বিশেষ প্রতিবেদক:
বহুদিন ধরে জমি দখলবাজি করে আসছে ইনানীর পাটুয়ারটেকের একটি গোষ্ঠিভিত্তিক সিন্ডিকেট। স্থানীয় আবু তাহের, আবুল মনজুর, মোঃ শাহজাহান, আমান উল্লাহ ও শফিরবিলের মৃত আবু সুলতানের পুত্র মোজাফ্ফর আহমদের নেতৃত্বাধীন এই দখলবাজ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে আছে স্থানীয় জমির মালিকেরা।
দীর্ঘদিন গোষ্ঠিভিত্তিক পেশিশক্তি আর ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে ওই এলাকায় একচ্ছত্র প্রভাব কায়েম করেছে সিন্ডিকেটটি। জমি দখল তাদের কাছে ছিলো অনেকটা স্বাভাবিক ঘটনা। এসব ভূমি সন্ত্রাসীপনার কারণে থানা, আদালতসহ বিভিন্ন দপ্তরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা, অভিযোগ, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হলেও রহস্যজনক কারণে ছিলো অধরা- এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি আবু তাহের, আবুল মনজুর, মোঃ শাহজাহান ও আমান উল্লাহর নেতৃত্বে ৩০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে পাটুয়ারটেকের কোরাল রেস্টুরেন্টে হামলা করা হয়। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত ১৯জন কারাগারে গেছে। এই ঘটনার পর সামনে চলে আসে এই সিন্ডিকেটের আরো কয়েকটি জমি দখলবাজির ঘটনা।
তার মধ্যে সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হলেন চট্টগ্রামের বাসিন্দা ফরহাদ উদ্দিন আহম্মদ। অনেক আশা করে তিনি রেস্টুরেন্ট করার জন্য কিনেছিলেন ৪৪ শতক মূল্যবান জমি। কিন্তু এই মানুষটিকে পথে নামিয়ে দিয়েছেন আবু তাহের, আবুল মনজুর, মোঃ শাহজাহান ও আমান উল্লাহর নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট। অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফরহাদ উদ্দিন আহম্মদের ক্রয়কৃত এবং দখলীয় কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ২৫ শতক জমি জবর দখল করেছেন আবু তাহের। দখল করে সেখানে তৈরি করেছেন রেস্টুরেন্ট। আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষ্কন্টক জমি এভাবে জবর দখল করলেও কোথাও কোনো প্রতিকার পায়নি ফরহাদ উদ্দিন আহমম্মদ। বছরের পর বছর শুধু হয়রানিই হয়েছেন। অন্যদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে বীরদর্পে ঘুরেছেন দখলকারীরা।
ফরহাদ উদ্দিন আহম্মদ জানিয়েছেন, ২০১০ সালে স্থানীয় ফরিদুল আলমের থেকে ৪৪ শতক জমি ক্রয় করেছিলেন তিনি। দখল বুঝে নিয়ে চারদিকে সীমানা দেয়ালও নির্মাণ করেন। কিন্তু কেনার পরই ওই জমিতে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আবু তাহের, আবুল মনজুর, মোঃ শাহজাহান ও আমান উল্লাহর নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেটের। এক পর্যায়ে রাতের আঁধারে ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে ফরহাদ উদ্দিন আহমেদের ভোগ দখলীয় প্রায় ২৫ শতক জমি জবর দখল করে নেয় এই সিন্ডিকেটটি।
ভুক্তভোগী ফরহাদ উদ্দিন আহম্মদ অভিযোগ করেছেন, ক্রয়ের আগে কোনো অভিযোগ বা আপত্তি করেনি আবু তাহের ও মনজুর আলম সিন্ডিকেট। ক্রয়ের বহুদিন পর তারা নানা ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে। এরই প্রেক্ষিতে তারা আদালতেও একটি মামলাও করে। কিন্তু তাদের মামলার প্রেক্ষিতেই আদালত তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে ১৯ সেপ্টেম্বর ১৪৪ ধারা জারি করেন। এই নিষেধাজ্ঞা জারির পর সিন্ডিকেটটি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। এক পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা অবস্থায় প্রায় চার মাস আগে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে রাতের আঁধারে জমিটি জবর দখল করেছেন এবং রাতারাতি গড়ে তুলেছেন রেস্টুরেন্ট।
জমি দখলের পরও ক্ষান্ত ছিলো না আবু তাহের ও তার গোষ্ঠি সিন্ডিকেটের লোকজন। এই নিয়ে মামলা-মোকাদ্দমা করায় বিভিন্ন সময় নানাভাবে ভুক্তভোগী ফরহাদ উদ্দিন আহম্মদকে হুমকি দিতো তারা। হুমকির কারণে জমিতে যেতেও ভয় পান তিনি।
শুধু তাই নয়; আরো নানাভাবে ভুক্তভোগী ফরহাদ উদ্দিনকে হয়রানি করছে এই সিন্ডিকেটটি। এর একটি হলো- বৈদ্যুতিক লাইন নিয়ে নানা তালবাহনা। জবর-দখল পাকাপোক্ত করতে দখল করা জমির সীমানায় খুঁটি স্থাপনে বাধ্য করেছেন। বিদ্যুৎ বিভাগও তাদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। তাই নিয়ম ভেঙে ওই স্থানে খুঁটি স্থাপনে বাধ্য হয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ। এমনটি জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন।
অন্যদিকে পার্শ্ববর্তী কোরাল স্টেশন কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছেন, তারাও নিষ্কণ্টক জমি কিনে বহু আগেই সীমানা দেয়াল দিয়ে ভোগ দখলে রয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি তাদের জমির উপর লোলুপ দৃষ্টি দেয় এই সিন্ডিকেটটি। এরই অংশ হিসেবে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দেয়ায় গত ৯ ফেব্রুয়ারি ৩০/৪০ সশস্ত্র ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে কোরাল স্টেশনের হামলা চালায়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জেলে যেতো হলো সিন্টিকেটের মূলহোতা আবু তাহেরসহ ১৯জন সদস্যকে। ইতিমধ্যে স্থানীয় হালেছা খাতুন নামের এক অসহায় বিধবার ভিটা দখল করেছে আবু তাহের।
এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে নিজের মূল্যবান জমি ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি ভুক্তভোগী ফরহাদ উদ্দিন আহম্মদের।
কারাগারে থাকায় অভিযোগের ব্যাপারে আবু তাহেরের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।