মিজানুর রহমান:
জাপান সফর নিয়ে আমি প্রথম পর্বে “জাপান সফর ও কিছু কথা” শিরোনামে লিখেছিলাম। তুলে ধরেছি অনেক অভিজ্ঞতার কথা। দ্বিতীয় পর্বে থাকছে জাপান সফরের শিক্ষা।

সফরে আমাদের প্রশিক্ষণের বিষয় ছিল “Study Tour ” যেহেতু জাপানি সরকারি সংস্থা AOTS এর ব্যবস্থাপনায় জাপান সফর, সেহেতু তাদের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় পৃথিবীর ২য় সর্বোচ্চ টাওয়ার Tokyo Sky tree শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সাক্ষাৎ, assakossa Temple, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সচিবালয়, রাজার ঐতিহাসিক সমাধিস্থল ও একটি প্রাচীনতম ও বিখ্যাত মসজিদ।

সময় স্বল্পতায় মাত্র কয়েকটি বিষয় তুলে ধরতে চাই…
১। টোকিওতে প্রাচীনতম মসজিদ তুর্কিদের তত্বাবধান ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
আমরা জোহর ও আসরের নামাজ ঐ মসজিদে একসাথে জামাতের সহিত আদায় করার পর তত্ত্বাবধায়ক হাসান সাহেবের সাথে দেখা হয়। মরক্কোর নাগরিক এই ভদ্রলোক লোক ভালোই ইংরেজি জানে।
আমরা জাপানের মুসলমানদের কি অবস্থা জিজ্ঞেস করতেই উনি বলেন ১% মুসলমান টোকিওতে, (যাচাই-বাছাই করার সময় পাইনি)
সবাই জাপানিদের মত পরিশ্রমি, সময়ানুবর্তি, পরোপকারী ও পরিষ্কার -পরিছন্ন।
জাপানিদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়া যায় কিনা, কিভাবে দেওয়া হয় তা জিজ্ঞেস করতেই উনার উত্তর শুনে মনটা ভরে গেল।
মসজিদে একটি Research center আছে যেখানে জাপানিরা সময় পেলে এখানে আসে ও ইসলাম সম্পর্কে জানতে চায়।
(আমরাও দেখলাম প্রচুর অমুসলিম পর্যটক/জাপানি মসজিদে নামাজ পড়া দেখছিল।)
হাসান সাহেব বলেন, প্রতিমাসে কমপক্ষে ৮/১০ জন এই সেন্টারে এসে ইসলাম সম্পর্কে পড়ালেখা করে পবিত্র ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করেন, আলহামদুলিল্লাহ।
এ বিষয়ে আরও অনেক আলাপ হয়েছে ইনশাআল্লাহ সময় হলে লিখার চেষ্টা করব।
তবে বাংলাদেশের মসজিদগুলোকে এরকম রিসার্চ সেন্টার বানানো যায় কিনা ভেবে দেখতে হবে।

২। ছাত্র- শিক্ষক সাক্ষাৎ,
অনেক শিক্ষক ও ছাত্রদের সাথে কথা বলেছি যদিও বা ছাত্র-ছাত্রী ইংরেজি কম বলতে পারে তথাপি শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি ও তাদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের সাথে কথোপকথনের চেষ্টা করেছি,
তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আলোচনা, ছাত্ররাজনীতি,
নানাবিধ আলোচনায় শুধু একটা বিষয় বলব।
একদম নার্সারি হতে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাটা মুলত সম্পূর্ণ নৈতিক শিক্ষা বলা যায়।
অর্থাৎ জাপানের কৃষ্টি-কালচার, মানবিকতা, ভদ্রতা, পরস্পরের প্রতি আচরণ, দায়িত্ববোধ,ট্রাফিক নিয়ম হতে শুরু করে সত্যবলা, পরিশ্রমপ্রিয়তাসহ আলোচনার তিনটি বিষয় মুলত উঠে আসে এবং প্রতিষ্ঠানে নার্সারি হতে কিভাবে তা শিক্ষা দেওয়া হয় ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ হয়।
(সিলেবাস, পরীক্ষা পদ্ধতি ও অন্য বিষয় নিয়ে পরে আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ)।
ছাত্ররাজনীতি বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই বলে, কোন ছাত্র রাজনীতি নেই।
বিভিন্ন বিতর্ক, ওয়ার্কশপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার বিধিমালা, নেতৃত্বের বৈশিষ্ট্য, সুনাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য বিষয়ে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়।(পাঠ্যপুস্তকে/সিলেবাসে তো আছেই।
গোটা টোকিও শহরে প্রধানমন্ত্রীসহ কোন নেতা-নেত্রীর একটা ছবিও কোথাও ঝুলতে না দেখাটা আমার নিকট নবম আশ্চর্য মনে হয়েছে।
হায়রে!!!! আমার দেশ!!! তৈলাক্ত পোষ্টার, বিলবোর্ডে ঢাকাসহ গোটাদেশ মুক্ত হবে কবে।

৪। মনে করতাম জাপানিরা আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের মত টোকিওর /রাজধানীর রাস্তায় রাস্তায়, সংসদ ভবনের পাশে কিংবা রাজার সমাধিতে (অনেকটা বোটানিক্যাল গার্ডেনের মত, বিশাল এলাকায় প্রচুর গাছপালা) জোড়ায় জোড়ায় বসে বাদাম, ঝালমুড়ি ও পরস্পরের আবেগিয় মুহূর্তের চরম আধুনিকতার নিদর্শন দেখাবে।

দুঃখিত আমি টোকিওর মত বিশ্বের অন্যতম সেরা শহরে আমার দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মত নষ্টামি দেখিনি।
চলবে…

মিজানুর রহমান
শিক্ষা উদ্যোক্তা ও
অধ্যক্ষ, আইডিয়াল ইনস্টিটিউট স্কুল এন্ড কলেজ বাংলাবাজার।