মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :
চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার সপ্তম দফায় সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা আগামী ১৫, ১৬ ও ১৭ নভেম্বর একটানা ৩ দিন অনুষ্ঠিত হবে। কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে এ সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে।
সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার যথাক্রমে ২৫, ২৬ ও ২৭ অক্টোবর পর পর ৩ দিন মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণ ও আসামীদের পক্ষে জেরা শেষে বিজ্ঞ বিচারক সপ্তম দফা সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য এসব দিন ধার্য্য করেন।
এদিকে, মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার ১২ আসামী এবং ৫ জন সাক্ষীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী রেকর্ডকারী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন শামীম এর সাক্ষ্য ও জেরা বুধবার ২৭ অক্টোবর সম্পন্ন করা হয়েছে।সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: দেলোয়ার হোসেন শামীম ও তামান্না ফারাহ কক্সবাজার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসীতে জ্যৈষ্ঠ বিচারিক হাকিম হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। বিজ্ঞ বিচারক তামান্না ফারাহ আদালতে দাখিলকৃত চার্জশীটের ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৭৬ নম্বর এবং মো: দেলোয়ার হোসেন শামীম ৭৭ নম্বর ক্রমিকের সাক্ষী। ষষ্ঠ দফা সাক্ষ্য গ্রহনের তিনদিনে এ মামলায় মোট ২৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা হয়েছে। এনিয়ে এ মামলায় মোট ৫৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলো।
এরমধ্যে, ইতিমধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া সার্জেন্ট আইয়ুব আলীকে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা পূণরায় জেরা করার জন্য আদালতে আবেদন জানালে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল আবেদন মঞ্জুর করেন।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটির আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) এডভোকেট ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোজাফফর আহমদ হেলালী, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জিয়া উদ্দিন আহমদ সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণ করেন। এসময় বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস এর আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এডভোকেট মোহাম্মদ সৈয়দুল ইসলাম, এডভোকেট এসমিকা সুলতানা, এডভোকেট শাহ আলম, এডভোকেট আবুল আলা জাহাঙ্গীর প্রমুখ আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আসামীদের পক্ষে আদালতে এডভোকেট চন্দন দাশ, এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত, এডভোকেট দিলীপ দাশ, এডভোকেট শামশুল আলম, এডভোকেট মমতাজ আহমদ (সাবেক পিপি) এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া, এডভোকেট এম.এ বারী, এডভোকেট নুরুল হুদা, এডভোকেট ওসমান সরওয়ার আলম শাহীন, এডভোকেট মোশাররফ হোসেন শিমুল, এডভোকেট ইফতেখার মাহমুদ প্রমুখ সাক্ষীদের জেরা করেন। সাক্ষ্য গ্রহণকালে মামলার ১৫ জন আসামীকেও কড়া নিরাপত্তায় আদালতে হাজির করা হয়।
গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
পিপি এডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, বুধবার ২৭ অক্টোবর ৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। সময়ের অভাবে বাকী সাক্ষীরা বুধবার আদালতে সাক্ষ্য দিতে পারেননি। বুধবার আদালতে উপস্থাপন করা অন্যান্য সাক্ষীরা হলো-তৎকালীন টেকনাফ থানায় এই মামলা রেকর্ডকারী ওসি এস.দোহা, তৎকালীন ডিবি’র ওসি মানস বড়ুয়া, জব্দ তালিকার সাক্ষী এসআই কামাল হোসেন ও কনস্টেবল মোশাররফ হোসেন।
নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহ এর আদালতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি দায়ের করেন। যার মামলা নম্বর : এসটি-৪৯৩/২০২১ ইংরেজী। যার জিআর মামলা নম্বর : ৭০৩/২০২০ ইংরেজি। যার টেকনাফ মডেল থানা মামলা নম্বর : ৯/২০২০ ইংরেজি। মামলাটি তদন্তভার দেওয়া হয় র্যাব-১৫ কে।
যে ১২ জন আসামী ১৬৪ ধারায় আদালতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছিলেন তারা হলেন : বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী, টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আবদুল্লাহ, পুলিশের মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নিজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
আর যে ৩ জন আসামী আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেননি, তারা হলো : টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও কনস্টেবল সাগর দেব। আদালতে চার্জশীট জমা দেওয়ার পর গত ২৪ জুন কনস্টেবল সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করে।
এদিকে, এর আগে গত ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত এ মামলায় আরো মোট ৫৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা সম্পন্ন করা হয়। আগে আরো যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তারা হলেন-মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী সাহিদুল ইসলাম সিফাত, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আমিন, মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও হাফেজ শহীদুল ইসলাম, আবদুল হামিদ, ফিরোজ মাহমুদ ও মোহাম্মদ শওকত আলী, হাফেজ জহিরুল ইসলাম, ডা. রনধীর দেবনাথ, সেনা সদস্য সার্জেন্ট আইয়ুব আলী, কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. মোঃ শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী, মোক্তার আহমদ, ছেনোয়ারা বেগম, হামজালাল, আলী আকবর, ফরিদুল মোস্তফা খান, বেবী ইসলাম, সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মোঃ মুনতাসীর আরেফিন, সার্জেন্ট মোঃ মোক্তার হোসেন, কর্পোরাল নুর মোহাম্মদ, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার সৈয়দ মঈন, সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার আবু জাফর এবং লেন্স কর্পোরাল মোঃ রুহুল আমিন, আহমদ কবির মনু, ধলা মিয়া, সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট মোঃ জিয়াউর রহমান, সার্জেন্ট আনিসুর রহমান, কনস্টেবল কামরুল হাসান, রামু সেনানিবাসের ১০, এমপি ইউনিটের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ ইমরান হাসান, র্যাব-১৫ এর এএসআই নজরুল ইসলাম, এসআই সোহেল সিকদার, পুলিশের কনস্টেবল শুভ পাল, এসআই মোঃ আমিনুল ইসলাম ও একই থানার কনস্টেবল পলাশ ভট্টাচার্য, জব্দ তালিকার সাক্ষী কনস্টেবল উসালা মার্মা, সেনা সদস্য হীরা মিয়া, র্যাব-১৫ এর নৌবাহিনীর সদস্য আবু সালাম, কাউন্টার ম্যানেজার নবী হোসেন, আবুল কালাম ও শহীদ উদ্দিন, সিনহাকে খুনের আগে-পরে বিভিন্ন জনের মোবাইল ফোন রেকর্ডকারী গ্রামীণ ফোনের প্রতিনিধি মোঃ আহসানুল হক, রবি অপারেটরের প্রতিনিধি সৈকত আহমদ শিপলু, রাসায়নিক পরীক্ষক মিজানুর রহমান ও পিংকু পোদ্দার, কনস্টেবল সাখাওয়াত হোসেন, এসআই বাবুল মিয়া, এসআই রাশেদুল হাসান, এসআই হাশেম, এসআই মোহাম্মদ মুছা, এসআই আবদুল জলিল, এসআই আবদুল্লাহ আল হাসান, এএসআই মোঃ বাবুল মিয়া, এসআই নাজমুল হোসেন এবং এসআই সুমন কান্তি দে।
গত ২৩ আগস্ট সকালে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল এর আদালতে মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের সাক্ষ্য প্রদানের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।
গত ৩১ জুলাই ঈদুল আজহার আগের রাত সাড়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।