তাওহীদুল ইসলাম নূরী
হিজরি সনের সর্বশেষ মাস জিলহজের চমৎকার দিনগুলো আমরা অতিক্রম করে চলছি। দিন যতই যাচ্ছে ঈদুল আযহা তথা কোরবানির জন্য আমাদের উচ্ছ্বাস ততই বাড়তেছে। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার আগে থেকেই কে কত বড় পশু দিয়ে কোরবানি করতে পারি তার উৎসবে আমরা মেতে উঠেছি। আসলেই কি কোরবানের শিক্ষা তা? শরীয়াতের আলোকে সামান্য পর্যালোচনা করে দেখা যাক
প্রথমেই প্রশ্ন জাগে কোরবানি কী?
কোরবানি হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর সুন্নাত। শরীয়াতের পরিভাষায় “প্রাপ্ত বয়স্ক,সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মুসলিম ব্যক্তি (মুসাফির এর অন্তর্ভুক্ত নয়) যিনি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় নব্বই হাজার (৯০,০০০) টাকা, তিনি যে জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সূবহে সাদিকের শেষে ঈদুল আযহার নামাজের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুুষ্টির উদ্দেশ্যে রাসুল (স.) এর নির্দেশিত পন্থায় পশু যবেহ করেন তাকে কোরবানি বলে”৷ ইমাম আবু হানিফার মতে, পরিবারের ভরণপোষণের পর যদি কোন ব্যক্তির একটি ছাগল ক্রয়ের সামর্থ্য থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তিরও কোরবানি করা কর্তব্য। কোরবানির গুরুত্ব বুঝাতে গিয়ে রাসুল (স.) বলেছেন কুরবানের দিন কোরবানির চেয়ে উত্তম আমল আর নাই। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়।
আবার অনেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি আছেন যারা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে কোরবানি দেন না, তাদের ব্যাপারে বিশ্বনবী (স.) বলেছেন “সামর্থ্য থাকার পরেও যে ব্যক্তি কোরবানি করবে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে”।
সমগ্র বিশ্বের সকল যুগের,সকল সম্প্রদায়ের জন্য যিনি রহমতস্বরুপ প্রেরিত হয়েছেন সেই দয়ার নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর এই কঠোর বাণী থেকে কোরবানি যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সহজে অনুমেয়। আসলে সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানির মত একটি একদিকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত, অপরদিকে অন্যতম ধর্মীয় উৎসব থেকে নিজেকে বঞ্চিত করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
কোরবানি আল্লাহর তরফ থেকে বান্দার উপর চাপিয়ে দেয়া কোন বোঝা নয় বরং এটি আমাদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) এর মর্মস্পর্শী স্মৃতি বিজড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত এবং ধর্মীয় উৎসবের নাম। আল্লাহতায়ালা বলেন,
“আল্লাহর কাছে কোরবানির পশুর গোশত,রক্ত কিছুই পৌঁছে না। পৌঁছে শুধু বান্দার তাকওয়া”।
লোক দেখানো কোন ইবাদাতই কবুল হয় না এবং সবচেয়ে জঘন্যতম জুলুম শিরক হিসেবে গণ্য হয়৷ কোরবানির ক্ষেত্রেও একই হুকুম। অনেক ব্যক্তি আছেন যারা সামর্থ্য থাকার পরেও তাকওয়া থেকে নয় বরং ব্যবসায়-চাকরীর সহকর্মী,পাড়া-পড়শী কোরবানি না করলে সমালোচনা করবে এই চিন্তা থেকে কোরবানি করে থাকেন, তাদের কোরবানিও শিরক বলে গণ্য হবে। কারণ,আল্লাহ বলেছেন
“বল,…আমার নামাজ,আমার কোরবানি, আমার রোজা সব আল্লাহর জন্য”।
তাই, আমরা যারা বিত্ত এবং চিত্তের অধিকারী তাদের খুশি মনে পরিপূর্ণ তাকওয়ার সাথে কোরবানি করা উচিত। শুধু পশু দিয়ে কোরবানি নয়, পশু কোরবানির সাথে সাথে আমাদের ভিতরকার পশুত্বকেও কোরবানি দিতে হবে। সর্বোৎকৃষ্ঠ জন্ত জবাই করার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ করি, তেমনি ইসলামের প্রয়োজনে যে কোন ত্যাগ স্বীকারের মনোবৃত্তি মনের মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। অন্যথায়, কোরবানী শুধুমাত্র উৎসব কিংবা খাওয়া-দাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তাই, আমাদের সবকিছুর ঊর্ধ্বে ইসলামের পতাকাকে সমুন্নত রাখতে হবে। তবেই পরিপূর্ণ হবে কোরবানির শিক্ষা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে শিরকসহ সমস্ত রিয়ার ঊর্ধ্বে থেকে পরিপূর্ণ তাকওয়া নিয়ে কোরবানি করার তৌফিক দিন। সাথে সাথে দুনিয়া,আখিরাত উপযোগি একজন মানুষ হিসেবে কবুল করুন আর সমস্ত ভুলত্রুটি বাদ দিয়ে কবুল করুন আমাদের সকলের কোরবানি।
লেখক : প্রাবন্ধিক, সমাজ ও মানবাধিকার কর্মী। শাহারবিল সদর, চকরিয়া, কক্সবাজার।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।