গোলাম মোস্তফা
বাংলাদেশের সংবিধানের প্রতি যথাবিহিত শ্রদ্ধা ও সম্মান রেখে বলতে চাই প্রথমত, বাংলাদেশের সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতি ১৯ (১) পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে “ সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সবসময় সচেষ্ট হইবেন” ।
এই লাইনটা বিশ্লেষণ করলে মনে হয় বর্তমানে সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের সময়সীমা ৩০ বছর হচ্ছে কিছুটা সংবিধান পরিপন্থি ও সাংঘর্ষিক।
কিছু বিষয় পর্যালোচনা করলে দেখা যায়-
১. ঢাকা শহরে যাদের বেড়ে ওঠা এবং যেই সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে বা গ্রামে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না।
২. পড়াশোনা শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকে চাকুরির পড়াশোনা করতে পারে। যেখানে ঢাকার অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের জন্য তা কষ্ট সাধ্য। ফলে তারা পাশাপাশি চাকুরি করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বেশী এগিয়ে থাকছে। ফলে সমতা নিশ্চিত হচ্ছে বলে মনে হয় না।
৩. বিভিন্ন বিভাগের কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই একসাথে পাশ করে সনদ নিয়ে বের হতে পারে না। ফলে কেউ দুই তিন বছর এগিয়ে থাকে। কেউ আবার পিছিয়ে।
এই ক্ষেত্রেও সমতা নিশ্চিত হচ্ছে বলে মনে হয় না।
৪. সকল পরিবারের আর্থিক অবস্থা এক না। অনেককেই দেখি কঠিন অবস্থা দূর করতে সাময়িক চাকুরি করে পরিবারের দুরবস্থা দূর করে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই চাকুরির পড়াশোনা করতে এসে দেখে বয়স শেষের দিকে। অপরদিকে সচ্ছল পরিবারের কেউ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এগিয়ে থাকছে।
এখানেও সমতা হচ্ছে বলে মনে হয় না।
৫. আবার সাইন্টিফিক ভাবে দেখলে বুঝা যায় আমাদের কারো শর্ট-টার্ম মেমোরি আবার লং-টার্ম মেমোরি। শর্ট-টার্ম মেমোরির মানুষগুলোর জন্য যুদ্ধটা কঠিন। ঠিক এই কারণেই কারো প্রথম বারেই বিসিএস, অন্যান্য সরকারি চাকুরি হয় আবার কারো ৫ বারে গিয়ে হচ্ছে। অথচ এই ব্যাপারটা আল্লাহ প্রদত্ত। বয়স ৩০ এর কারণে অনেকেই আফসোস আর হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। এখানেও সমতা হচ্ছে না।
উপরের আলোচনা গুলো থেকে বোঝা যায় যে..
দৌড় প্রতিযোগিতার কথা চিন্তা করলে দেখা যায় –
কম দূরত্ব ঠিক করে দিলে প্রকৃত দৌড়বিদ পাওয়া যাবে না। সিস্টেমের কারণে কিংবা জন্মগতভাবে সুবিধা নিয়ে আসা ব্যক্তিরাই সফল হবে।
দূরত্ব বাড়িয়ে দিলেই সুবিধাবঞ্চিতরাও সুযোগ পাবে। টিকে থাকার লড়াইয়ে সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে।
তখন অনেকাংশেই বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সমতা নিশ্চিত হতে পারে বলে মনে হয়।
চাকুরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হলে..
পাশাপাশি আরেকটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়।
বাংলাদেশের যেকোনো সরকারি চাকুরিতে প্রবেশের সময় ন্যূনতম ৩ বছরের কৃষি কাজের অভিজ্ঞতা অবশ্যই বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
শেষ NTRCA পরীক্ষার আবেদন করেছে প্রায় ১৮ লক্ষ পরীক্ষার্থী।
এরা সবাই যদি ন্যূনতম ১ শতক জমি চাষাবাদ করে তাহলে ১৮ লক্ষ শতক জমি চাষ হয়। বাংলাদেশে একটাও জমিও আবাদ পড়ে থাকবে না। ফলে, খাদ্যশস্য বর্তমান দামের থেকে অর্ধেক কমে যাবে।
চাহিদার তুলনায় যোগান বেড়ে গেলে দ্রব্যমূল্যের দাম নিম্ন মুখি হয়।
রপ্তানি হারও বাড়বে।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে।
অর্থনীতিকে একটা দেশের উন্নয়নের মেরুদণ্ড হিসেবে ধরা হয়।
সরকারি চাকুরিতে শুধুমাত্র মেধাবী প্রার্থী থেকে দেশপ্রেমিক মেধাবী দরকার। মাটি ও মানুষের সাথে মিশে যাওয়া লোক দরকার। কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে যুবকদের তাজা রক্তকে কাজে লাগানো যাবে। অহেতুক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বসে বসে কিংবা বেকার ঘুরে ফিরে সময় নষ্ট হবে না। চাকুরিতে ব্যর্থ হলেও কৃষি কাজ করার মন মানসিকতা তৈরি হবে।
এই পরিকল্পনায় দেশপ্রেমিক ও মেধাবী যোগ্য প্রার্থীও পাওয়া হবে আবার দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও ঘুরে দাঁড়াবে।
দেশের একটা আমূল পরিবর্তন দরকার।
এই পরিকল্পনাটা ভালো কিছু নিয়ে আসবে আশা করি।
লেখক : প্রভাষক, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগ। কক্সবাজার সিটি কলেজ,কক্সবাজার।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।