জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:
গত ১৮ এবং ১৯ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও হকারদের সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মামুন তুষার এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রুবেল আজ ২২ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে এক বিবৃতিতে বলেন, নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উভয়পক্ষের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু পরিণত হয় ,যা কোন সভ্য সমাজে কাম্য হতে পারে। এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান দ্বারা স্বীকৃত গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে পদদলিত করা হয়েছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্মম দৃষ্টান্ত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক নাসিমুল হুদা স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনটি মামলা হয়েছে৷ তিন মামলার মধ্যে দুটির বাদী পুলিশ৷ এর মধ্যে একটি মামলা করা হয়েছে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে, অন্যটি দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জ্বালাও-পোড়াও ও পুলিশের কাজের বাধা দেওয়ার অভিযোগে৷ অন্যদিকে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়ার চাচা মো. সাঈদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন৷
নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের সময় সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনার বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে৷ কিন্তু আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা-ব্যথা নেই৷ গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না৷ এটি অনুমেয় যে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত সাংবাদিকেরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সমর্থন না পেলে আইনি জটিলতায় নিজেদের জড়াতে চাইবেন না৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি মনে করে, অতীতে সাংবাদিক নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনায় কোনো বিচার বা প্রশাসনিক পদক্ষেপের উদাহরণ না থাকায় সাংবাদিকদের ওপর হামলা প্রতিনিয়তই ঘটে চলেছে৷ নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনার সময় সাংবাদিকদের নির্যাতন-লাঞ্ছনার ঘটনাসহ অতীতে ঘটে যাওয়া এ ধরনের ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সাংবিধানিক অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি৷
গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা প্রয়োজনীয় সব ধরনের সমর্থন নিয়ে নির্যাতিত-লাঞ্ছিত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়াবেন৷ কারণ প্রতিশ্রুতিশীল ও দক্ষ সাংবাদিকেরাই গণমাধ্যমের প্রাণশক্তি৷ তাঁরা ভালো থাকলে গণমাধ্যমও ভালো থাকবে৷
রাষ্ট্র ও সরকারের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনার ঘটনার প্রতিকারে প্রয়োজনে পৃথক আদালত গঠন করা হোক৷ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে গণমাধ্যমের অসামান্য ভূমিকাকে বিবেচনায় নিয়ে সাংবাদিক নির্যাতন ও লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়া হোক৷