মিজানুর রহমান:
১। জাপানিরা খুবই পরিশ্রমী, কাজকর্মে হাটাহাটি নয় বরং হাল্কা দৌঁড়ায়। এরা এমন সময়ানুবর্তি যে, সকালের নাস্তার শেষ টাইম ছিল সকাল ৮.৩০ টা। আমি ৮.৩১ মিনিটে পৌঁছার কারণে নাস্তা পাইনি। অবশ্যই আমার অবস্থা দেখে এক হোটেল কর্মি দ্রুত হেল্প করেছেন। (পরিশ্রম ও সময়ের প্রতি গুরুত্ব প্রদানের আরও উদাহরণ পরবর্তীতে লিখব, ইনশাল্লাহ)
২। এরা অত্যান্ত পরোপকারী, মানবিক, বিনয়ী ও ভদ্র, মনে হয় অপরের / পরস্পরের কল্যাণেই এদের জন্ম।
না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না যে, এরা পরপরস্পরের প্রতি কি ভীষণ শ্রদ্ধাশীল, সহযোগী ও কল্যাণকামি।
আমার অসুস্থতার বিষয়ে সামান্য আলাপে সেমিনার /প্রশিক্ষণ শেষে কো-অর্ডিনেটরসহ কমপক্ষে পাঁচজন জাপানিজ আমার সাথে কথা বলেছেন কিভাবে সহযোগিতা করা যায়।
জাপানিরা খুব বেশি কাজকে ইনজয় করে, যতবেশি অপরের চেয়ে নিজে কাজ করতে পারে এবং অপরকে তার কাজে সহযোগিতা করতে পারে তত বেশি খুশি, হাসি মুখে কথা বলে আর শুধু অপেক্ষায় থাকে কারও অসুবিধায় পাশে দাড়িয়ে সহযোগিতা করার জন্য এতে তারা গর্ববোধ করে।
অহংকার প্রদর্শন, হিংসা -বিদ্বেষ পোষণ, অপরের এগিয়ে যাওয়া বা সফলতা দেখে সহ্য না হয়ে তার পেছনে লাগা বা তার ব্যপারে খারাপ মন্তব্য করা বা তার ক্ষতি কামনা করা এই অসৎগুণাবলি মুক্ত মানুষ ও যে পৃথিবীতে আছে তা আমার দেশের মানুষেরা না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেনা।
কারণ ছোট হতে যে গুণাবলী নিয়ে আমরা বড় হয়েছি, এরকম খারাপ /অসৎগুণাবলিমুক্ত মানুষ যে পৃথিবীতে থাকতে পারে তা না দেখলে কিভাবে বিশ্বাস হয় বলেন তো????
৩। জাপানিরা খুবই পরিষ্কার -পরিছন্ন জাতি। এয়ারপোর্ট হতে রাস্তাঘাট, হোটেল, রেস্তোরাঁ কোথাও একফোঁটা ধুলাবালি, ময়লাআবর্জনা এমনকি একটুকরো কাগজ ও দেখেনি।
(বিস্তারিত পরে লিখব)
তবে পবিত্র কোরআনের দুটি আয়াত ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুটি হাদিস বেশি বেশি মনে পড়ছে,
আয়াতঃ “তোমাদেরকে শ্রমনির্ভর করে সৃষ্টি করেছি” -সূরা বালাদ।
আয়াতঃ “তোমরা হলে সর্বোত্তম জাতি মানুষের কল্যাণে তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।”

হাদিস: অহংকার করোনা, আগুন যেমন কাঠকে ধ্বংস করে তেমনি অহংকার মানুষকে শেষকরে দেয়।
অহংকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এরকম অসংখ্য হাদিস আছে জাতি হিসেবে আমরা খুব বলি কিন্ত কেউ মানি না।
হাদিস: ” পরিষ্কার -পরিছন্নতা ঈমানের অঙ্গ ” বলি কিন্তু মানি না।
যে ক’ দিনে যা দেখলাম ও শিখলাম উপরের দুইটি আয়াত ও দুটি হাদিস বুঝে হোক, না বুঝে হোক জাতির উন্নতি, কল্যাণ ও শান্তির জন্য জাপানিরা সম্পূর্ণ মেনে চলে,
এবার চিন্তা করুন ছয়হাজার ছয়শত ছেষট্টিটি আয়াত ও লক্ষ লক্ষ হাদিস হতে নিজেদের উন্নতির জন্য, জাতির উন্নতির জন্য, সুখ,শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য (জেনে বা না জেনে)) মাত্র দুটি আয়াত ও হাদিস
মেনে চলে যদি উন্নত ও শ্রেষ্ঠ জাতি হতে পারে আমরা কেন ছয়হাজার ছয়শত ছেষট্টিটি আয়াত ও লক্ষ লক্ষ হাদিস থাকা সত্ত্বেও শ্রেষ্ঠ গুণাবলি সম্পন্ন উন্নত জাতি হতে পারলাম না, গলদ কোথায়??
শিক্ষাবিদ,,জ্ঞানী -গুণী ও ধর্মীয় নেতাদের এখনই খুঁজে বের করা উচিত উপরোক্ত গুণাবলি কেন আমরা অর্জনে ব্যর্থ, কি কি পদক্ষেপ নিলে এই গুণাবলি অর্জন করা যায়।
পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই শিক্ষা প্রদানের উপায় খুঁজে বের করা সময়ের দাবী।
একদিনে, মাসে,বছরে হয়তো একেবারে পরিবর্তন হতে পারবনা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে সম্ভব।
বিশেষ করে স্কুল -কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নোংরা রাজনীতি নিষিদ্ধ করে জাপানিদের অর্জিত গুণাবলি শিক্ষা দিতে পারলে এমন একদিন হয়তো আসবে পৃথিবীর অন্যকোন দেশের মানুষেরা প্রশিক্ষণের জন্য প্রিয় বাংলাদেশের বিভিন্ন সেমিনারে অংশগ্রহণের করবে এবং আমার জাতির কৃষ্টি কালচার, উন্নতি, সমৃদ্ধি, শান্তি ও কল্যাণ দেখে অনুপ্রাণিত হবে,শিক্ষা নেবে, আমার দেশের সুনাম করে ফেইসবুকে দু’কলম লিখবে আর গর্বে জাতি হিসেবে আমাদের বুক ভরে যাবে, আমরা মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়ায় মস্তক অবনত করব। যে কোন প্রকারের ভুল ক্ষমা করবেন।
সেমিনারে বক্তব্য প্রদান করেন,
Tatsuhiko Tomii
Managing Director, One Asia Consultant by Japan Productivity Center.
উপরের তিনটি গুণাবলি কিভাবে জাপানি রা অর্জন করলেন এবং তা অর্জনের পদ্ধতি কি???
কি কি পদক্ষেপ নিলে আমাদের দেশে এই গুণাবলি অর্জন করা যায় তা বিস্তারিত আলোচনা করলেন বিভিন্ন দেশে একশত বিশটি ওয়ার্কশপ করা এই গুণী মানুষটি।
পরে বিস্তারিত আলোচনায় বাংলাদেশের আমরা বেশ কয়েকজন অংশগ্রহণ করি। উক্তগুণাবলি অর্জনে আমাদের দেশের সমস্যা চিহ্নিত করে কিভাবে নেতৃত্বের/ ক্ষমতার সর্বোচ্চ পর্যায় হতে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত, বঙ্গভবন- গণভবন হতে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সহজে উক্ত গুণাবলি অর্জন করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং খুব সহযে সিম্পলি এই গুণাবলি যে অর্জন করা যায় তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। -চলবে…