তারেকুর রহমান:
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাসের শুরুর দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলা সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়ে। সেই জেরে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কয়েকদিন ধরে টেকনাফ সীমান্তের মিয়ানমারের ভেতরে থেকে বারবার গোলাবর্ষণ শুরু হয়। এ কারণে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ট্রলার ও নৌকা দিয়ে এই দ্বীপটিতে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ১০ হাজারের বেশি মানুষ এখন খাদ্যের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের আশা, শিগগিরই জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় খাদ্যবাহী ট্রলার এসে পৌঁছাবে সেন্টমার্টিনে।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে সেন্টমার্টিনে পণ্যবাহী জাহাজ যাচ্ছে না। এ কারণে কাঁচা বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দেয় দ্বীপটিতে। খাদ্যদ্রব্য যা মজুত ছিল তাও শেষের পথে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু আসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম দ্বিগুণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা শামশুল আলম বলেন, ‘জাহাজ চলাচল বন্ধের পর থেকে এই দ্বীপটিতে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে। কাঁচা বাজার যেমন- আলু ও তরকারি সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে। কিছু পরিবারে খেতের সবজি দিয়ে চলছে। তেল, পেয়াঁজ ও রসুন অনেক দামে বিক্রি হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরিবারে ১১ জন সদস্য। চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত পণ্য না পৌঁছালে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ হতে পারে।’
পর্যটন ব্যবসায়ী ও সেন্টমার্টিন মারমেইড রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী মো. তৈয়ব উল্লাহ বলেন, ‘পণ্য সংকট হওয়ায় দ্বীপের মানুষ কষ্ট আছে। যারা পর্যটন ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসাও বন্ধ। পর্যটক না আসলে সেন্টমার্টিনের অবস্থা খুবই খারাপ যায়। জাহাজ বন্ধের পর থেকে দ্বীপবাসী হতাশাগ্রস্ত। মজুত খাবার শেষ হওয়ার পথে। তাই আমরা সবাই চাই, প্রশাসনের সহযোগিতায় যেন দ্বীপে পণ্যবাহী জাহাজ পাঠানো হয়।’
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের মধ্যে নৌযানে কয়েক দফা গুলি ছোড়া হয়েছে। এ অবস্থায় সেন্টমার্টিন রুটে চলাচল করা নৌযান টেকনাফ যেতে পারছে না। ফলে এই রুটে যাত্রী ও পণ্যবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচল ৬দিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা নানা সংকটে পড়েছে। কেউ জরুরি প্রয়োজনে দ্বীপের বাইরে যেতে পারছেন না।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মিয়ানমারের রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধ চলছে। এ যুদ্ধের আঁচ লাগছে এপারের বাংলাদেশের সীমান্তের গ্রামগুলোতে। এখন বাংলাদেশি ট্রলারগুলোকে সীমান্তের ওপর থেকে কারা গুলি করছে তাও নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথে নাফ নদীর মোহনার নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা দিয়ে পার হওয়ার সময় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ট্রলার লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে বার বার। গোলাগুলির কারণে এক সপ্তাহ আগে যারা বাইরে গেছেন তাদের অনেকেই দ্বীপে ঢুকতে পারছেন না।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ৫ জুন সেন্টমার্টিনে উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে কর্মকর্তারা ট্রলারে করে টেকনাফ ফিরছিলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রিজাইডিং অফিসার, পুলিং অফিসারসহ পুলিশের একটি দল। তখন মিয়ানমারের ভেতর থেকে ট্রলারটিকে লক্ষ্য করে ২৫ থেকে ৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়।’
সেন্টমার্টিন স্পিড বোট মালিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, ‘যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রলারে প্রকাশ্যে গুলির ঘটনায় ভয়ে মানুষ এ রুটে যাতায়াতের সাহস পাচ্ছেন না। সেন্টমার্টিনে আসার আর কোনো বিকল্প রুটও নেই।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) নিরাপত্তা জোরদার করে টেকনাফ ঘাটে থাকা ট্রলারগুলোতে করে সেন্টমার্টিনে পণ্য পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এরপর থেকে নির্দিষ্ট সময়ে কক্সবাজার ঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজে করে দ্বীপটিতে পণ্য নেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। সেন্টমার্টিনবাসীর খাবার নিশ্চিত করা হবে।’
বিজিবির টেকনাফ ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ট্রলারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির কাছে প্রতিবাদ লিপি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।’
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।