বেকার যুবক ও অলস মুরব্বীদের বয়ান
এম.আর মাহমুদ:
চা এর দোকানে বসে অলস সময় কাটাচ্ছিল বেশ ক’জন বেকার যুবক। তাদের সাথে যোগ দিলেন আরও ক’জন অলস মুরব্বী। সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচন নিয়ে তারা বেশ রং তামাশা করছিল। এমন সময় এক মুরব্বী বলতে শুরু করলেন সামরিক জান্তা আইয়ুবের মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচন দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তখন এক যুবক ওই মুরব্বীর কাছে জানতে চাইলেন, সে সময়ের নির্বাচন আর বর্তমান সময়ের নির্বাচনের মধ্যে পার্থক্য কি? প্রবীণ ব্যক্তিটি বললেন আইয়ুবের মৌলিক গণতন্ত্রের যুগে সাধারণ মানুষের ভোটে মেম্বার নির্বাচিত হতেন। আর মেম্বারদের ভোটে নির্বাচিত হতেন চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য। তখন কিন্তু সমাজে আলোচিত ব্যক্তিরাই মেম্বার চেয়ারম্যান হতেন। তবে বর্তমান সময়ে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ থাকলেও কোন কোন ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তিরা নানা প্রতিকূলতার কারণে নির্বাচিত হতে পারছে না। অতীতের নির্বাচনে প্রার্থীরা এত বেশি অর্থ ভোটের জন্য ব্যয় করতেন না। তখন এক যুবক বলে বসলেন এখন টাকা না থাকলে নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। কারণ টাকা ছাড়া কেউ ভোট দিতে যায় না। টাকা থাকলে অযোগ্য প্রার্থীও রাতারাতি যোগ্য হয়ে যায়।
এরই ফাঁকে এক যুবক জানতে চাইলেন তখনকার ভোট বর্তমান ভোটের মত ছিল কিনা? প্রবীণ ব্যক্তি বললেন ভোট ভোটের মতই ছিল। তবে তখনও টুকটাক জাল ভোট প্রথা চালু ছিল। বর্তমান সময়ের মত কেন্দ্র দখল করে ব্যালটে সীল মেরে মেম্বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে দেখা যেত না। এখনকার নির্বাচনে তা দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে। সে সময় ফলাফল পাল্টানো হতো না। এখন কিন্তু হচ্ছে। হালে নির্বাচন কমিশন ইভিএম নামক একটি যন্ত্র আমদানি করেছেন। যেখানে চাপ দিলেই নাকি ভোট হয়ে যায়। যান্ত্রিক যুগে এ ধরণের ভোট খুবই স্বাভাবিক। এক সময় কৃষকেরা চাষ করতেন গরু দিয়ে। এখন চাষ করছে কলের লাঙ্গল দিয়ে। যুগের পরিবর্তনের সাথে অনেক কিছুর পরিবর্তন হচ্ছে।
স্বল্পভাষী অলস মুরব্বীদের একজন এসব শুনে শুধু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন যারা টাকার বিনিময়ে নির্বাচিত হয়েছে তারা কি সে টাকা ৩ গুণ আদায় করবে না? এ সময় একেবারে নিরব থাকা মদন আলী বললেন কিছু কিছু প্রার্থী অবৈধভাবে আয়ের টাকা ব্যয় করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জাতে উঠছে। তাদের আর,এস, বি,এস এ চৌধুরী পদবী না থাকলেও সৃজিত খতিয়ানে চৌধুরী হয়ে যাচ্ছে রাতারাতি। আগের যুগে চেয়ারম্যানদের বাহন ছিল জমিদার শ্রেণির হলে ঘোড়া, মধ্যবিত্ত হলে রিক্সা। এখন কি সে যুগ আছে? চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথেই উন্নত মানের গাড়ীর মালিক। ওইসব চেয়ারম্যান নতুন মডেলের গাড়ী ছাড়া চলাচল করে না। হাতে গোনা কয়েকজন চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত বাহন ছাড়া চলাচল করতেও দেখা যায়। আগের যুগে চৌকিদারদের পায়ে স্যান্ডেল থাকত না। ছাতা ও লাঠি ছিল সম্বল। বেশিরভাগ চৌকিদার চেয়ারম্যানের মাথার উপর ছাতা ধরে ছায়ার তলে রাখতেন। এখন কি সে যুগ আছে? যুগের পরিবর্তনের সাথে সরকার থানার সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য চৌকিদারদের বাইসাইকেল দিচ্ছে। কিন্তু চৌকিদারেরা হাকাচ্ছে মোটর সাইকেল। এসব কথা শুনে অপর প্রবীণ ব্যক্তিটি তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলে বসলেন ৫০ বছর আগে বছর আগে বিয়ে করতে গিয়ে আমাকে শ্বাশুর বাড়ী থেকে দেয়া হয়েছিল একটি লুঙ্গি ও পাঞ্জাবীর কাপড়। এখন বেকার ছেলে বিয়ে করলেও শ্বাশুর বাড়ীর দেয়া মালামালের তালিকা না দেখলে বর্ণনা করা সম্ভব হয় না। যুগের পরিবর্তন অবশ্যই হয়েছে। তাই সবকিছুতেই পরিবর্তন আসছে। ক্লান্ত প্রবীণ নজর আলী সহজ সরল ভাবে বললেন, এসব বলে কোন লাভ নাই। আমার দাদাও চা খেয়েছে, আমার বাবাও খেয়েছে, আমিও খাচ্ছি। চা এর কোন পরিবর্তন হয়নি। আগেও মানুষ চা খাওয়ার আগে চা এর কাপে ফুঁঁ দিতেন শুধু গরুর দুধের সর সরানোর জন্য। আর এখন ফুঁ দেয় কৃত্রিম দুধের ফেনা ও উত্তাপ কমানোর জন্য। তাই বলতে হয় চা ঠিক আছে! মান ঠিক নেই। পরে বেকার যুবক ও অলস মুরব্বীদের সরস আলোচনা শুনে সিদ্ধান্ত ছাড়াই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন বেকার যুবক ও অলস যুবকেরা।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।