মিজানুর রহমান:
জাপান সফর নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে লিখেছিলাম জাপান ‘সফরের শিক্ষা’ শিরোনামে। আজকের তৃতীয় পূর্বে থাকছে আর গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য, কথাবার্তা।
প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাপান আমাদের চেয়ে কতশত বছর এগিয়ে ভাষায় বুঝানো অসম্ভব। চোখে না দেখলে মনে হবে নতুন জাপান এসে বাড়িয়ে বলছি।
টোকিও হতে বিশ্বের অন্যতম দ্রুতগামী বুলেট ট্রেনে করে আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় জাপানের আরেকটি বিখ্যাত শহর নাগাওয়াতে।
সেখান হতে নির্ধারিত বাসে করে (প্রায় ১.৩০ সময় লেগেছে)নিয়ে যাওয়া হয় TOYOTA শহরে।
এটা মুলত একটা গ্রামীন জনপদ, কিন্তু একটা কোম্পানি বিশাল গ্রামকে কিভাবে শহরে রূপান্তরিত করল ভাবতে অবাক লাগে।
(টয়োটা কোম্পানির ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থার বিবরণ সম্বলিত একটি লিফলেট দিয়েছে তাই কোম্পানির সম্পর্কে পরে বিস্তারিত লিখব ইনশাল্লাহ)
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপূর্ব নির্মাণশৈলীর নিদর্শন হয়ে দাড়িয়ে আছে চোখজোড়ানো সারি সারি দালান /ভবন।
রাস্তা-ঘাট টোকিও শহরের মত বড় ও প্রশস্ত। আমাদের মোবাইল /প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নিয়ম অনুযায়ী গাড়িতে রেখেই বিশ্ববিখ্যাত Toyota কোম্পানির একটা কারখানায় নিয়ে যাওয়া হল।
গিয়ে আমরা সবাই অবাক হয়ে গেলাম রোবট কতৃক Car ধরনের গাড়ির প্রাথমিক নির্মাণকার্য দেখে।
বর্ণনা দেওয়ার ভাষা নেই, এতবড় কারখানায় শত শত রোবট কাজ করছে নিরবচ্ছিন্নভাবে।
আরেক ভবনে নিয়ে শ্রমিক ও যন্ত্র একসাথে কিভাবে কাজ করে দেখানো হল।
মাত্র পচাত্তর হাজার শ্রমিক এখানে কাজ করে অথচ কারখানার কোথাও রং,ধুলাবালি বা ময়লা কাপড়যুক্ত একজন মানুষ ও দেখতে না পেয়ে হতাশ হলাম।
বিশাল কারখানার কোন স্থানে ময়লা -আবর্জনার স্তুপ কিংবা যন্ত্রপাতি এলোমেলো পড়ে আছে কিনা খোঁজতে গিয়ে নিদারুণ মনঃক্ষুণ্ন হয়েছি কারণ আমাদের সাথে তুলনা করার মত অন্তত একটা ময়লা-আবর্জনাযুক্ত যায়গা পাব বলে অনেক আশা করেছিলাম but ব্যর্থ হলাম।
এত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও কোনদিন দেখতে পাব স্বপ্নেও ভাবেনি। মনে হয়েছে একাধারে ১৪/১৫ বছর এ প্লাসের পড়ালেখা না করিয়ে নৈতিক শিক্ষা ও কৃষ্টি-কালচার শিখানোর পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে না পারলে কোনদিন উন্নত জাতি হিসেবে পরিচয় দেওয়া সম্ভব হবেনা। বিশেষ করে এ রকম কারখানা (সরকারি / বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তুলে আমাদের ছাত্রদের সেখানেই প্রেক্টিকেল ক্লাস করাতে পারলে তারা প্রিয় সোনার বাংলাকে,প্রিয় জাতিকে অনেকদূর এগিয়ে নিতে পারবে।
আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে,
কিংবা হাটটিমা টিম টিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম, তাদের মাথায় —–দু’টি শিং।
এরকম অবাস্তব কাল্পনিক লেখাপড়া শিখিয়ে সম্ভাবনাময় একটি জাতির প্রজন্মকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে।
ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে সম্ভাবনাময় একটি জাতির ভবিষ্যৎ।
জাপানিদের মত পরিশ্রমী, উদার, বিনয়ী পরোপকারী ও পরিষ্কার -পরিছন্ন জাতি তৈরি করতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় এখনই পরিবর্তন আনা দরকার, যারা পরিবর্তনের চেষ্টা শুরু করেছে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে তাদের পাশে দাড়ানো উচিত।
আমি যতটুকু দেশে সরকারি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছি তাতে মনে হয়েছে বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনে যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে খুব বেশি সফল হচ্ছে কিনা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
কাকে দিয়ে পরিবর্তন করবেন?
ওই সৎ, যোগ্য, পরিশ্রমি ও দেশপ্রেমিক মানুষ গুলোকে খুঁজে বের করে (কোনদল করে সেদিকে চিন্তা না করে)
আগামী ৫০ বছরের শিক্ষা পরিকল্পনা গ্রহণ করে ঐ বাছাইকৃত মানুষের হাতে শিক্ষার টোটাল ডিপার্টমেন্টেের দায়িত্ব তুলে দেওয়া উচিত।
ক্যাম্পাসে শিক্ষক-ছাত্ররাজনীতি সারাজীবনের জন্য আইন করে নিষিদ্ধ করা এখন সময়ের দাবি।
ছাত্রদের মাঝে নোংরা রাজনীতি ডোকানোর কেবিনেট সিস্টেমের মত জাতীয় রাজনীতির বস্তাপঁচা দুর্ঘন্ধ না ছড়িয়ে উন্নত বিশ্ব বা প্রথম বিশ্বের দেশ জাপানিদের মত বাস্তব জ্ঞান সম্পন্ন, পরিশ্রমি,বিনয়ী উদার,সহনশীল, পরিষ্কার -পরিচ্ছন্ন ও বিজ্ঞান -প্রযুক্তি নির্ভর জাতি তৈরি করার পরিকল্পনা এখনই হাতে নিতে হবে।
জাপানিদের প্রতিষ্ঠানে, টয়োটা কোম্পানির দেওয়ালে লিখা today for tomorrow,
Start your impossible.
We born for other.
আমরা ও ইনশাআল্লাহ অসম্ভব দিয়ে শুরু করতে চাই।
চলবে…
মিজানুর রহমান
শিক্ষা উদ্যোক্তা ও
অধ্যক্ষ, আইডিয়াল ইনস্টিটিউট স্কুল এন্ড কলেজ, বাংলাবাজার।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।