আবুল কালাম, চট্টগ্রাম :
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ১৫ তম কারাবন্দি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রী ডা,হাছান মাহমুদ চৌধুরী এমপি।
শনিবার (১৬ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হাছান মাহমুদ বলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা সেনা সমর্থিত ১/১১ সরকারের সকল অন্যায়, অবিচার এবং দুর্নীতির প্রতিবন্ধক ছিলেন বলেই তাঁকে বিনা ওয়ারেন্টে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তাঁকে গ্রেফতারের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরানো হয়।
তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর দলের অনেক বড় নেতা বেসুরে কথা বললেও বাংলাদেশের তৃণমূল স্তরের দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে ছিলেন বলেই তীব্র আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে ১১ মাস পর ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনাকে ১/১১ সরকার মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, বলা চলে সেদিনই গণতন্ত্র মুক্তি পায়।
ড. হাছান মাহমুদ ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেন, জাতি মনে করে বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্নিবীণা।
শেখ হাসিনার হারাবার ও পাওয়ার আর কিছুই নেই। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের উপায় নেই।তাই তাঁকে আমরা কিছুতেই বঙ্গবন্ধুর মতো হারাতে চাই না। কারণ জাতির ভাগ্য পরিবর্তন ও উন্নয়নের শিখা অনির্বাণ রাখতে শেখ হাসিনাকে বারবার দরকার।
এজন্যেই দলীয় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের সুদৃঢ় ঐক্য ও সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে ২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি যাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন তার বিজয় নিশ্চিত করে আবার জাতির হাল ধরার নেতৃত্ব শেখ হাসিনাকেই দিতে হবে ২০০১ সাল থেকে এবং ১/১১ সরকারের আগ পর্যন্ত বিএনপি যে সকল অপকর্ম, দুর্নীতি ও দুঃশাসন চালিয়েছে এবং হাওয়া ভবনে সমান্তরাল সরকার প্রতিষ্ঠা করে যে লুণ্ঠন করেছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে সেই পথ হয়তোবা এবার রুদ্ধ হবে’।
মন্ত্রী বলেন, অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় প্রতিবাদকারী বঙ্গবন্ধুর তনয়া শেখ হাসিনাকেই ১/১১ সরকার বানোয়াট-মিথ্যা এবং হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বেগম খালেদা জিয়ার আগেই তাঁকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে। শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের আগের দিন তিনি হাসপাতালে অসুস্থ বরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখতে গিয়েছিলেন, সাথে আমিও ছিলাম। সে সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখতে পান, বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান টুকুর অপরাধে তার অসুস্থ কন্যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবেই সেই সময় স্বামীর অপরাধে স্ত্রীকে এবং পিতার অপরাধে কন্যাকে গ্রেফতার করা হচ্ছিল। শেখ হাসিনা এসবের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু বিএনপি বা অন্যরা এমনকি কথিত সুশীল সমাজও কোনো প্রতিবাদ করেননি। আজ বুঝতে কষ্ট হয় না সেদিন কেনো, কোন উদ্দেশ্যে ১/১১ সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করেছে। কারণ শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা না হলে ১/১১ সরকারের অসৎ উদ্দেশ্যের নীলনকশা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
তিনি এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনা যখন সাব-জেলে ছিলেন তখন তিনি যখনই আদালতে আসতেন তখন তাঁকে কখনো মনমরা বা হতাশ দেখিনি। তিনি সবসময় চাঙ্গা ছিলেন এবং দলকে চাঙ্গা রাখার জন্য আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আরো স্পষ্ট বলতে চাই, তিনি বন্দি অবস্থায় দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে সংগঠিত করার লক্ষে অভাবনীয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এবং তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে জিল্লুর রহমান সেদিন এক কঠিন দুঃসময়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছিলেন এবং শেখ হাসিনার মুক্তির আন্দোলনকে বেগবান করেছিলেন বলেই ১১ মাস পর শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে ১/১১ সরকার বাধ্য হয়।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে আজকে যে উন্নয়নের জোয়ার দৃশ্যমান শেখ হাসিনা কারাজীবনে সেই উন্নয়নের স্বপ্ন বুনন করেছিলেন। যখনই তাঁর সাথে আমাদের দেখা হয়েছে তখনই তিনি এসব নিয়ে কথা বলতেন। আজ দেখতে পাচ্ছি দেশের বহু উন্নয়নের পাশাপাশি সবচেয়ে বড় উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্বপ্নের পদ্মাসেতু নির্মাণ। অথচ এই পদ্মাসেতুর নির্মাণ যখন শুরু হয় তখন গুজব ছড়িয়ে ছেলেধরা কাহিনী শুরু করানো হয়। করোনা নিরোধক টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হলে গুজব ছড়ানো ও মিথ্যাচার করা হয়েছিল। যারা এসব করেছে তারা অবশ্য চুপি চুপি টিকা নিয়েছে।
‘পদ্মাসেতুর উদ্বোধন নিয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সমগ্র বাংলাদেশ উল্লসিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড, জাপান এমনকি পাকিস্তানসহ সারাবিশ্ব নেতৃবৃন্দ অভিনন্দন জানিয়েছে। যে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর জন্য ঋণ দিতে অস্বীকার করেছিল সেই বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি যিনি মহিলা তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাঙালি সংস্কৃতির ভূষণ শাড়ি পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে সখ্যতার প্রমাণ করেছিলেন। অথচ বিএনপি নামক দলটি এতে বেজায় বিমুখ। তাদের নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, হাজারটা পদ্মাসেতু নির্মাণ হলেও কোনো লাভ নেই, কি জঘন্য এ মনোবৃত্তি। এই ঘৃণ্য মনোবৃত্তির পাল্টা জবাব বাঙালিকে অবশ্যই দিতে হবে। তাদের এ কথার শুধু প্রতিবাদ নয় তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী নির্বাচন আমাদের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা। দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের ধ্বস কেউ ঠেকাতে পারবে না’ বলেন মন্ত্রী।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।