spread the love