আলমগীর মাহমুদ

ক’দিন আগের ঘটনা। উখিয়া কলেজ থেকে ফিরতি পথে। মরিচ্যা চেকপোষ্টে বি,জি,বি’র মাঝবয়েসী এক জোয়ান গাড়িতে উঠে চেক করছেই। আমার সিটের পাশে দাঁড়িয়ে বি,জি,বি ‘র জোয়ান বেশ একশনের শব্দশৈলী- বাড়ি কোথায়?

…..বিডিআর ক্যাম্প বলাতে। বেশ গোস্বা হয়ে দাঁড়িয়ে আবারও.. কোথায়? আমি আবারও বলি বি,ডি,আর ক্যাম্প। এবার সে বেশ মাইন্ড করে… ভাবসাবে দেই অদ্ভুত আবহ এই বেটা কয় কি!

সাথে সাথে আমি বুঝে নেই সে হয়ত বুঝে নিয়েছে বাড়ি বি,জি,বি’র কম্পাউন্ডের ভেতর, হয়ত ভেবে পাচ্ছে না আমার বাড়ি বি,জি,বি”র কম্পাউডের ভেতর হয় কেমনে!

রিপিট করে কই আপনাদের স্কুলটার পাশে। সরল অংকের উত্তর মেলাতে পারলে যে সুখ ছোটকালে মনে বইতো এমন আবহে সে এবার বলতে রয় এইটা এনা বলবেন!

বি,ডি,আর ক্যাম্প এখন বি,জি,বি”র কম্পাউন্ডে সীমাবদ্ধ নাম নেই সেটি এখন ব্যাপক পরিসরে। একটি এলাকার নাম। একটি সীমানার নাম।লোকমুখে ধারিত পরিচিতির জন্মঠিকানায় ব্যবহৃত নাম তাকে বুঝাতে চাইলাম না যদি কথা বাড়ে..!

গাড়ী চলছেই আমার মনে বাঁজতে রয় বি,জি,বি’র এমন বুঝা তাতো বেঠিক নয়। বি, ডি,আর ক্যাম্প নাম হবার আগে এই এলাকারইবা কি নাম ছিল! যে বি,ডি,আর ক্যাম্পের নামে এই এলাকার নাম সে ক্যাম্পেরইবা এই এলাকায় আগমন ইতিহাস কি!

ময়মুরুব্বি বিভিন্ন লোকজ প্রকাশনা থেকে সপ্তাহব্যাপী তল্লাশীতে উঠে আসে বর্তমান কক্সবাজার মহিলা কলেজ স্থিত স্থানেই ছিল এই বি,ডি,আর ক্যাম্পটি। ওখান থেকেই এটি স্থানান্তারিত বর্তমান স্থিত স্থানে।স্বাধীনতার পরে।

C.S (1898) জরীপের পূর্বে এই এলাকা শাসন করতো মগ জাতি। মগ সামন্ত অংচিতাইন মগ নামের এক সামন্তের জমিদারীর আওতায় ছিল এই এলাকা । এলাকার মানুষের কাছে সে পরিচিত ছিল ‘অঞ্জা মইগ্যা’ নামে। এই মগ সামন্ত অঞ্জা মইগ্যার নামেই লোকমুখে পুরো এলাকার নাম হয়ে পড়ে ”অঞ্জাইল’

অঞ্জাইলের পরে এই এলাকা ঝিলংঝা হিসেবে পরিচিতি পায়। তাও নামকরন হয় সামরাইয়ের প্রবাহমান ধারার যে খালটি সিকদার পাড়া চৌধুরীপাড়ার বুক চিরে বর্তমান এস,এম পাড়ার লাগোয়া হয়ে বাঁকখালীতে গিয়ে মিশেছে ( এখন মানুষের আগ্রাসনে বিলুপ্তির পথে) এই সামরাইয়ের পশ্চিম তীর পুরোটাই জমে থাকা পানিতে ডোবা বিল ছিল।

এলাকাবাসীর কাছে এমন ভূমি ‘ঝিল’ হিসেবে পরিচিত। ঝিলস্থিত পুরো ভূমির মালীক ছিল অঞ্জা নামের এই মগ সামন্ত। তাঁর নামের সাথে এই ঝিলের জমিদারের নামের মিলিয়ে এই এলাকা অঞ্জা মইগ্যার নামে পরিচিতি পায় ঝিলংঝা হিসেবে। (অঞ্জাইলের পরে একটি খন্ডিত অংশের নাম)এই জলাভূমির বিশাল অংশের নামকরণ দেখা যায় ঝিলওয়াঞ্জা।

R.S জরীপে ভূমির সীটে বৃটিশেরা এই বানানটি ধারণ করে ঠিক এইভাবে ‘ঝিলওয়াঞ্জা’।

ঝিলংঝা, ঝিলংজা এই বানান চাটগাঁইয়া ভাষায় ঐ’ ঝিলওয়াঞ্জা’রই পরিবর্তিত রূপ।

ঝিলংঝা পরব্তীকালে একটি ইউনিয়নের নাম হয়। কক্সবাজার পৌরসভার সীমানাবাদে খরুলিয়া পর্যন্ত ছিল এর সীমানা। এই পুরো এলাকাটাই পূর্বের ‘অঞ্জাইল’ ছিল বলে ৮৫ উর্ধ্ব মুরুব্বীরা জানায়।

এই অঞ্জাইল থেকেই বিভিন্ন নামে খন্ডে খন্ডে এলাকার আলাদা আলাদা নাম ধারিত। যেমন..পেতা সাওদাগর পাড়া, বড়ুয়াপাড়া সিকদার পাড়া,ত..লি পাড়া, চৌধুরীপাড়া, সিবা তইল্যা বড়ুয়া পাড়া, এস,এম পাড়া বি,ডি,আর ক্যাম্প……!


লেখক:- বিভাগীয় প্রধান।সমাজবিজ্ঞান বিভাগ।উখিয়া কলেজ কক্সবাজার।
alamgir83cox@gmail.com