আবদুল হামিদ:
জন্ম মধ্য ভারুয়াখালীর ছোট্ট একটি গ্রামে। ১৯৮২ সালে ছলেমা খাতুনের কোল জুড়ে এ বসুধার একটি নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিবারে জানান দেন শারীরিক অস্তিত্বের। নিয়ে আসেন সমাজ পরিবর্তনের আলাদীনের ‘সুপ্ত হারিকেন’। জীবন সূচনায় বঞ্চিত হন পিতার অনিঃশেষ স্নেহ ও ভালবাসা পাওয়া হতে। এ ধরায় আগমনের মাত্র ছয়মাসের আয়ুতে তাঁর মাথায় বৃক্ষ ছায়াদানকারী বটবৃক্ষের অন্তর্ধান ঘটে। এ বটবৃক্ষ তাঁর বাবা আবদুস সালাম। বাবার স্নেহ বঞ্চিত ভারুয়াখালীর এ জ্যোতি সন্তান দারিদ্র্যকে আশির্বাদ হিসেবে নিয়ে বড় হতে থাকেন। একটি বনলতার মত পারিপার্শ্বিক সমস্ত বাঁধাকে টপকে বেড়ে উঠতে থাকেন মানব সমাজে। দূর করতে থাকেন অজ্ঞতা ও আঁধারকে, ছড়াতে থাকেন আলোর বিচ্ছুরণ!! দারিদ্র্যের সমরেখায় কবি নজরুলকে যেমনটা বলতে শুনি “হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান”।

মিজানুর রহমান ভারুয়াখালীর এক লৌহ মানবের নাম। একজন লৌহ কর্মকারের ন্যায় জীবনকে তপ্ত করে দিয়েছেন প্রকৃত মানবরূপ। জনাব রহমান অদম্য মানসিক শক্তির একজন পুরুষ। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে অবজ্ঞা করে ছুটে চলছেন লক্ষ্য পানে। এ লক্ষ্য পরকালীন শান্তি ও পার্থিব মানব কল্যাণ।

ভারুয়াখালীর আলোকিত এ সন্তান কাজ করছেন শিক্ষার দ্যাুতি ছড়াতে। শিক্ষায় তাঁর অনুরাগ আকাশসম। শিক্ষকতা দিয়ে শুরু করেছেন কর্মজীবন, হয়েছেন শিক্ষা অনুরাগী উদ্যোক্তা। তাঁর হাড়ভাঙা খাটুনি দিয়ে গড়ে তুলেছেন সদরের বাংলা বাজারে ‘আইডিয়াল ইনস্টিটিউট স্কুল এন্ড কলেজ’ নামে একটি আবাসিক -অনাবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিনি কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হিসেবে। তাঁর কর্মদক্ষতার নৈপুণ্যে প্রতিষ্ঠানটি জেলা পর্যায়ে সুপরিচিতি লাভ করে। ২০২৩ এসএসসি ব্যাচে প্রতিষ্ঠানটি হতে ৩ জন ছাত্র দেশ সেরা নটরডেম কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করে পড়ার সুযোগ পায়।

হার না মানা এ পুরুষ একজন সফল উদ্যোক্তা। জেলায় তিনি গড়ে তুলেছেন আইডিয়াল গ্রুপ_আইডিয়াল ট্রাস্ট এবং আইডিয়াল ফাউন্ডেশন। আইডিয়াল গ্রুপের স্পনসরে তিনি সদর উপজেলার ভারুয়াখালী, পানির ছড়া এবং খুরুস্কুলে গড়ে তুলেন শিক্ষা নিকেতন। উদ্দেশ্য মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা সম্পন্ন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহায়তা ও শিক্ষা অনুপ্রেরণা যোগাতে তিনি চালু করেন ‘আইডিয়াল ট্রাস্ট পিইসি মেধা বৃত্তি ‘ যেটি কক্সবাজার জেলার সর্ববৃহৎ বেসরকারি বৃত্তি। এছাড়া মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর করার জন্য বাংলা বাজারে তিনি গড়ে তুলেন ‘আইডিয়াল বালিকা বিদ্যালয়’।

ভারুয়াখালীর মেধাবী এ মানুষ একজন দক্ষ সংগঠক। ছাত্রাবস্থা হতে তিনি ছাত্র রাজনীতি করেছেন। কাজ করেছেন মানুষকে পরকালীন মুক্তির কথা স্মরণ করে দিতে। ভারুয়াখালীতে তুমুল আলোচনা সৃষ্টিকারী ‘ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ তাঁরই সুযোগ্য নেতৃত্বে গড়ে তোলা। প্রতিষ্ঠানটি কৃতি শিক্ষার্থী ও গুণিজন সংবর্ধনার একটি পথের দিশারি ছিল।

তরুণ প্রজন্মকে আলোর পথের দিশা দিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘গোল্ডেন জেনারেশন অব বাংলাদেশ’। প্রতিষ্ঠানটি দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা, সূরা ফাতিহা মিশনের মাধ্যমে অর্থসহ কুরআন প্রতিযোগিতা, পবিত্র রমজান মাসে ইফতার সামগ্রী বিতরণ, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিসহ বিবিধ মানবিক কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে।

ভারুয়াখালী লেখক পাড়ায় Mizanur Rahaman এর রয়েছে খ্যাতির দীপ্তি। ২০২০ সালে “সোনালি প্রজন্ম” নামে তিনি একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। কাজ করেছেন স্থানীয় “দৈনিক বাঁকখালী” পত্রিকার নির্বাহী ও শিক্ষা সম্পাদক হিসেবে। কাজ করেছেন ঢাকা হতে প্রকাশিত মাসিক “দর্পণ” পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে।

শিক্ষার আলোর বর্তিকা বহনকারী এ মানুষটির দেশ ভ্রমণের রয়েছে অভিজ্ঞতা। ২০১৯ সালে জাপান সরকারের AOTS নামক সংস্থার আমন্ত্রণে জাপানে শিক্ষা সফর করে বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। জাপানে অবস্থানকালীন সে দেশের একটি নামকরা পত্রিকা তাঁর জীবন, কর্ম ও সাফল্য নিয়ে একটি সাক্ষাৎকার নেন যা ভারুয়াখালীসহ জেলা বাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের।

শিক্ষার ফেরিওয়ালা অদম্য স্পৃহার আমার জন্মভূমির এ নায়ক স্বপ্ন দেখেন মানুষকে অজ্ঞতা হতে মুক্তির। স্বপ্ন দেখেন তরুণ প্রজন্মকে আলোয় উদ্ভাসিত করতে। শিক্ষার দ্যাুতি ছড়াতে কাজ করতে চান জেলা উপজেলা পর্যায়ে। এলাকার মানুষের হয়ে কথা বলতে চান জাতীয় পর্যায়ে। তিনি স্বপ্ন বুনেন : “যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, বিশ্বাস হৃদয়ে হবেই হবেই দেখা, দেখা হবে বিজয়ে।”

লেখক : আবদুল হামিদ
ব্যাংকার ও প্রাবন্ধিক
২৪ আগস্ট,২০২৩
কক্সবাজার