ছবি : বাঁকখালী রাবার ড্যামের পাশে বিকল্প বাঁধ নির্মাণ
মাহাবুবুর রহমান:
ব্যুরো মৌসুম শেষ হতে চললেও এখনো পর্যন্ত বাকঁখালী নদির উপর বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এতে ৪ ইউনিয়নের অন্তত ৫ হাজার কৃষকের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে চরমক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তাদের দাবী ৫ হাজার কৃষকের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা। মূলত চরম দায়িত্বহীনতা,অনিয়ম দূর্নীতি আর সরকারি টাকা লুটপাট করার জন্য যথাসময়ে বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ এলাকারবাসীর পক্ষে পিএমখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল্লাহ স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চিঠি প্রেরণ করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহ দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবী জানান।
পিএমখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল্লাহ জানান,শহরের পিএমখালী এবং ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়া এলাকার বাঁকখালী নদীতে কক্সবাজার জেলায় স্থাপিত হওয়া প্রথম রাবার ড্যাম অকেজো হওয়াতে কৃষকদের মাঝে পানি সরবরাহের লক্ষ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন বাঁধ চলতি ব্যুরো মৌসুমের আগে শেষ করার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি কক্সবাজার স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা। যথা সময়ে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়াতে চরম হতাশ পিএমখালী,ঝিলংজা,রামুর চাকমারকুল,মিঠাছড়ি, ইউনিয়নের অন্তত ৫ হাজার কৃষক। মূলত অদক্ষ ঠিকাদার দিয়ে কাজ করা,কিছু রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের চেস্টা,শুধু মাটির বস্তা ফেলে বাঁধ নির্মাণ করার কারনে বাঁধ টিকছে না। এতে কৃষকদের অন্তত ৩ হাজার হেষ্টর জমি অনাবাদি থাকা ছাড়াও অনেকে পানির আশায় জমিতে ধান ফেলেছে তাদের পথে বসতে হবে। তাই আমরা জনগনের পক্ষ থেকে ২৬ জানুয়ারী স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছি। একই সাথে দূর্নীতি দমন কমিশন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, কক্সবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য,জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অনুলিপি দিয়েছি।
পিএমখালী ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ও সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহামদ বলেন,গত বছরও অসময়ে বাঁধ নির্মাণ করেছিল কর্তৃপক্ষ কিন্ত তা কৃষককের কোন কাজে আসেনি অথচ বিপুল টাকা আত্মসাৎ করেছিল। চলতি বছরে আমরা মৌসুমের শুরুতে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য বারবার তাগাদা দেওয়ার পরেও কোন কাজ হয়নি। অথচ ইতি মধ্যে বরাদ্ধের বেশির ভাগ টাকা খরচ করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। তাহলে সেই টাকা গেল কোথায় ? জনগনের টেক্সের টাকার কি কোন হিসাবে নেই ?
পিএমখালী ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়াপাড়ার কৃষক সিরাজুল্লাহ বলেন, গত বছরও সরকারের পক্ষ থেকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল কিন্তু যখন আমাদের পানি প্রয়োজন তখন পানি পায়নি। ফলে অনেক জমি চাষাবাদ ছাড়াই ছিল। চলতি বছরও একই অবস্থা মূলত ঠিকাদার ফারুকের চরম অবহেলার কারনে এলাকার কয়েক হাজার কৃষক না খেয়ে থাকতেহবে। তিনি জানান বিষয়টি নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বারবার ফোন করেলে সর্বশেষ তিনি বলেছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা তার কথা শুনছে না। তিনি অসহায়।
রামু চাকমারকুল ইউনিয়নের কৃষক আবু বক্কর ছিদ্দিক বলেন, চলতি বছর পানি পাওয়ার আশায় আমি ৬ কানি জমিতে মরিচ,ফুলকপি,টমেটো চাষ করেছিলাম কিন্তু পানির অভাবে কোন ফসল ঠিকমত হয়নি। আমার কমপক্ষে ২ লাখ টাকা লোকসান থাকতে।
এদিকে বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি সহ স্থানীয় সচেতন মহলের দাবী,মূলত ঠিকাদার ফারুককে সাইনবোর্ড দিয়ে আসল ঠিকাদারি করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তারা। ঠিকাদার ফারুক নিজে আমাদের বলেছে আমি লেবার মাত্র,প্রতিদিন সন্ধ্যা হলে এলজিইডির কর্মকর্তারা আমাকে লেবারের টাকা দেয় আমি সেগুলো বিলি করি। এখানে তারা যা বলছে আমি তাই করছি।
এ ব্যপারে ঠিকাদার ফারুক বলেন, বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ এ পর্যন্ত ৩ বার মুখ বাধা হয়েছিল কিন্তু একবার জোয়ারের পানি আরেকবার বৃষ্টির পানিতে বাঁধ খুলে গেছে। আশা করি কয়েক দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। আর বাজেট বরাদ্ধ ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা সেটা সবাই জানে।
এ ব্যপারে সদর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন বলেন, এগুলো পানির কাজ তাই কখন কি হয় কেউ জানেনা। তবে কয়েকদিন আগে শেষ হয়েছিল সেখানে কিছুটা সমস্যা হওয়াতে এখন আবার করতে হচ্ছে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।