মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মতো কক্সবাজারের ৪ টি সংসদীয় আসনের ভোট কেন্দ্র গুলোতে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হবে ভোট গ্রহণের দিন রোববার ৭ জানুয়ারি সকাল ৭ টার মধ্যে। এরপর সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ছাপানো ব্যালটের মাধ্যমে একটানা ৮ ঘন্টা কেন্দ্র গুলোতে ভোট গ্রহণ করা হবে।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সুত্র মতে, দেশে এই প্রথম কোন সাধারণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দিন সকালে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যলায় থেকে ব্যালট পেপার, ভোট গ্রহণের জন্য আনুষাঙ্গিক সবকিছু কেন্দ্র ভিত্তিক আলাদা আলাদা করে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার ৯ টি উপজেলার ইউএনও এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।

কক্সবাজার সদরের ইউএনও সম্রাট খীসা জানিয়েছেন, রোববার ৭ জানুয়ারি ভোরে ভোট কেন্দ্র গুলোতে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাকর্মী, যানবাহন ইত্যাদির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের জন্য মনোনীতদের ইতিমধ্যে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। ব্যালট পেপার ব্যতীত ব্যালট বক্স, ভোটার তালিকা, সীল, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, ফলাফল বিবরণী সহ আনুষাঙ্গিক সবকিছু শনিবার ৬ জানুয়ারি সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হবে।

টেকনাফের সহকারী রিটার্নিং অফিসার জানিয়েছেন, রোববার ৭ জানুয়ারি সর্বোচ্চ সকাল ৭ টার মধ্যে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানোর টার্গেট করেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেন্টামার্টিনে নির্ধারিত সময়ের আগেই ব্যালট পেপার পৌঁছাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রামু’র ইউএনও এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার মোঃ আশরাফুল হাসান জানান, ঈদগড়, কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার ভোট কেন্দ্র গুলোতে রোববার ভোরে ব্যালট পেপার পাঠাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যাতে ভোট গ্রহণ শুরুর কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে ভোট কেন্দ্র গুলোতে ব্যালট পেপার পৌঁছে যায়।

কুতুবদিয়ার ইউএনও এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার রাশেদুল ইসলাম জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মতো রোববার ভোরে ভোট কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছাতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

মহেশখালীর ইউএনও এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার মীকি মারমা জানান, মহেশখালীর সকল ভোট কেন্দ্রে নির্ধারিত সময়ে ব্যালট পেপার পাঠাতে, বিশেষ করে মাতারবাড়ি সহ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ গুলোতে রোববার ভোরে ব্যালট পেপার পাঠাতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আগামী রোববার ৭ জানুয়ারি সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রার্থীদের নামের আদ্যক্ষরের ক্রম অনুযায়ী নাম ও প্রতীক দিয়ে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে।

এদিকে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী ভোট গ্রহণের ৪৮ ঘন্টা আগে অর্থাৎ শুক্রবার ৫ জানুয়ারি সকাল ৮ টায় সব ধরনের প্রচারণা বন্ধ হয়ে যাবে।

কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এর দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলার ৪ টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার ৯৬০ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৮ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪৮০ জন এবং মহিলা ভোটার ৭ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৭৮ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছে জেলার মধ্যে টেকনাফে মাত্র ২ জন। ৪ টি সংসদীয় আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ৫৫৬ টি। ভোট কক্ষ (বুথ) রয়েছে স্থায়ী ৩ হাজার ৫০৭ টি। পুরো জেলায় অস্থায়ী বুথ রয়েছে ১৬ টি। ৪টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছেন মোট ২৬ জন।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে মোট ভোটার ৪ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৫২ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৮৮ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ২৫ হাজার ৭৬৪ জন। এ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১৫৮ টি। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোট ৭জন।

কক্সবাজার-১ আসনে চকরিয়া উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৫২ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৩৭৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৭৮ জন। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ১১৪ টি।

কক্সবাজার-১ আসনে পেকুয়া উপজেলায় মোট ভোটার ১ লক্ষ ৩৩ হাজার জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৭২ হাজার ১১৪ জন এবং মহিলা ভোটার ৬০ হাজার ৮৮৬ জন। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৪৪ টি।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ১২৭ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৮৫ হাজার ২৫৪ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৭৩ জন। এ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১১৮ টি। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোট ৬ জন।

কক্সবাজার-২ আসনে মহেশখালী উপজেলায় মোট ভোটার ২ লক্ষ ৫২ হাজার ৬০৪ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭৫৮ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ১৭ হাজার ৮৪৬ জন। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৮১ টি।

কক্সবাজার-২ আসনের কুতুবদিয়া উপজেলায় মোট ভোটার ৯৫ হাজার ৫২৩ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৫০ হাজার ৪৯৬ জন এবং মহিলা ভোটার ৪৫ হাজার ২৭ জন। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৩৭ টি।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁহ) আসনে মোট ভোটার ৪ লক্ষ ৮৯ হাজার ৬১০ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ৬০ হাজার ৫৯৭ জন এবং মহিলা ভোটার ২ লক্ষ ২৯ হাজার ১৩ জন। এ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১৭৬ টি। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোট ৬ জন।

কক্সবাজার-৩ আসনের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলায় উপজেলায় মোট ভোটার ২ লক্ষ ১৭ হাজার ১২২ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৩২ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৫৯০ জন। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৭৬ টি।

কক্সবাজার-৩ আসনের মধ্যে রামু উপজেলায় মোট ভোটার ১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৭৫১ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৯৭ হাজার ৫৭১ জন এবং মহিলা ভোটার ৮৭ হাজার ১৮০ জন। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৬৪ টি।

কক্সবাজার-৩ আসনের মধ্যে, ঈদগাঁহ উপজেলায় মোট ভোটার ৮৭ হাজার ৭৩৭ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৪৭ হাজার ৪৯৪ জন এবং মহিলা ভোটার ৪০ হাজার ২৪৩ জন। এ উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৩৬ টি।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ২৬ হাজার ৯৭১ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ১ লক্ষ ৬৭ হাজার ১৪১ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮২৮ জন। এ আসনে মোট ভোট কেন্দ্র ১০৪ টি। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোট ৭ জন।

কক্সবাজার-৪ আসনের উখিয়া উপজেলায় মোট ভোটার ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৩১২ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৭৭ হাজার ৪৭ জন এবং মহিলা ভোটার ৭২ হাজার ২৪৫ জন। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৪৭টি।

কক্সবাজার-৪ আসনে টেকনাফ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ৬৫৯ জন। তারমধ্যে, পুরুষ ভোটার ৯০ হাজার ৯৪ জন এবং মহিলা ভোটার ৮৭ হাজার ৫৬৩ জন। হিজড়া ভোটার ২ জন। জেলার টেকনাফ ছাড়া আর কোথাও হিজড়া ভোটার নাই। এই উপজেলায় মোট ভোট কেন্দ্র ৫৭ টি।