ইমাম খাইর, সিবিএন:
শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, সারাদেশে পরিচিত ও খ্যাতিমান একটি প্রতিষ্ঠানের নাম বায়তুশ শরফ। মরহুম পীর শাহ আব্দুল জব্বারের সাথে বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বাগদাদ সফর করেছিলেন। বায়তুশ শরফের সঙ্গে আমাদের আত্মার সম্পর্ক, এটি আমাদের গর্ব।
বুধবার (১৫ জুন) দুপুরে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজে সংবর্ধনায় শিক্ষা উপমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অনুসরণে বায়তুশ শরফ পরিচালিত হচ্ছে, এটা খুশির খবর। শিক্ষার্থীদেরকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যেতে হবে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধামন্ত্রী কক্সবাজারকে একটি আন্তর্জাতিক শহর হিসেবে গড়ে তুলতে অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে চলছে। শিক্ষার প্রসার হলেই তার সুফল আসবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি যেকোন ধরণের যোগ্যতা অর্জন করার উপর শিক্ষার্থীদের তাগিদ দেন প্রধান অতিথি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে পারিবারিক কাজে মা-বাবাকে সহযোগিতা করতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার সাথে শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী হওয়ার উপর ও গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী।
দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নেতৃত্বে শিক্ষায় অনেক দূর এগিয়েছে দেশ। জনগণের টাকায় স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মিত হয় উদ্বোধনের অপেক্ষায়। দেশের সর্বস্তরে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা অনেকে কোরআন পড়ি। খতম দিই। কিন্তু আরবী ভাষা জানিনা, বুঝিনা।
আক্ষেপ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা শুধু তেলাওয়াত করতে জানেন, কিন্তু আরবী ভাষায় কথা বলতে পারা লোকের সংখ্যা খুব কম।
বাংলা, আরবী ও ইংরেজিতে পারদর্শিতা অর্জনের উপর তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মাদরাসা শিক্ষক -শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সরকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে বলেও জানান শিক্ষা উপমন্ত্রী।
শাহ কুতুবউদ্দিন আদর্শ দাখিল মাদরাসার পাঠদান ও এমপিওর বিষয়টি সমাধান হবে বলেও তিনি আশ্বস্ত করেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজ জানা থাকা দরকার। কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে হবে। কিভাবে গবাদিপশু লালন পালন করা হয় সেটিও শিখতে হবে।
কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সংবর্ধনায় মন্ত্রী বলেন, বায়তুশ শরফের চমৎকার অবকাঠামো ও শিক্ষার মান রয়েছে। এখানে সকল সম্প্রদায়ের লোক ছাতার নীচে পড়ছে। এরকম চমৎকার পরিবেশ সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখতে চাই।
বক্তব্যের এক পর্যায়ে মন্ত্রীর কন্ঠে “শিক্ষা দিয়ে গড়ব দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ” শ্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন, কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) সাইমুম সরওয়ার কমল, কউক চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের এমপি কানিজ ফাতেমা আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দে, জেলা যুব লীগের সভাপতি সোহেল আহমেদ বাহাদুর।
আঞ্জুমনে ইত্তেহাদ বাংলাদেশ পরিচালিত বায়তুশ শরফ একটি আধ্যাত্নিক, মানবিক, শিক্ষা-চিকিৎসা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যুগ যুগ ধরে দেশব্যাপী বায়তুশ শরফের এই সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।বায়তুশ শরফের বর্তমান পীর আল্লামা শাইখ মুহাম্মদ আব্দুল হাই নদবী।
কক্সবাজার বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স ১০ টি প্রটিষ্ঠানের সমন্বয়ে পরিচালিত একটি কমপ্লেক্সে। এই কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলাম।
এই কমপ্লেক্সে রয়েছে, বায়তুশ শরফ চক্ষু হাসপাতাল, জাব্বারিয়া একাডেমি, শাহ কুতুব উদ্দিন আদর্শ দাখিল মাদরাসা, মসজিদ, এতিম খানা, হেফজ খানা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
১৯ জুন অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষায় জব্বারিয়া একাডেমি থেকে ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। আর মুসলিম ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের চার সহস্রধিক শিক্ষার্থী এখানে লেখা করছে।
সম্প্রতি কর্তৃপক্ষ জব্বারিয়া একাডেমিকে (উচ্চমাধ্যমিকে) কলেজে উন্নিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
সাংবাদিক শহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মোঃ ছৈয়দ করিম।
কুরআন তিলাওয়াত করেন বায়তুশ শরফ কমপ্লেক্স জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা নাছির উদ্দীন।
সংবর্ধনার আগে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ শাহ কুতুবউদ্দীন আদর্শ দাখিল মাদরাসাসহ কয়েকটি একাডেমিক ভবন উদ্বোধন এবং কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অবকাঠামো ঘুরে দেখেন মন্ত্রী।
চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে পৌঁছলে মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে একাডেমির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে কমপ্লেক্সের মহাপরিচালক শিক্ষাবিদ এম এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, শিরক, বিদআত ও ধর্মীয় গোঁড়ামিমুক্ত একটি প্রতিষ্ঠান বায়তুশ শরফ। এখানে শুধু সাধারণ শিক্ষা নয়, ধর্মীয়, কারিগরী ও প্রযুক্তির সব ধরণের পড়ালেখা করানো হয়। আদর্শবান নাগরিক গড়ে তুলতে বায়তুশ শরফের ভূমিকা অপরিসীম।
তিনি বলেন, বায়তুশ শরফ ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধারণ করে ধর্মীয় প্রেরণায় উজ্জীবিত প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠানকে আরো এগিয়ে নিতে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মহাপরিচালক এম এম সিরাজুল ইসলাম। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে উত্তরণ মডেল কলেজ উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।